খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়

সময় ট্রিবিউন | ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০১

সংগৃহীত

দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় যেকোনো মূল্যে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করতে চায় সরকার। বৈশ্বিক করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী নিত্যপণের দাম বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছরের নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে খাদ্যের মজুত আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার যেকোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে চালের জোগান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মুহূর্তে সরকারের গুদামে ১৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। তারপরও সরকার আরও ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এসব পণ্য দেশে আনা হবে। এর ফলে দাম নিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা সহসাই কেটে যাবে বলে আশা করছে সরকার।

এদিকে সরকার পাঁচটি দেশ থেকে খাদ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশগুলো হলো রাশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ভারত ও থাইল্যান্ড। রাশিয়া থেকে খাদ্য আমদানিতে কূটনৈতিক সমস্যাও কেটে গেছে।

দেশে এখন ২০ লাখ টনের বেশি চাল মজুত আছে; যা ‘সন্তোষজনক’ বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গত রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন খাদ্যের দিক থেকে আমরা নিরাপদে আছি। তারপরও মজুত বাড়াতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে জিটুজি পর্যায়ে এক লাখ টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্যে ৭০ হাজার টন লটের চাল আসবে পোর্টের মাধ্যমে। আর ৩০ হাজার টন স্থলবন্দরের মাধ্যমে আসবে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম থেকে জিটুজি পর্যায়ে দুই লাখ টন থাই নন-বাসমতি চাল এবং ভারত থেকে ৩০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

দুটি মিলে একত্রে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আসবে। সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ভারতের সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট কনজ্যুমার করপোরেশন সোসাইটি লিমিটেড। নন-বাসমতি প্রতিটন ৫২১ মার্কিন ডলার। ৩০ হাজার টন আতপ চাল প্রতিটন ৪৯৪ মার্কিন ডলার। সর্বমোট দুই লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানিতে খরচ হবে ১১ কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। টাকায় এর পরিমাণ মোট এক হাজার ১৩০ কোটি ৬৯ টাকা।

সরকার রাশিয়া থেকে জিটুজি (সরকার টু সরকার) পর্যায়ে পাঁচ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

গত রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত সরকারের মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুতের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। চাল আমদানির জন্য যাদের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন কারণে ফেল করতে পারে। এজন্য আগেই কিছু বিকল্প অর্ডার দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই সভায় জানানো হয়েছে, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। তবে এবছর নভেম্বরে সারাবিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই কর্মসূচি চালানোর জন্য অতিরিক্ত আরও ৫ থেকে ৬ লাখ টন চাল প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: