প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু চাকরীর পেছনে না ছুটে সরকারি সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে ঘরের পাশের পরিত্যক্ত জলাশয়ে মৎস চাষের মাধ্যমে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে দেশের যুব সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোন ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখবে। শুধু চাকরীর পেছনে না ছুটে নিজেরাই যদি মৎস খামার করে মাছ উৎপাদন করে এবং বাইরে বিক্রী করে তাহলে সে পয়সা পেতে পারে। আর যুব সমাজের জন্য আমরা কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। সেখানে থেকে কোন জমানত ছাড়াও ঋণ নেয়া যেতে পারে। সেই ঋণ নিয়ে যে কেউ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, কাজ করতে পারবে’।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সারাদেশে আমরা একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি এবং সেখানে আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। সেখানে যাতে মৎস্যজাতীয় পণ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং বাজারজাত করা যায় সেই সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশ আওয়ামী মৎসজীবী লীগের ১৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের নিজেদেরও সংগঠনকে আরো সুসংগঠিত করা এবং আমাদের যুব সমাজ যাতে আরো এগিয়ে আসে ও মৎস্য উৎপাদনে মনেযোগী হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। কেননা এখানে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
তিনি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মৎসজীবী লীগের প্রতিটি সদস্যকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তখনই কাজ করেছে।
‘আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে,’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন,’৯৬ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি ’৯৮ সালেই বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে ফেলি। দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় আসি তখনও আমাদের লক্ষ্য পূরণ করি এবং খাদ্য নিরাপত্তার সাথে সাথে পুষ্টি যাতে যোগ হয় তার ব্যবস্থা নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য আমাদের যুবসমাজকে ট্রেনিং দেয়া, সুযোগ সৃষ্টি করা, জলাধারগুলো সংস্কার করে মাছ উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার ব্যবস্থা করা, এর ওপর গবেষণার ব্যবস্থা করা, গবেষণা করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা, কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করা এবং খাদ্য তালিকায় সবচেয়ে নিরাপদ পুষ্টি মাছ যাতে থাকে তার ব্যবস্থা করি।
তিনি বলেন, একটা মানুষ যদি ৬০ গ্রাম মাছ খেতে পারে তা যথেষ্ট সেখানে একজনের খাদ্যতালিকায় আমরা ৬২ গ্রাম মাছ তুলে দিচ্ছি, সেই সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আর সেই সাথে ব্যপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ। এ দেশে শত শত নদী রয়েছে। আমাদের খাল-বিল ও জলাধারগুলো সংস্কার করে যাচ্ছি এবং সেখানে আরো বশি পরিমান মাছ যাতে উপাদন হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের মাছের উৎপাদন যেখানে ২৭ লাখ মেট্রিক টন ছিল সেখানে আমরা ৫০ লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি উৎপাদন শুরু করেছি। আর সেই সাথে সাথে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যাতে মাছ থাকে তারও ব্যবস্থা নিয়েছি। আর ইলিশ উৎপাদনে আমরা এখন পৃথিবীর এক নম্বর অবস্থানে চলে এসেছি।
ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রজননের সময়ে আমরা মৎসজীবীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে থাকি, তাঁদের খাদ্য সাহায্য দেই।
তিনি বলেন, প্রত্যেককে প্রতিমাসে বিনা পয়সায় খাদ্য দিয়ে থাকি, চাল দিয়ে থাকি, আবার সেই সঙ্গে আবার ঝাকায় করে মাছের চাষের উদ্যোগের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগও নিয়ে থাকি যাতে আমাদের মৎসজীবীরা কোনরকম কষ্ট না পান । সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে মাছ উৎপাদনে আমরা বিশেষ যত্ন নিচ্ছি। একারণে আমরা খাদ্য নিরাপত্তার পর এখন পুষ্টি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়াতে মানুষ আর পুষ্টিহীনততায় ভুগছেনা।
তিনি বলেন, সেই সাথে আমি একটি অনুরোধ করবো খাদ্য তালিকায় শুধু বেশি করে ভাত খাওয়া নয় সেই সঙ্গে বেশি করে মাছ, শাক-সবজী এবং ফলমুল খাওয়াসহ পুষ্টিগুণ যেন থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি এটুকু বলবো যে আদর্শ এবং নীতি নিয়ে তিনি এদেশ স্বাধীন করেছিলেন সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করবো এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।
তিনি পুণরায় সকলকে কোভিড-১৯ সম্পর্কে সতর্ক করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবানও পুণর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন যাতে করোনাভাইরাস কারো ক্ষতি করতে না পারে। সেদিকে বিশেসভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নিজেকে এবং অপরকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: