ইউনুস বেঈমানি করে বিশ্বব্যাংককে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়: প্রধানমন্ত্রী

সময় ট্রিবিউন | ১৭ জুন ২০২২, ০১:৩১

বৃহস্পতিবার পল্লি জনপদ রংপুর ও বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী-ছবি: বাসস

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনুস বেঈমানি করে বিশ্বব্যাংককে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) পল্লি জনপদ রংপুর ও বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড), কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘যিনি আমাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তারই বেঈমানির কারণে এ পদ্মা সেতুর টাকাটা বন্ধ হয়ে যায়। আমি সেদিন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে দিতে পারেনি। পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি, তাই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন উৎসবটা প্রত্যেক জেলায় জেলায় করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়ে গেছে। সারাজীবন অবহেলিত দক্ষিণ অঞ্চল আর অবহেলিত থাকবে না। কোনো জায়গায় যদি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়, সেখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এমনিতেই হয়ে যায়। আমরা দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ, পদ্মা পাড়ের মানুষ সব সময় তো অবহেলিত ছিলাম। দারিদ্র্য আমাদের নিত্যসঙ্গী। আর সেটা থাকবে না। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। সবাইকে অনুরোধ করব সবাই একটু ধৈর্য ধরে চলবেন।

গাড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতা না করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে আগে গেল পরে গেল এসব করবেন না। অর্থাৎ কোনো রকম দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ রেখে সবাই চলাচল করবেন এবং উৎসবটা পদ্মাপাড়েই শুধু হবে না সারা বাংলাদেশ এ উৎসবটা করবেন। আমি চাচ্ছি পুরো বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় জেলায় উৎসব হোক, কারণ এটা আমাদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী আমাজান এবং তারপর হচ্ছে পদ্মা। এ পদ্মায় এখানে একটা সেতু করতে পারি সেটা অনেকেরই ধারণা ছিল না। তার উপর এ সেতুটা হচ্ছে দ্বিতল সেতু। নিচ দিয়ে ট্রেন যাবে উপর দিয়ে গাড়ি যাবে, এটা একটা কঠিন কাজ। পৃথিবীতে এ ধরনের কাজ বোধহয় এটাই প্রথম। এখানে যে সমস্ত মেশিনারজ ব্যবহার করা হয় এটা বোধহয় আর কোথাও হয়নি।’

ড. ইউনুসের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তো এখন প্রায় ৫২/৫৩টি ব্যাংক আছে। প্রত্যেক ব্যাংকের একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টর আছে। কতজন পারে বিদেশে টাকা বানাতে? অথবা কাউকে লক্ষ লক্ষ ডলার ডোনেশন দিতে? বা বিদেশে ঘুরে বেড়াতে কে পারে? দুর্ভাগ্য হলো সব থেকে বেশি আমি তাকে সুযোগ দিয়েছি। গ্রামীণফোন এ ব্যবসাটা আমার আমলে আমি তাকে দিয়েছিলাম। গ্রামীণ ব্যাংক একেবারেই বসে যাচ্ছিল, তখন সেই গ্রামীণ ব্যাংক চালু রাখার জন্য ৯৭/৯৮ সালে আমাদের জন্য খুব খারাপ সময় ছিল। কারণ ভয়াবহ বন্যা ছিল, সেই অবস্থায়ও আমাদের রিজার্ভ খুব কম ছিল, অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক ছিল, একদিকে অর্থনৈতিক মন্দা অন্যদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, সে অবস্থায়ও ব্যাংকটাকে চালু রাখতে প্রথমে ১০০ কোটি পরে ২০০ কোটি পরে আরও ১০০ কোটি মোট ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ব্যবসা চালু রাখার সুযোগ করে দিই। গ্রামীণফোনের ব্যবসাটা দিই যাতে গ্রামীণফোনের লভ্যাংশটা গ্রামীণ ব্যাংকে যাবে। জীবনে একটা পয়সাও দেয়নি। শ্রমিকদের পাওনা টাকা দেয় না আর কী দেবে? সেটা হচ্ছে আমাদের দেশের নবেল লরিয়েট ডক্টর ইউনুস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়বেন না। যদিও আইনে আছে ৬০ বছর বয়স হলে ছাড়তে হবে, তার তখন ৭০ বছর পার হয়ে গেছে। ১০ বছর তিনি বেআইনিভাবে এমডি থেকেছেন। তারপর আরও থাকবেন। তাকে আমাদের তরফ থেকে বলা হয়েছে আপনি উপদেষ্টা থাকেন, আপনাকে সেই সম্মান দিয়ে রাখা হবে। সেটাও তিনি করেননি। সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন আর মামলায় যথাযথভাবে হেরেও গিয়েছিলেন। কোর্ট আর যাই পারুক তার বয়স তো ১০ বছর কমাতে পারেনি। যদি কমাতে পারত হয়তো করে দিত এটাও জানি।

তিনি আরও বলেন, আমেরিকার সরকারকে ধরে বিশ্বব্যাংকেকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেয় কানাডার কোর্টে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে ছিলাম বিশ্বব্যাংককে যে দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে। আমি এমনিতে মেনে নেব না। প্রমাণ দিতে পারেনি। তখন আমি বলেছিলাম টাকা লাগবে না আমরা নিজের টাকায় করব।

দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে ধন্যবাদ আমি যখন ঘোষণা দিয়েছিলাম আমার টাকায় করব দেশের সাধারণ মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তারা বলেছিল আমাদের যার যা আছে আমরা দেব, নিজের টাকায় করব। অনেকে আমাকে চেকও পাঠিয়েছে। মানুষের যে অভূতপূর্ব সাড়া এটাই আমার সাহস যুগিয়েছিল।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: