আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন ও তরুণ ভোটারদের তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ।
তিনি আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কেবল নিজে নয় পরিবার পরিজন নিয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “দেশের উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখতে আমি তরুণ ও নতুন ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। এই নির্বাচনে আপনাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে ওই বিএনপি-জামাত সন্ত্রাস করে আপনাদের ভোট কেড়ে নিতে চায়। আর আপনারা তার জবাব দেবেন। প্রতিটি ভোটার পরিবার-পরিজন নিয়ে সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যাবেন, আপনার ভোট আপনি দেবেন কেউ যেন ঠেকাতে না পারে। তাদের উপযুক্ত জবাব দেবেন। অগ্নি সন্ত্রাসের জবাব দেবেন।
তিনি ঢাকার ১৫টি নির্বাচনী আসনের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘১৫টি রত্ন আপনাদেরকে দিয়ে গেলাম, তারা আপনাদেরকে সেবা করবে, ঢাকাবাসীর সেবা করবে।
তিনি নৌকার প্রার্থীদের জন্য ভোট প্রত্যাশা করে বলেন, এই নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, এ নৌকাই পারবে মানুষকে উন্নত জীবন দিতে, শান্তি সমৃদ্ধি দিতে। এই নৌকায় আপনারা ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামীতে নৌকায় ভোট দেবেন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়ার জন্যই আজকের নির্বাচন।
“কাজেই এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন। আপনার ভোট আপনি রক্ষা করবেন আর ওই অগ্নিসন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী বিএনপি জামাতকে উপযুক্ত জবাব দেবেন। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না,” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে তরুণ সমাজ বা তারুণ্যই হচ্ছে উন্নয়নের অগ্রদূত সে কথার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাদের ভোট প্রত্যাশা করেন এবং অন্যান্য নির্বাচনী জনসভার মতো প্রথমবারের মতো ভোটারদের নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও ঢাকা- ১৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা ১০ আসনের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস সমাবেশে বক্তৃতা করেন। খবর বাসসের।
মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান সমাবেশে সভাপত্বি করেন এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সঞ্চালনা করেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্র, মহানগর এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ৩টা ২৪ মিনিটে সমাবেশ মঞ্চে যখন উপস্থিত তখন সমগ্র এলাকাটি একটি বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। কলাবাগান-ধানমন্ডি ও আশপাশে কেবল মানুষের ঢল। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠেই জাতীয় পতাকা নেড়ে জনগণকেক শুভেচ্ছা জানান। জনগণও বিপুল করতালির মাধ্যমে শ্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত করে প্রতি উত্তর দেয়।
এরপর শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
আওয়ামী লীগকে ‘মাটি ও মানুষের সংগঠন’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের অধিকারকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই এ সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টির সময় সেই ১৯৪৯ সাল থেকেই এ সংগঠন মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যা আজকে প্রমাণিত।
দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, তারা নানা কথা বলেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। তার জবাবও একদিন দেবো আমরা। তার কারণ তারা মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। তাদের কাজই হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করা কারণ গণতন্ত্র থাকলে তাদের নাকি মূল্য থাকে না। আর যদি দেশে কোন অস্বাভাবিক সরকার আসে তাহলে তাদের মূল্য নাকি বেড়ে যায়। তো কার কত মূল্য এখন মনে হয় আমাদের দাঁড়িপাল্লায় সেটা দেখতে হবে। অথচ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য যারা ক্ষমতায় ছিল তখন দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি কেউ কথাও বলেনি।
তিনি বলেন, তখনকার মতো এখন আর দারিদ্র্যের হাহাকার শোনা যায় না। আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ, মুরগি, ডিম তরিতরকারি সব কিছুরই আমরা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করেছি আজকে বেকারত্ব মাত্র তিন ভাগ। ইনশাআল্লাহ সেটুকু থাকবে না। আমরা সেই ভাবেই দেশকে গড়ে তুলছি ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে নির্বাচন তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। বর্জন করাটা খুব স্বাভাবিক কারণ ভোট চুরি করতে পারবে না, নির্বাচন করবে না। কারণ, এর আগেতো এরা ভোট চুরি করে অভ্যস্ত। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং ভোট চুরি এভাবেই তাদের জন্ম অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকের পকেট থেকে। কাজেই ভোট চুরি ছাড়া আর কিছুই তারা পারে না, সেজন্যই এখন নির্বাচন করতে চায় না। নির্বাচন বানচাল করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির কারণে ২০০৮ সালে জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩ আসন পেয়েছিল আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট পেয়েছিল ৩০টি আসন।
তারা ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। তারেক জিয়া দেয় নমিনেশন, গুলশান থেকে ফখরুল দেয় নমিনেশন, পল্টন অফিস থেকে রিজভী দেয়। ওইভাবে নমিনেশন বিক্রির ফলে তাদের নির্বাচন ভেস্তে যায়। আর তারা দোষ দেয় আওয়ামী লীগের। অথচ আওয়ামী লীগই জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা অত্যাচার সয়েছে, জেল খেটেছে এবং সরকারে এসে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পাই, চুরির প্রয়োজন হয় না। তারা (জিয়া-এরশাদ) ভোট চুরি করে, এটা আমার কথা না। হাইকোর্টের রায় আছে জিয়া ও এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ ছিল। আইনের শাসন পদদলিত করে বিচারহীনতার কালচার শুরু করেছিল বিএনপি।
শেখ হাসিনা বলেন, বহু আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজকে মানুষের ভোটের অধিকার আমরা অর্জন করেছি সেই অধিকার কেড়ে নেবে নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস তাদের নাই। তারা পারবে না।
তিনি বলেন, তারা লাশ চায় এজন্য রেলের ফিশ প্লেট খুলে ফেলেছে, রেলের বগিতে আগুন দিয়েছে। মা তার ছেলেকে ছাড়তে পারেনি আঁকড়ে ধরেছিল, সেভাবেই পুরে অঙ্গার হয়ে গিয়েছে।
২০১৩-১৪ সালের বিএনপি জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাবার সামনে সন্তান পুরে মরে যাচ্ছে, বাবা পুড়ে মরে যাচ্ছে সন্তানের চোখের সামনে, স্ত্রীর চোখের সামনে স্বামী পুড়ে মরে যাচ্ছে-কেউ কিছু করতে পারছে না।
জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘আমিও আমার বাবার মতো জীবন উৎসর্গ করে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পথে নেমেছি। আমার একমাত্র শক্তির উৎস দেশের জনগণ।’
তিনি বলেন, আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হলেও কোনো অস্ত্র গোলাবারুদ আমাকে বাধা দিয়ে রাখতে পারেনি। আমার একটা প্রত্যয় ছিল এ দেশের মানুষের জন্য আমি কাজ করবো। সবার খাদ্য-চিকিৎসা-বাসস্থানের ব্যবস্থা করে একটি উন্নত জীবন দেব। সেটা আমরা করতে পেরেছি, এখনও আমাদের এই কাজ চলমান আছে।
প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারসহ তাঁর সরকারের বাস্তবায়িত বিভিন্ন মেগা প্রকল্পগুলোর উল্লেখ করে আগামীতে ঢাকার চারপাশে ওয়াটারওয়েজ নির্মাণ এবং সেক্ষেত্রে জলযানের বাধামুক্ত চলাচল নিশ্চিত করতে নিচু সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ করা, বঙ্গবাজার মার্কেটকে বহুতল ভবনে রপান্তরিত করে এখনকার দোকার মালিকদেরই সেখানে পুনর্বাসন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৪ হাজার শয্যায় উন্নীত করে আধুনিক রূপে গড়ে তোলার মত বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনার উল্লেখ করেন।
তবে, সবার শুরুতে তিনি সমাবেশে আগত জনতা এবং দেশবাসীকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: