দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে বাদ পড়েছেন বেশ কয়েকজন।
সব মিলিয়ে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে ২৯৮টি। কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে।
গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও জোটবদ্ধ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত থাকলেও দলটি প্রার্থী দিয়েছে গত নির্বাচনে শরিকদের ছেড়ে দেওয়া আসনেও। অবশ্য ভাগাভাগি এবং অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতা হলে সেই সিদ্ধান্ত পরে হবে, সেই ঘোষণা আগেই ছিল।
রোববার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এই তালিকা ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে গতবারের মতোই দেওয়া হয়েছে গোপালগঞ্জ-৩ আসন, নোয়াখালী-৫ আসনে থাকছেন ওবায়দুল কাদের।
আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চার দিন মনোনয়নে আগ্রহীদের কাছে ফরম বিক্রি করে ক্ষমতাসীন দল। ৩০০টি আসনের বিপরীতে ফরম সংগ্রহ করেন ৩ হাজার ৩৬২ জন নেতা।
এরপর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড বিভাগ ধরে সেসব ফরম থেকে প্রার্থী বাছাই করে। কাকে কাকে প্রার্থী করা হচ্ছে, এ বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখে ক্ষমতাসীন দল।
দলের সদস্যদের পাশাপাশি ক্রিকেটার সাবিক আল হাসানও তিনটি, চিত্রনায়ক ফেরদৌস দুটি এবং চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, সামসুন্নাহার সিমলা একটি করে আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দেন।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে মাগুরা-১, চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে ঢাকা-১০ আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন মাহি।
সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন।
২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, এমন সংসদ সদস্যদের মধ্যে বাদ পড়েছেন কমই। যাদের নাম কাটা পড়েছে তাদের মধ্যে আছেন সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন (ফরিদপুর-৩), সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান (জামালপুর-৪), সাবেক পুলিশ প্রধান নুর মোহাম্মদ (কিশোরগঞ্জ-২), এনামুল হক (রাজশাহী-৪), হাজী মোহাম্মদ সেলিম (ঢাকা-৭)।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় উপনির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী করা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
২০০৮ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ জোটভিত্তিক নির্বাচন করে আসছে। এখন পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনের দুটিতে আওয়ামী লীগের মোর্চার নাম ছিল ‘মহাজোট’, যাতে জাতীয় পার্টিও ছিল।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও তার জোটের শরিকরা বর্জন করার পর সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোট করেনি। ১৪ দলের সঙ্গে জোট থাকলেও জাতীয় পার্টিকে জোটে না রেখে ৩৪টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়।
এবারও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করবে বলে জানিয়েছে। তবে বিএনপি ও তার শরিক এবং সমমনা দলগুলো ভোটে না আসার সিদ্ধান্তে অটল। আওয়ামী লীগ এবারও জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। তবে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোট হবে কি না, সে বিষয়ে জানানো হয়নি।
এবারও ২০১৪ সালের মতো জাতীয় পার্টিকে কিছু আসনে ছাড় দেওয়ার আলোচনা আছে। তবে এ নিয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি।
জাতীয় পার্টি ছাড়াও প্রথমবারের মতো ভোটে অংশ নিতে যাওয়া তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ আরও কয়েকটি দলকে ছাড় দেওয়ার আলোচনাও আছে।
আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এসব মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই চলবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬ চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে, প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।
অর্থাৎ প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত আসন সমঝোতার সুযোগ আছে আওয়ামী লীগের।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: