গত রোববার (২৯ অক্টোবর) হরতালের পর একদিন বিরতি দিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে তিনদিনের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো ধরনের নাশকতা ও জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সারা দেশে প্রস্তুত রয়েছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী।
অবরোধ কর্মসূচিতে নাশকতার আশঙ্কায় সারা দেশে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আনসার, পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে বিজিবি। নাশকতার চেষ্টা হলে মাঠে পুলিশ ও র্যাব কঠোর অবস্থানে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর পক্ষ থেকে এমনই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি নিয়েও গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ওই সহিংসতায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত এবং ৪১ পুলিশ সদস্য আহত হন। তাইতো পরিস্থিতি মাথায় রেখে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৩ দিনের অবরোধে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় ৩৬ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫৪৪ জন এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য, অপরাধের ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপি সূত্র জানায়, গত ২১ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ দিনে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও সহিংসতার ঘটনায় ১৭২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সমাবেশের দিন ২৮ অক্টোবর ৬৯৬ এবং ২৯ অক্টোবর ২৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে অবরোধ চলাকালীন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও নাশকতার তথ্য থাকলে ৯৯৯-এ কল করে তথ্য জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
অপরদিকে সোমবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে বলেন, ৩১ অক্টোবর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তিনদিনের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব ফোর্সেসের ১৫ ব্যাটালিয়নের তিন শতাধিক টহল দল নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলবে। কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের স্পেশাল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক দেশব্যাপী নিয়োজিত থাকবে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীরা নাশকতা ও সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা এই ধরনের নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে র্যাব।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ সব দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সার্বক্ষণিক সাইবার নজরদারি রাখছে র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: