হয়রানির আরেক নাম সাতক্ষীরা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি | ২৩ মে ২০২১, ১০:৪০

ছবিঃ সংগৃহীত

অনলাইনে ব্যবসায়ীদের প্রধান মাধ্যম হলো কুরিয়ার সার্ভিস। দূর-দূরান্তে অতি-গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রাদি পাঠানোর জনপ্রিয় মাধ্যম এখন কুরিয়ার সার্ভিস। চলছে আমের মৌসুম। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আত্মীয় স্বজনদের কাছে আম পাঠাচ্ছে পরিবার-পরিজনরা।

আমের প্যাকেট প্রস্তুত এবং বুকিং করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কাজের জন্য এবং ভিড় সামলাতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি শ্রমিকও। গ্রাহক এবং একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ বুঝে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। বুকিং এর জন্য নির্ধারিত টাকা ছাড়াও বাধ্যতামূলক প্রতি কাটুনের জন্য ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং প্লাস্টিকের বস্তা কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। ২ থেকে ৩ ঘন্টা অপেক্ষার পর বুকিং শেষে প্রতি কাটুনে দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা বকশিশও। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের সাতক্ষীরা স্টেশন-এর তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় প্রতি কেজি আম পাঠানোর জন্য ১২ টাকা। ঢাকার বাহিরে জেলায় নেওয়া হচ্ছে ১৬ টাকা।

এখন প্রতিদিন বুকিং হচ্ছে ২০ হাজার কেজি আম। বুকিং দেওয়ার পরের দিন আম পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছে অফিসটি। প্রতিদিন কত টাকার আম বুকিং হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি স্টেশন কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের দেওয়া তথ্যে, প্রতিদিন প্রতি কেজি ১২ টাকা হিসেবে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ১৬ টাকা হিসাবে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বুকিং হচ্ছে স্টেশনটিতে। সাতক্ষীরা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার মি: আমজেদ হোসেন এ প্রতিনিধিকে জানান, ১৬ ই মে থেকে প্রতিদিন বুকিং হচ্ছে। আগামী ৫ থেকে ৭ দিন এভাবে চলবে। এরপর কমে যাবে। টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে এটি সঠিক নয়। আমাদের হেড অফিস থেকে বুকিংয়ের জন্য যে টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে আমরা সেটাই নিচ্ছি। বস্তা নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই বস্তার মূল্য ৫০ টাকা, আবার শেষে বকশিশ কেন? এমন প্রশ্নে স্টেশন ম্যানেজার আমজেদ হোসেন বলেন, প্রচুর গ্রাহকের চাপ থাকায় স্টাফদের বাহিরে ০৪ জন কাজ করছেন। তারা বস্তাগুলো সেলাই করে দেয় সেজন্য তারা এই টাকা নিচ্ছেন।

অনলাইনে ব্যবসা করেন শহরের আব্দুর রহমান। সাতক্ষীরা শপ অনলাইনের পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরায় এস এ পরিবহন, জননী,সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস ও ইউএসবি এই ০৪ টি কুরিয়ার সার্ভিস আম বুকিং নিচ্ছে। প্রতি কেজি আম ঢাকায় পাঠাতে জননী ১০ টাকা, ইউএসবি ১০ টাকা নিচ্ছে। সেখানে এত ভোগান্তি ও হয়রানি নেই। তিনি আরো বলেন, তবে অনলাইন ব্যবসায়ীরা ঝুঁকেছেন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে। প্রতি কেজি ঢাকায় পাঠাতে ১২ টাকা করে নিচ্ছে। সব থেকে বেশি বুকিং হচ্ছে এখানে(সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস) আবার ভোগান্তি ও হয়রানিও এখানে বেশি। গ্রাহক হয়রানির পাশাপাশি ফেসবুকে ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এর বিষয়ে চলছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কলকাতা টিভির বাংলাদেশ প্রতিনিধি সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম লাভলু তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে লেখেন, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস সাতক্ষীরা শাখা সার্ভিস যে কতটা খারাপ তা বলার ভাষা রাখে না। রুদ্ররাজ ফেসবুক পেজে লিখেছেন, প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা! ভাবা যায়। আলমগীর কবির লিখেছেন, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস কলারোয়া শাখা থেকে প্রতি কেজি আম ঢাকার বাহিরে পাঠাতে ২৪ টাকা নেওয়া হচ্ছে। মোঃ সাঈদ লিখেছেন, খুলনাতে তা আরো বেশি। ২০ টাকা ময়মনসিংহ-সিলেট, টাকা এটা খুবই বাড়াবাড়ি। আব্দুর রহিম নামে আরেকজন লিখেছেন, কিছুদিন আগে আমি সাতক্ষীরা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে আম পাঠিয়ে ছিলাম। আমার কাছ থেকে প্রতি কেজি ২০ টাকা করে রাখছিল। আমি ২২ কেজি আম পাঠিয়েছিলাম বরিশালে। পরে,বরিশালের ওই ভাই আমাকে জানালো সে আম পেয়েছে ১৭ কেজি। বাদ বাকি এই আম গুলো কোথায় গেল? আমার প্রশ্ন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, আম বুকিং দিতে সময় লাগছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। প্রতি কার্টুন আম পাঠাতে গেলে প্রতি কেজি আমের নির্ধারিত মূল্য ছাড়া প্রতি কাটুনের জন্য একটি বস্তা নিতে হবে বাধ্যতামূলক। যার মূল্য ৫০ টাকা। যার বাজার মূল্য ১৫ থেকে ২০ টাকা।

আব্দুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বস্তায় প্রাপকের নাম লিখে দেওয়ার জন্য বকশিশ দিতে হয় ১০ থেকে ২০ টাকা। সে হিসাবে দেখা যায় একজন গ্রাহকের এক প্যাকেট আম পাঠাতে নির্ধারিত মূল্য ছাড়াও ৬০- ৭০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এমন ফাঁদে ফেলে জননী ও ইউএসবি কুরিয়ার টাকা নিচ্ছে না। তালা সদরের শিবপুর গ্রাম থেকে আম বুকিং এর জন্য সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে আসেন আসাদ হোসেন, ভোগান্তি ও বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি জানান, আমি ২ মন ২০ কেজি আম পাঁচটি বস্তা ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে কুরিয়ারে পাঠিয়েছি ১ হাজার ২২০ টাকা বুকিং দিতে হয়েছে। পাঁচটি বস্তা কিনতে হয়েছে ২৫০ টাকায়।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তানজিলুর রহমান বলেন, কুরিয়ার সার্ভিস বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তারা ইচ্ছামত তাদের ফ্রী নির্ধারণ করে সেবা দিয়ে থাকে। এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো হস্তক্ষেপ থাকে না। তবে কেউ যদি অভিযোগ দেয় তবে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: