প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি চাই নারীরা স্বাবলম্বী হোক। নারীরা স্বাবলম্বী হলে পরিবার ও সমাজে তার অবস্থান সুদৃঢ় হয়। সব জায়গায় তার কথার মূল্যায়ন হয়। আমরা বলতে পারি, এরইমধ্যে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন অনেকাংশে পূরণ করতে পেরেছি।
শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া পদক ২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান খাটো করে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অনেক অবদান আছে। তারা যেমন ট্রেনিংয়ে গেছে, তেমনি যুদ্ধক্ষেত্রেও সহযোগিতা করেছে। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নানা নির্যাতনের শিকার হন। অনেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।
এসময় বেগম রোকেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া নিজের স্বামীর নামে স্কুল করেছেন। সেখানে ছাত্রী পাওয়া যেত না। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করতেন। সেখানেও নানা বাধার সম্মুখীন হন। তিনি তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, যাহা পুরুষ পারিবে, তাহা নারীও পারিবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আমলে নারীদের অনেক বাধা ছিল। সেসময় নারীদের কর্মক্ষেত্রে কোনো সুযোগ দিতো না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু মুজিব নারীদের সে সুযোগ দিয়েছেন। আইনেই ছিল জুডিশিয়ারিতে মেয়েরা যোগ দিতে পারবে না। জাতির পিতা আইন পরিবর্তন করেন। পরে আমি এসে এটির পথ আরও সুগম করে দেই। নাজমুন আরা আপিল বিভাগেও যান। আমার একটা আফসোস রয়ে গেছে, আমার ইচ্ছে ছিল, প্রধান বিচারপতিও নারীকে করবো। পারিনি।
তিনি বলেন, আমি চাই নারী স্বাবলম্বী হোক। নারীরা স্বাবলম্বী হলে পরিবার ও সমাজে তার অবস্থান সুদৃঢ় হয়। সব জায়গায় তার কথার মূল্যায়ন হয়। আমরা বলতে পারি, এরই মধ্যে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন অনেকাংশে পূরণ করতে পেরেছি।
নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আইন প্রণয়নসহ সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীদের সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করতে জাতির পিতা যে কাজ শুরু করেছিলেন সেই পথ বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। লিঙ্গীয় সমতা নিশ্চিত করতে ছেলেদের পাশের হার এখন বাড়াতে হবে।
এছাড়াও নারীদের সুরক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
সরকার প্রধান বলেন, রাজনীতি থেকে প্রশাসন, দেশের সবখাতে নারীরা এগিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে এসেছে। তৃণমূল থেকে নারী নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট পপুলেশন স্মার্ট ইকোনমি স্মার্ট সোসাইটিতে ছেলে মেয়ে উভয়ই দক্ষ হয়ে গড়ে উঠবে, এটাই সরকারের লক্ষ্য বলেও জানান তিনি।
এসময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবার বেশির ভাগ সময় জেলে ছিলেন। সংসার চালানো, দল সুসংগঠিত করাসহ সব কাজই আমার মা করেছেন।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
এ বছর বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন পাঁচ নারী। তারা হলেন- নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম, মরণোত্তর (ঢাকা জেলা), নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ডা. হালিদা হানুম আখতার (রংপুর জেলা), নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা, মরণোত্তর (নেত্রকোণা জেলা), নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার (লক্ষ্মীপুর জেলা) এবং পল্লী উন্নয়নে রনিতা বালা (ঠাকুরগাঁও জেলা)।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: