উল্লাপাড়া থানার ওসির বিরুদ্ধে মামলা

সময় ট্রিবিউন | ২৮ মে ২০২১, ০৫:৪১

উল্লাপাড়া থানার ওসি দীপক কুমার দাস

পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক কুমার দাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী বৃদ্ধ সাইফুদ্দিন প্রামানিক (৭০)।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট উল্লাপাড়া থানা আমলী আদালতে মামলা করেন বৃদ্ধ সাইফুদ্দিন প্রামানিক (৭০)।

মামলার বিবরণে জানা যায়, বিগত ১০ মাস পূর্বে উল্লাপাড়া উপজেলার বেতবাড়ী গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিবাদীকে থানায় আসতে বলেন ওসি দীপক কুমার দাস। কিন্তু ওইরাতে বিবাদী পক্ষ থানায় না আসার কারণে ক্ষিপ্ত হন ওসি। এরই জের ধরে বিবাদীদের প্রতি রাতে পুলিশি অভিযানের নামে পুরো গ্রাম তছনছ করাসহ পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকার বাণিজ্য করতে থাকে পুলিশ। চাহিদা মতো পুলিশকে টাকা না দিলে বেতবাড়ী গ্রামে পুলিশি অভিযানের নামে বিভিন্ন বাড়িতে রাতে প্রবেশ করে ভাঙচুরসহ নগদ টাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং একাধিক ব্যক্তিকে মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

নির্যাতনের বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের নিকট সকল নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন। এ ঘটনাগুলো বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে এই সংবাদটি প্রকাশিত হলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওসি দীপক কুমার দাস। এরপর থেকে সাংবাদিকদের নিকট সাক্ষাৎকার দেয়া ব্যক্তিগণকে একে একে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে নতুন নতুন মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠাতে থাকেন।

মামলার বাদী বৃদ্ধ সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে আমি সাংবাদিকদের কাছে পুলিশি হয়রানির কথা বলেছিলাম এটাই আমার অপরাধ। এ কারণে গত ২৪ মে রাতে উল্লাপাড়া থানার ৪/৫ জন সাদা পোশাকে পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে যায় থানায়। আমি শ্বাস প্রশ্বাসের রোগী আমাকে দুই এসআই হাত ধরে রাখে আর ওসি নিজে আমাকে ব্যাপক হারে মারতে থাকে আর বলে তোকে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সাধ মিটাই আগে। লোহার পাইপ দিয়ে আমাকে ইচ্ছে মতো পিটায় ওসি।'

'আমি ওসিকে বলি আমি আপনার বাবার বয়সের আমাকে আর মারবেন না, তিনি কোনো কথা না শুনে এই বৃদ্ধ বয়সে আমাকে এমন করে মারধর করাতে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে রাতেই উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করায়', বলেন তিনি।

বৃদ্ধ সাইফুল আরও বলেন, 'ওসির এই নির্যাতনে আমার দুই হাতের তালু, মাথায়, ডান হাতে, গলার পিছনে, তলাপেটে, পিঠে এবং দুই কানেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। ব্যথায় থাকতে পারছি না। এরপর ২৫ মে আমাকে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে চালান করে দেয়। আদালত আমার অবস্থা দেখে ও জবানবন্ধি নিয়ে আমাকে জামিন দেন এবং শারীরিক অবস্থা অবনতি দেখে চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। আমি একটু সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে সার্টিফিকেট তুলে আজ ২৭ মে সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া থানা আমলী আদালতে হাজির হয়ে এই মামলা দায়ের করি। আমি এই ওসির উপযুক্ত শাস্তি ও বিচার চাই।'

বাদী পক্ষের আইনজীবী মোরশেদুল ইসলাম ও নিখিল কুমার ঘোষ বলেন, বাদীর দায়ের করা মামলাটি বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আমলী আদালতে উপস্থাপনের পর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: আসাদুজ্জামান মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাদীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের রেজিষ্টার্ড চিকিৎসককে নির্দেশ দেন। বাদীর পক্ষের আইনজীবী পৃথক দরখাস্তে ঘটনার জুডিসিয়াল তদন্ত দাবি করার কারণে বাদীর বক্তব্য ও দাখিলকৃত কাগজাদি পর্যালোচনায় দরখাস্তটি জুডিসিয়াল তদন্তের জন্য গ্রহণ করেন এবং আদালত নিজেই অত্র দরখাস্তটি তদন্ত করবেন বলে আদেশ দেন।

অভিযোগের বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক কুমার দাস বলেন, সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক আগের একটা মামলা ছিল। তাকে সেই মামলাতেই গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমি কিংবা আমার কোনো পুলিশ তাকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করেনি। আদালত তদন্ত করলে সঠিক ঘটনা বের হয়ে আসবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: