পদ্মা সেতুকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা

আফিফ আইমান | ১৬ জুলাই ২০২২, ০৬:২৮

সংগৃহীত

পর্যটন পৃথিবীর সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। পর্যটন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মায়ানমার ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত। দেশটি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ।এদেশে রয়েছে সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন,পাহাড়, চা বাগান, সাফারি পার্ক, ইকো পার্ক ইত্যাদি।এসবের সাথে সম্প্রতি যোগ হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। এই সেতুকে ঘিরে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পাশাপাশি পর্যটনের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ঐতিহাসিক ও পর্যটন স্থানগুলোও জেগে উঠেছে নতুন সম্ভাবনা।

জাতীয় অথনৈতিক উন্নয়নের প্রভাবক পদ্মা সেতু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পেই নির্মিত হয়েছে। সঙ্গত কারণে পদ্মা সেতু জাতীয় উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। পদ্মা সেতু চালুর আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন সেতু দেখতে আসছে অসংখ্য মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার দর্শনার্থীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ভ্রমণপিপাসু এসব মানুষের চাহিদা মেটাতে পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের যেন আন্তরিকতার কমতি নেই। আদি পেশা বদল করে মাওয়া-জাজিরার অনেকেই এখন পর্যটনকেন্দ্রিক নতুন ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করছেন। এ দিকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের পর্যটনের উদ্যোক্তারাও নতুন সেবা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে সেতুটি চালু হলে শুধু যোগাযোগই নয়, পর্যটনের পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্যেও এগিয়ে যাবে এই এলাকার আপামর জনগণ।

 

পদ্মা পাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করছে সব বয়সী মানুষকেই। মাওয়া-জাজিরায় সেতুর পুরো কাঠামো দাঁড়ানোর পর পর্যটকদের কাছে এসব এলাকার আকর্ষণ বেড়েছে কয়েকগুণ। এই সেতু দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন স্থানীয় পর্যটকরা। পদ্মার পাড় ও সেতুর আশপাশে নৌকায় চড়ে মন ভরে দেখছেন এ সেতু। 

 

অনেকে গড়েছেন হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট। ইতোমধ্যে শিমুলিয়া ঘাটের গোল চত্বরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক খাবার হোটেল ও কার পার্কিং ব্যবস্থা। পাশাপাশি অনেক বিলাস বহুল রিসোর্টও গড়ে উঠেছে।

 

এছাড়া শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা থেকে শিবচরের মাদবর চর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ১০.৫ কিলোমিটার নদী শাসন এলাকাও এখন পর্যটকদের জন্য দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিদিন সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বহু মানুষ ওই এলাকা ঘুরতে আসেন। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারাও বলছেন, পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক পর্যটনের ভাবনা তাদেরও আছে। সেতু নির্মাণের সাথে সাথেই পদ্মার দুই পাড়ের ৩টি সার্ভিস এরিয়ায় আবাসন ও সাইট অফিস স্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তীতে পর্যটনের কাজে এগুলো ব্যবহার করার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের রয়েছে।

পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য যে ঐতিহাসিক ও পর্যটন স্থানগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্যও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। কেননা যোগাযোগের কারণে সুন্দরবন, বাগেরহাট ও কুয়াকাটায় যে হারে পর্যটকদের আগমন হতো এখন আরো সহজে কম খরচ ও সময়ে ওই সব স্থানে পর্যটকরা আসতে পারবে। পাশাপাশি পদ্মার দুই পাড়ে আরো নতুন নতুন পর্যটন এলাকা তৈরি হচ্ছে।

সেতুটি মাথা তুলে দাঁড়ানোর পর থেকেই প্রতিদিনই তা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। সবার মধ্যেই একটি ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়েছে। তবে সেতুটির পর্যটনের দিকটি কাজে লাগাতে পরিকল্পিত উদ্যোগের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তার প্রেক্ষিতে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনাও নিয়েছে সেতু বিভাগ। এই সেতু ঘিরে পর্যটনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেখানে বেসরকারি পর্যায়ে অনেক উদ্যোক্তাই হয়তো এগিয়ে আসবেন। আর এসব পর্যটক ও উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তায় সহযোগিতা সরকারকে দিতে হবে। সেতুটির নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর উভয় পাড়ে দুটি থানার উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে করে দেশে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠবে, ফলে দেশ অর্ধনেতিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করবে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: