নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নগরবাসীর উদ্দেশ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এতে তিনি সামগ্রিক নানা বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রেখেছেন।
রোববার (৯ জানুয়ারি) মাসদাইরের মজলুম মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। এতে নির্বাচন নিয়ে তার সকল বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে। তার পুরো বক্তব্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
লিখিত বক্তব্যের চৌম্বক অংশ
ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, ভৌগলিক অবস্থান তথা জলপথ, রেলপথ সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ ৫০০ বৎসরের অধীক পুরানো ঐতিহ্যবাহী একটি জনপদ। বৃটিশ সরকার তাদের রাজকর্মচারী ভীখন লাল ঠাকুরের কাজকর্মের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ১৭৭৬ইং সালে অত্র অ লের ভোগস্বত্ব তাকে দান করলে তিনি দেওভোগে জিওস পুকুরসহ প্রচুর সম্পত্তি দেবতার নামে উৎসর্গ করে লক্ষীনারায়ন আখড়া স্থাপনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ নামের উৎপত্তি বলে ইতিহাসবিদগণ মনে করে। এরও পূর্বে ঈশাখাঁ, মানসিংহ, বিবি মরিয়ম, গিয়াসউদ্দিন আয্ম শাহ, শাহ ফতেহ উল্ল্যাহ, হয্রত সালেহ ইয়েমেনী, শ্রী শ্রী দূর্গাচরন নাগ, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রাক্ষ্মচারীসহ অনেক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের পদচারনার কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। শেরশাহ নির্মিত গ্যান্ডট্রাঙ্ক রোড অত্র নগরীর উপর দিয়েই অগ্রবর্তী হয়েছে। এছাড়াও হয্রত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র পদচিহ্ন স্থাপনের মাধ্যমে অত্র অ ল আকাশচুম্বী মর্যাদায় সম্মানীত। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ সর্বপ্রথম নারায়ণগঞ্জে চালু হয়।
ঢাকা পৌরসভা গঠন হওয়ার পূর্বে কদমরসুল, বন্দর, মদনগঞ্জ এলাকা সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল মদনগঞ্জ পৌরসভা। ১৮৭৬ইং সনের ৮ই সেপ্টেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম অংশ নারায়ণগঞ্জকে সংযুক্ত করে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ মিউনিসিপালটী। এ জনপদে পদচারনা হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্ষ্যতিসম্পন্ন পর্যটক ইবনে বতুতাসহ স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই উপমহাদেশের তারকা চিহ্নিত ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক যথা নেতাজী সুভাষ বোস, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জোতিবসু, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মাওলানা আঃ হামিদ খাঁন ভাষানী, কমরেড মনিসিং, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানসহ অনেক সম্মানীত ব্যক্তিবর্গের। নদী পথের ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনায় ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশ সরকার নারায়ণগঞ্জকে ব্যবসা বণ্যিজ্যে সম্মৃদ্ধশালী করার জন্য “অবাধ বন্দর” (ঋৎবব চড়ৎঃ) ঘোষনা করে। পাটকল, লবন, রং, সূতা, কাপড়, গেঞ্জি প্রভৃতি ব্যবসা সম্প্রসারনের কারণে নারায়ণগঞ্জ প্রাচ্যের ডান্ডি উপাধী লাভ করে এবং ১৮৮২ সালে নারায়ণগঞ্জকে মহকুমা ঘোষনা করা হয়।
১৯৭৭ইং সনে বালুর মাঠে এক বিরাট জনসভায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলা সমন্বয়ে “নারায়ণগঞ্জ জেলা” করার ঘোষনা দেন, কিন্তু তার শাহাদাতের পরে গেজেট প্রকাশিত না হলেও ১৯৮৪ইং সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তৎকালিন রাষ্ট্রপতি এইচ. এম. এরশাদ, নারায়ণগঞ্জকে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা ঘোষনা করেন নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জকে বাদ দিয়ে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জকে স্বতন্ত্র পৌরসভা গঠন করেন। ২০০২ইং সনে এই তিন পৌরসভা সমন্বয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠন করার জন্য আমি সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পেশ করি, যা ২৬-০৮-২০০২ইং তারিখে “দৈনিক ইত্তেফাক” পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়। অন্তে ২০১১ইং সনে বহু কাংখিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়, কিন্তু সিটি কর্পোরেশন অদ্যবদি নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেই নগরবাসীর জীবনযাপনের মান উন্নয়নের লক্ষে সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাব করেছিলাম, দুর্ভাগ্যের বিষয় তা আজও হয়নি। উল্লেখ্য, বি.এন.পি’র নমিনেশনে আমি ২০১১ সালে মেয়র প্রার্থী ছিলাম, কিন্তু দলের নির্দেশক্রমে ৭ (সাত) ঘন্টা পূর্বে অনাকাংখিত ভাবে আমাকে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াতে হয়েছিল। যা আপনারা সকলেই অবগত আছেন।
মহান স্বাধীনতার পর যারা রাজনীতি, সামাজিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি অঙ্গনে নারায়ণগঞ্জের অভিবাবক হিসাবে নগরবাসীর সূখে দুঃখে ছিলেন তাদেরকে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি, যাদের মধ্যে সর্ব শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ খগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, সমাজ সেবক হরকান্ত ব্যানার্জি, ক্রীড়াবিদ আলাউদ্দিন খাঁন, রাজনীতিক সর্ব মরহুম এ.কে.এম. সামসুজ্জোহা, আলহাজ জালাল উদ্দিন আহাম্মদ, আলী আহাম্মদ চুনকা, আফজল হোসেন, এ. কে. এম. নাসিম ওসমান, নাজিমউদ্দিন মাহম্মুদ, হাসান জামাল, খাজা মহিউদ্দিন প্রমূখ ব্যক্তিবর্গকে এবং একই সাথে আমি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
প্রিয় নগরবাসী,
আমি দীর্ঘ প্রায় ৫০ বৎসর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের নি¤œ আয়ের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় সহ শিক্ষা, সামাজিক, প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট দূর্যোগসহ কৃত্রিম সংকটে সর্বক্ষেত্রে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, এ জন্য মিছিলে গুলিবিদ্ধ হওয়া সহ বহুবার কারাবরণ এবং রাজপথে পুলিশ দ্বারা নিগৃহিত হয়েছি, কিন্তু থেমে যাই নাই। বিগত দিনে আমার গণবিরোধী কোন ভূমিকা নাই। এখন আমি নগর বাসীর সেবা করার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে হাতি মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রতিদন্ধিতা করছি এবং আল্লাহপাকের মেহেরবানীতে আমি নির্বাচিত হলে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে পরামর্শক্রমে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়াও আগামী ১০০ বৎসরকে সামনে রেখে একটি দীর্ঘ মেয়াদী গ্রান্ড মাষ্টার প্লানের খসড়া প্রণয়ন করে, সর্বোস্তরের জনগনের মতামতের ভিত্তিতে, গৃহীত চূড়ান্ত প্লান অনুযায়ী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে স্বাচ্ছন্দে বসবাসযোগ্য বিজ্ঞান সম্মত পরিবেশ বান্দব ও প্রতিবেশী নিরাপত্তামূলক একটি নিরাপদ নগরী গড়ে তোলায় বীজ বপন করবো, ইনশাআল্লাহ। অধিকন্তু নারায়ণগঞ্জ হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। প্রশিসানিকভাবে সিটি কর্পোরেশনকে গনমূখী হিসাবে গড়ে তোলা হবে, ঠিকাদারীর কোন প্রকার সিন্ডিকেটকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হবে না এবং নাগরিক সুবিধা জনগনের দ্বারে পৌছে দেয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আমার থাকবে ।
নগরবাসীর উৎসাহ, ভালোবাসা, সাহস ও সহযোগিতার কাছে আমি চির ঋনী হয়ে গেছি, কৃতজ্ঞতা বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। অবহেলিত, উন্নয়ন বি ত সর্বস্তরের নারায়ণগঞ্জবাসীর অনুরোধে আমি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে নেমেছিলাম। কিন্তু মহান আল্লাহরাব্বুল আল-আমিনের অপার করুনায় এবং নগরবাসীর উদ্দীপনা জন¯্রােত এখন আমাকে জনতার মেয়র প্রার্থী বানিয়ে তুলেছে। তাই স্বতন্ত্র ও জনতার প্রার্থী তৈমূরের মাঝেই নগরবাসী তাদের পরিবর্তনের দাবীকে, কাঙ্খিত উন্নয়নের দাবীকে বাস্তবিক রুপ দিতে চাচ্ছেন। নগরবাসী মনে করছেন জনতার প্রার্থী তৈমূরের মাধ্যমেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে পরিবর্তন আসবে, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ফিরে আসবে, নগর ভবন ঠিকাদার সিন্ডিকেট মুক্ত হয়ে প্রকৃতপক্ষেই নাগরিকদের সেবার ভবন, সেবকের ভবন রুপে দেখা মিলবে, ইনশাআল্লাহ।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অপরাপর বাকি মেয়র প্রার্থীদের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই যে, নৌকা মার্কার প্রার্থী ১৮ বৎসর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের মেয়র পদে দায়িত্বে আছেন। কিন্তু বিগত ১৮ বছরে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি। অপরাপর সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী হওয়ায় শুরু থেকেই রাষ্ট্রযন্ত্র তার পক্ষেই কাজ করছেন এবং তিনি নিজেও শুরু থেকেই সেই সুবিধা নিয়ে একের পর এক আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। শুধু তাই নয়, পদত্যাগী হওয়া সত্বেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মারীদের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণকারীও তিনি। তার সরকারী দেহরক্ষী, পিএস, গার্বেজ ট্রাক, কর্মচারীরা তার প্রচারনায় অংশ নিয়ে সেটিও প্রমাণ করছেন। এছাড়াও নাসিকের ঠিকাদার কন্ডাক্টরগনই প্রতিটি ওয়ার্ডে নৌকা মার্কায় নির্বাচন পরিচালনা করছেন।
প্রচারনায় নেমে হাজার হাজার নগরবাসীর মাঝে আমি যে ক্ষোভ ও কাংখিত সেবা না পাওয়ার যন্ত্রনা অবলোকন করছি, হাজার হাজার নগরবাসীর মাঝে যেসকল প্রশ্ন শুনে উত্তরহীন হয়ে পড়েছি, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি লাখ লাখ নগরবাসীর পক্ষে সে সকল প্রশ্নের অতি স্বল্প সংখ্যক প্রশ্ন আপনাদের মাধ্যমেই আজ রাখতে যাচ্ছি। সিটি কর্পোরেশনের একজন বাসিন্দা হিসেবে, একজন করদাতা হিসেবে এসব প্রশ্নের উত্তর আমিও জানতে চাই। বিলুপ্ত পৌরসভা থেকে বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের দেড় যুগে, উন্নয়ন নামের নাগরিক সুবিধার যে ভেলকিবাজি আর শুভাঙ্করের ফাঁকি দেয়া হচ্ছে, আমিও একজন নাগরিক হিসেবে আজ সেই হিসাব কষতে চাই। কি করে একজন মানুষ সততার বুলি আওড়ানোর পর রাজপ্রাসাদ গড়ে তুলতে পারেন, আর কি করে জনগনের অধিকারকে সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি করতে পারেন?
সম্মানিত নগরবাসী ও গণমাধ্যমের বন্ধুরা,
আজকের এই সংবাদ সম্মেলনটি আমার জন্য অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছিল। কারণ আপনারাই স্বাক্ষী আছেন সরকারদলীয় প্রার্থী একের পর এক আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র শো-কজ করার নামে আইওয়াশ করেছে। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনায় এসে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে গেছেন, তৈমূরকে রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না। একদিকে সরকারদলীয় প্রার্থী ও তার দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বুলি আওড়াচ্ছেন, অপরদিকে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে আমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় কর্মী সমর্থকদের পরোক্ষভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া সহ পোষ্টার ছিড়ে ফেলার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সরকারী দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে গোয়েন্দা রিপোর্টের ফলাফল বলে সম্মানীত ভোটারদের অসত্য তথ্য দিচ্ছেন, যা কোন স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে হলে ঐ নেতাকে আইনের সম্মুখিন হতে হতো। সরকারীদলের মূখপাত্ররা ও সাধারণ সম্পাদক অবলিলায় বলে দিচ্ছেন তাদের প্রার্থী জয়ী হবে, যে কোন মূল্যে জয়ী করা হবে। এমনকি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর রেফারেন্স দিয়ে স্থানীয় পত্র পত্রিকায় বলা হচ্ছে নৌকা লক্ষাধিক ভোটে জিতবে। যা পক্ষান্তরে নির্বাচন কমিশন ও জনগনকে প্রভাবিত করার শামিল। আমি বিশ্বাস করতে চাই মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এ ধরণের কথা বলেননি। তার নামে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। প্রধান মন্ত্রী ২০১৮ সালেই বলেছেন তৈমুর বিজয়ী হওয়ার মত প্রার্থী। তদুপরি গত ৮ই জানুয়ারী শনিবার সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী আমাকে নিয়ে তার নিজদলের একজন এমপি ও জাতীয় পার্টির একজন এমপিকে জড়িয়ে যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করেছেন সে ব্যাপারে কিছু না বললেই নয়। তাই সঙ্গত কারণেই আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি যারা ভোটের মালিক সেই নারায়ণগঞ্জবাসী ও জাতির দর্পণ গণমাধ্যমের স্বরনাপন্ন হয়েছি।
সম্মানিত নগরবাসী ও গণমাধ্যমের বন্ধুরা,
সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী বারংবার আমার বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে আখ্যা দিচ্ছেন। অথচ আমিও প্রতিবারই বলছি আমার বক্তব্য সাধারণ মানুষেরই বক্তব্য। সরকারদলীয় প্রার্থীর অবস্থান এতটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে, হাতি মার্কা আজ জনতার মার্কা হয়ে গেছে। সরকারদলীয় প্রার্থীর পায়ের নিচে মাটি এতটাই সরে গেছে যে, পুলিশ প্রশাসনের লোকদিয়ে ভয়ভীতি আর জোর করে সরকারদলীয় নেতাদের মাঠে নামাতে হচ্ছে। আমার দল সহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী সম্প্রতি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা জনতার মার্কা হাতি মার্কার পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছেন এবং যারা সরকারী মার্কার পক্ষে নির্বাচন করছে না, গতরাত থেকেই তাদের বাড়ীতে ট্রাক ভর্তি করে পুলিশ পাঠিয়ে সরকারী মার্কার পক্ষে নির্বাচন করার জন্য অযাচিতভাবে হুমকি ও হয়রানী প্রদান করা হচ্ছে। আমার নির্বাচনী পথসভায় অংশগ্রহণ করায় ধামঘর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জনাব কামাল হোসেনের বাসভবনে হয়রানীমূলক তল্লাসী করা সহ তার কর্মচারীকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। অনুরূপভাবে ২৭টি ওয়ার্ডে আমার সমর্থক ও নির্বাচন পরিচালনায় নেতৃবৃন্দকে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের দ্বারা হয়রানী করা হচ্ছে। যা সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রধান অন্তরায়।
একটি সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের প্রতি সেই কর্পোরেশনের প্রধান দায়িত্ব হলো সবুজায়ন, যানজট মুক্ত শহর, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বান্ধব একটি পরিচ্ছন্ন নগর উপহার দেয়া। যেখানে কোন ময়লা আবর্জনার ভাগাড় থাকবে না, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে জলাবদ্ধতা থাকবে না, মশা-মাছির উপদ্রবে জীবন অতিষ্ট হবে না। পাশাপাশি নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে, অনুন্নত তথা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষার প্রসারে কাজ করবে এবং সর্বোপরি নাগরিকদের চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া ইভটিজিং, কিশোরগ্যাং, মাদকমুক্ত সমাজ বা ওয়ার্ড গঠনেও সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা অবশ্যই থাকতে হবে, কারণ জনপ্রতিনিধিদের জন্য মাদকমুক্ত এলাকা গড়াও একটি প্রধান কাজ। লাখ লাখ নগরবাসীর মত আমার প্রশ্ন, এই নাগরিক সুবিধার কোনটি গত ১৮ বছরে পূর্ণতা পেয়েছে? কেনই বা দেড় যুগের এই ব্যর্থতার পরেও নগরবাসী তাকে বিশ্বাস করবে?
সম্মানিত নগরবাসী ও গণমাধ্যমের বন্ধুরা,
আপনারা জানেন, শত শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নগর এই নারায়ণগঞ্জ। অথচ সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মসজিদ ও মন্দিরের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, ওয়াকফাকৃত সম্পত্তি বা দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর যোগ্য নয়। সেখানে শত বছরের প্রাচীন দেওভোগ লক্ষী নারায়ণ মন্দিরের সম্পত্তি কি করে বিক্রি হতে পারে? এই অভিযোগ ও আশঙ্কা খোদ এই শহরের হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে সরকারী দলের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন। একই সাথে প্রায় সাড়ে ৫শ বছরের প্রাচীন মোঘলীয় মসজিদ তথা জিমখানা মসজিদের জায়গাও তিনি দখল করেছেন বলে, ঐ মসজিদ কমিটি ও ওয়াকফ এস্টেটের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে বহু নিরীক্ষন ও আইনী পর্যালোচনা করে দেখেছি, সেই মসজিদ ও ওয়াকফ এস্টেটের অভিযোগটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক। কথা দিচ্ছি, এই প্রাচীন মসজিদ ও মন্দিরের দখল হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে ইনশাল্লাহ। শুধু তাই নয়, অর্ধশত বছর ধরে রেলওয়ে কলোনীতে বসবাসকারী প্রায় অর্ধশত পরিবারসহ জিমখানা বস্তির প্রায় ৫ হাজার মানুষের মাথার ছাদ কেড়ে নিয়েছেন। সরকারী জমির সাথে সেখানে রেলওয়ে থেকে ক্রয়কৃত ব্যক্তিগত জমিও তিনি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পূর্ণবাসন না করে একদিকে যেমন ছিন্নমূল মানুষকে গৃহহীন করা হয়েছে, পার্কের নামে ঠিকাদার সিন্ডিকেটকে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, তেমনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল ট্রেন লাইন প্রজেক্টকেও হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। কারণ ডাবল রেললাইন প্রজেক্টের পরিকল্পনায় জিমখানার ঐ জায়গাটি সেন্ট্রাল রেল গ্যারেজ হওয়ার কথা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
সম্মানিত নগরবাসী ও গণমাধ্যমের বন্ধুরা,
উচ্চ আদালতে মামলা, নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা সত্বেও ঐতিহ্যবাহী রহমত উল্লাহ মুসলিম ইনষ্টিটিউট ভবনটি দিবালোকে বিনা নোটিশে ভেঙ্গে দিয়েছেন। শতাধিক ব্যবসায়ী আজ পথে পথে জীবিকার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ ফুটপাত দখল করে পাঠাগার বিল্ডিং বানিয়েছেন। যা গণমাধ্যমের সাহসী বন্ধুরা তুলে ধরেছেন দেশবাসীর কাছে। সিদ্ধিরগঞ্জ লেক উন্নয়নের নামে পুরো সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অন্ধকারের অতল গহবরে নিমজ্জিত করা হয়েছে। দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে লেকের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছেন অথচ পুরো লেকটি সড়ক ও জনপদের নিজস্ব জায়গা। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এমআরটি (মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয় জানিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) নাসিক’কে একাধিকবার অনুরোধপত্র দিলেও দখলদারিত্ব বজায় রাখা হয়েছে। ফলে এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্পসহ এমআরটি প্রকল্পের রুট হিসাবে সেখানে সড়ক প্রশস্ত করণের পথটি স্থানীয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে সিদ্ধিরগঞ্জ-আদমজী পুরাতন সড়কটি ভবিষ্যতে আর কোন হাইওয়ে এক্সপ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না যা সিদ্ধিরগঞ্জবাসীকে চিরতরে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বি ত করছে। ভবিষ্যতে যদি এমআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে এই লেকের উপর তৈরী অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হয়, তবে জনগণের এই দেড়শ কোটি টাকার গচ্চা কে দিবে? আবার ট্যাক্স বাড়িয়ে জনগন থেকে এই ১৫০কোটি টাকার লোকসান উঠানোর পায়তারা করছেন আপনারা।
বাংলাদেশের রাজনীতি আওয়ামী লীগ ও বি.এন.পি দু’টি ধারায় বিভক্ত হলেও আমি সর্বঅবস্থায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে দেখি এবং তাদের নিয়ে মন্তব্য করার বিষয়ে অত্যন্ত সর্তক থাকি। একজন মেয়রকে অত্যান্ত দায়িত্বশীলতার সাথে কথা বলতে হয়, নতুবা এর প্রভাব নগরবাসীর উপর পরে। ২০১৩ সালে ২২শে আগস্ট মেয়র আইভী বলেছেন, “দুই নেত্রী দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।” ২০১৩ সালের ২রা মে তিনি বলেছেন, “বর্তমান সরকার নারায়ণগঞ্জে খুনীদের পৃষ্ঠপোষক।” ২০১৩ সালে ১লা সেপ্টেম্বর বলেছেন, “রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গডফাদাররা খুন করে বেড়াচ্ছে।” ২০১৪ সালে ১৩ই জুন দৈনিক প্রথম আলোর গোল টেবিল বৈঠকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ, বি.এন.পি মনে করে ৬৪ জেলায় ৬৪ জন গডফাদার থাকলেই তাদের কাজ হয়ে যাবে।” ২০১৯ সালে ৬ই মার্চ জিমখানা বিনোদন পার্কে আপনি বলেছিলেন, “সাগর-রুনির ব্যাপারে আমরা অনেকেই জানি, অনেক কিছু জড়িত। তনু হত্যার বিচার কেন হচ্ছেনা সেটাও কমবেশী মানুষ বুঝতে পারে যে কারা জড়িত।” যদি উক্ত হত্যা কান্ড সম্পর্কে জানা থাকে অবশ্যই তা জনসম্মূখে প্রকাশ করলে জনগণ অবশ্যই আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দয়ায় ২০১১সালে আপনি মেয়র হয়েছেন। আপনার মতে যে দল গডফাদার, খুনী লালনপালন করে, যে দলের নেত্রী দেশ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় সেই দল আপনি করেন কেন? আপনি তো সেই দলের মনোনীত প্রার্থী। সেই দলের মার্কা নিয়েই তো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এবং এখনো নির্বাচন করছেন। আমার পরিবার সন্ত্রাসের শিকার। উল্লেখ্য, একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসাবে সন্ত্রাস প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আমার ভাই সাব্বির আলম খন্দকার খুন হয়। কিন্তু অদ্যবদি বিচার পাই নাই। আমার ভাই হত্যা সহ সকল হত্যার আমি বিচার চাই।
সম্মানিত নগরবাসী ও গণমাধ্যমের বন্ধুরা,
করোনা মহামারীকালে শুধু জনপ্রতিনিধি, বিত্তবান বা রাজনৈতিক নেতারাই নন, আপনারা প্রতিটি গণমাধ্যম কর্মীরাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে জীবনের ঝুকি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িঁয়ে ছিলেন। অনেকে নিজ পেশা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে এবং মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। কিন্তু আজ যিনি মানুষের কল্যাণের কথা বলছেন সেই সরকারদলীয় প্রার্থী ও তৎকালীন সিটি মেয়র কোথায় ছিলেন? যেখানে করোনায় প্রায় ২ বছরে পুরো দেশ বিপর্যস্থ, সরকারের বহু প্রতিষ্ঠান কর মওকুফ করে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছিল, বাড়ীওয়ালারা ভাড়াটিয়ার ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছে সেখানে আপনি সারা দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের চেয়ে বেশী ট্যাক্সের বোঝা মানুষের কাধে চাপিয়ে দিয়েছেন। আপনি প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার বাজেট ঘোষনা করেন অথচ করোনাকালে আপনি একজন চিকিৎসক হয়ে না দাড়িয়েছেন মানুষের পাশে, না সিটি কর্পোরেশনের তহবিল থেকে মানুষের সাহায্য করেছেন। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আসা ত্রাণ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া হয়েছিল, সেগুলোই আপনি বন্টন করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত একজন গিটারিস্ট হিরুর লাশ প্রায় ১০ ঘন্টা রাস্তায় পরেছিল, আপনার বাড়ী থেকে মাত্র ৩ মিনিটের দূরত্বে, আপনি জাননি। উল্টো ত্রাণ চেয়ে কেউ ফোন করলে তাদের সাথে চরম অপমান অপদস্থ হয়েছে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে। একথা বলাই বাহুল্য যে, পৌরসভা আমল থেকে সিটি কর্পোরেশনের এই ১৮ বছরে ঠিকাদার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে। মাত্র ৩/৪ জন ঠিকাদার গত ১০ বছরে কতশত কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ পেয়েছেন ও করেছেন সেই সঠিক তথ্য নিতে আমি গণমাধ্যমের কর্মীদের কাছেই অনুরোধ রাখলাম। আমাদের জানা তথ্য অনুযায়ী এই সিন্ডিকেট গত ১০ বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার টেন্ডার পেয়েছে। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, খোদ মেয়র থাকা অবস্থায় আইভীর বাড়ীর পাশে দেয়াল চাপায় শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা, বন্দরে শিশু আহত হয়ে চিরপঙ্গুত্ব বরণ করার ঘটনা, বন্দরেই অপর ঘটনায় দেয়াল চাপায় শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে আজ অবধি কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কোন ঠিকাদারের বিরুদ্ধেই। উল্টো আপনার কাউন্সিলররা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্বার্থে জেলে গেলে/বিপদে পড়লে আপনি নুন্যতম সহানুভতি দেখান না, সেই কাউন্সিলরের পরিবারকে শান্তনা দেন না, অথচ ঠিকাদার এরেস্ট হলে আপনি থানায় গিয়ে রাতভর বসে থাকেন কেন, কি স্বার্থে? এরচেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে আপনি জনগণের মেয়র, না ঠিকাদারের মেয়র- এটাই এখন জনমনে প্রশ্ন।
আমি দ্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশন, ১৮ বছরে একটা ডাস্টবিন বানাতে পারেননি আপনি। বন্দর, শহর ও সিদ্ধিরগঞ্জের ড্রেনেজ জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারেননি, মশার যন্ত্রনায় নগরবাসী নিজেদের ভাগ্যকেই অভিশাপ দিচ্ছে। একটি সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের প্রধান মৌলিক অধিকার হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলা। যেখানে ময়লা আবর্জনার ভাগার থাকবে না, জলাবদ্ধতা থাকবে না, মশা-মাছির উপদ্রব থাকবে না। অথচ পৌর আমল থেকে সিটি কর্পোরেশনের ১৮ বছর ক্ষমতাকালে নারায়ণগঞ্জের ময়লা ব্যবস্থাপনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন আপনি। দেশের একমাত্র ডাস্টবিনহীন শহর এই নারায়ণগঞ্জ। বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও শহর, এই ৩ এলাকায় ২৭টি ওয়ার্ডে ময়লার ভাগার ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় এখন ময়লার স্তুপ। প বটিতে বিশাল ডাম্পিং জায়গা থাকতেও সেখানে পার্ক বানিয়ে বাণিজ্য করেছেন। সেখানে ময়লা থেকে সার, প্লাস্টিক থেকে তেল বানানোর যাদু দেখিয়ে জনগণের কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছেন। আবার এখন সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা দিয়ে জালকুড়িতে গার্বেজ ডাম্পিং প্ল্যান্ট বানানোর কথা বলে ধোকা দিচ্ছেন, যা সাধারণ মানুষই বলছে। সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার সেই টেন্ডারের ৩০০ কোটি টাকাই চলে গেছে জমি একোয়ার নামের গোলকধাধায়। এখন শুনছি বিদেশী কোম্পানী আসবে আর সেখানে মূল প্ল্যান্ট স্থাপন করবে যা কত বছরে শেষ হবে সেটা আল্লাহই জানেন। আমি মনে করি সেই সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট শুধুই শুভাঙ্করের ফাঁকি। শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেষে গড়ে উঠা এই শহরে এখনও ৫ মিনিটের বৃষ্টিতে বন্যা হয়ে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার নামে জনগণের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছেন, শহরের আর বন্দরের প্রায় অর্ধশত খালগুলোকে ভরাট করে জলাশয় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ১০ বছরের সিটি কর্পোরেশনে এখনও ২৭টি ওয়ার্ডে বর্ষা মৌসুমে মানুষ জলাবদ্ধতায় ভোগে। প্রতি বছর বাজেটে মশা মারতে আপনি জনগণের কোটি কোটি টাকা দিয়ে কামান কিনেন। কিন্তু এরপরও কাউন্সিলরদের নিজেদের টাকায় মশা মারার যন্ত্রপাতি কিনতে হয়। আর আমরা মশা মাছির যন্ত্রনায় নিজেদের ভাগ্যকে অভিসপ্ত করি। নারায়ণগঞ্জ শহর এখন যানজটের নগরী। যানজটের কথা উঠলেই আপনি বলেন সেটা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের কাজ। যানজট নিরসন আপনার কাজ না। অথচ শত শত কোটি টাকায় ফ্ল্যাট আর দোকান বানিয়ে বানিজ্য না করে কিছু টাকা দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী বা কমিউনিটি পুলিশ রাখলে শহরকে যানজট মুক্ত করা যেত। আপনার মীরজুমলা সড়ক এখনও কাঁচামাল ব্যবসার মোকামে পরিণত হয়ে আছে। ভোর থেকে সকাল অবধি সেখানে যানচলাচল তো দূরে থাক, মানুষ চলাচলই দ্বায়। শোনা যায় আপনার নিজস্ব লোকজনের তোলাবাজির কারণে সেই মীরজুমলা সড়ক এখনও নগরবাসীর যানজটের কারণ। হাজার হাজার হকারের পেটে লাথি না দিয়ে তাদেরকে পুনর্বাসন করা যেত। আমি মনে করি সিটি কর্পোরেশনকে আপনি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করা হয়েছে।
সম্মানিত নগরবাসী ও গণমাধ্যমের বন্ধুরা,
আমি যা বলেছি তার সঠিক ও স্পষ্ট প্রমাণ হাতে নিয়েই বলেছি। আমি তর্কের খাতিরে তর্ক নয়, কোন নির্বাচনী উদ্দেশ্যে নয়, বরং নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রাণে অন্তরে যে ক্ষোভ আর পুঞ্জিভুত বেদনা ছটফট করছে সেই যন্ত্রনার কিছুটা প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করলাম মাত্র। প্রয়োজনে আমার তথা নগরবাসীর এসব প্রশ্ন আর সমালোচনার যুক্তি খন্ডন করতে আমি সরাসরি সরকারদলীয় প্রার্থীর মুখোমুখি বলতে চাই। নগরবাসীর সামনেই বসতে চাই, জবাবদিহিতার সুযোগ দিতে চাই। শুধু চাই যে স্বপ্ন লালন করেছি এতকাল, একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন নগর উপহারের, সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিতে চাই। আপনাদের সহযোগীতা চাই, হাতি মার্কায় আপনাদের ভোট ও দোয়া চাই। আর দোয়া চাই যেন জনগণের সেবা করে পরম করুনাময় আল্লাহ্পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। পরিশেষে আমি সরকার দরীয় মেয়র প্রার্থী যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বাহির্ভূত মন্তব্য করেছেন, সে ব্যাপারে আমার স্পষ্ট মন্তব্য হলো সরকারদলী নেতাদের এই বিভেদ-বিভাজনই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। শামীম ওসমান সরকারদলীয় এমপি আর সেলিম ওসমান সরকারীদলের জোটবদ্ধ জাতীয় পার্টির এমপি। আমি তৈমুর আলম খন্দকার প্রথম দিন থেকেই বলছি শামীম ওসমানের পায়ে তৈমুর আলম খন্দকার হাটেনা। গত ৫০বছর ধরে মাটি ও মানুষের সাথে রাজনীতি করতে করতে তৈমুর আলম খন্দকারের ভিত্তি এতটাই শক্ত অবস্থান হয়েছে যে, কোন শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমানের হয়ে আমাকে নির্বাচনে অভিনয়ে নামতে হবে না, ইনশাআল্লাহ।
আর আমার শ্রদ্ধার আমার পরম পাওয়া আমার জনতার উদ্দেশ্যে অনুরোধ করে বলতে চাই, আমার কোটি কোটি কালো টাকা নেই, কোন ঠিকাদার সিন্ডিকেটও নেই। আমি সর্বদা আপনাদের সামনে খোলা বইয়ের মতই। আমি সর্ব সময়েই অত্যাচার, অবিচার, শোষক, নির্যাতন, সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে ছিলাম, এখনো আছি। আমার পি. এইচ. ডি. করার বিষয় ”রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস”। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমি বার বার কথা বলেছি, প্রতিবাদ করেছি, যা আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন। আল্লাহ পাকের রহমতে আমার দুই মেয়েকে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। শুধু জনগনের সেবায় নারায়ণগঞ্জবাসীর সেবায় নিজের সকল জ্ঞান অর্জন ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই। তাদের জীবন যাপনের মান উন্নয়নে সহযোগী হতে চাই। যে সকল সাংবাদিক নাসিক পরিচালনায় মেয়রের ব্যর্থতা পত্রিকায় তুলে ধরেছে তাদের অনেককেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় পড়েছেন এবং কারাগারে যেতে হয়েছে। সত্যের প্রয়োজনে কথাগুলি বল্লাম। নগরবাসী বিবেচনা করে দেখবেন। বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান থাকাকালীন প্রত্যেকটি বাসের পিছনে আমার ফোন নম্বার দিয়ে দিয়েছিলাম, যাতে সেবা গ্রহণকারীরা তাদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। আমি ওয়াদা করে বলতে পারি আপনারা আমাকে হাতি মার্কায় ভোট দিয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত করলে, পূর্বের ন্যায় আমার নাম্বারটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং প্রত্যেক নারায়ণগঞ্জবাসীর মোবাইলে আমার নাম্বার সেভ করা থাকবে, যাতে করে আপনাদের যেকোন প্রয়োজনে আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন এবং আমি আপনাদের দোড়গোড়ায় প্রয়োজনীয় সেবা পৌছে দিতে পারি। এমনকি আমার সাথে সাক্ষাত করতে কোন পিএ/পিএসের অনুমতির প্রয়োজন পড়বেনা। সর্বোপরি আমি নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সুষম উন্নয়ন করতে চাই।
ইভিএম মেশিনে আপনারা হাতি মার্কা প্রতীকটি ভালভাবে দেখে প্রথমে সাদা বোতামে চাপ দিয়ে দ্বিতীয়বার সবুজ বোতামে চাপ দিয়ে কনফার্ম করবেন।
এবারের নির্বাচন হচ্ছে ভূক্তভোগী জনগন বনাম নাসিকের বিরুদ্ধে ১৮বছরে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। হাতি মার্কায় মেয়র পদে আপনাদের দোয়া, ভোট ও সমর্থন কামনা করি। মহান করুনাময় আল্লাহ আমাদের সহায় হউন এবং সকল সৃষ্টির উপর রহমত নাজিল করুন।
শেষে তিনি সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরাম, বন্দর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, বন্দর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী নুরুদ্দিন, বিএনপির প্রবীণ নেতা জামাল উদ্দিন কালু, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, জেলা বিএনপির সদস্য কাজী নজরুল ইসলাম টিটু, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল ইসলাম, মহানগর ওলামাদলের সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ওলামাদলের সভাপতি হাফেজ মো. মানুন সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: