আইসিজিতে মামলা

ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আজ ঐতিহাসিক শুনানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১০:২৫

ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আজ ঐতিহাসিক শুনানি

ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের ৫৭ বছরের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে সোমবার ঐতিহাসিক শুনানি শুরু হচ্ছে। ইহুদিবাদী দেশটির আগ্রাসনের মধ্যেই এ আদালতের ১৫ বিচারকের সিদ্ধান্ত সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। খবর এপি'র।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) টানা ছয় দিন শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে নজিরবিহীন সংখ্যক দেশ অংশগ্রহণ করবে। যদিও মামলাটি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পটভূমিতে করা হয়েছে। তবে এটি পশ্চিম তীর, গাজা এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের উন্মুক্ত দখলদারিত্বের ওপর আলো ফেলবে।

ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিরা আজ প্রথমে কথা বলবেন। তারা যুক্তি দেবেন, ইসরায়েলি দখল অবৈধ। কারণ, এটি আন্তর্জাতিক আইনের তিনটি মূলনীতি লঙ্ঘন করেছে। ফিলিস্তিনি আইনি দল বুধবার সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছে।

তারা জানান, ফিলিস্তিনিদের ভূমির বিশাল অংশ দখল করে ইসরায়েল তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং জাতিগত বৈষম্য ও বর্ণবাদী ব্যবস্থা আরোপ করেছে। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘের সংস্থা বিভাগের প্রধান ওমর আওয়াদাল্লাহ বলেছেন, আমরা আদালত থেকে নতুন কিছু শুনতে চাই। আমরা চাই, আদালত বর্ণবাদের বিষয়টি বিবেচনা করুক। আওয়াদাল্লাহ বলেছেন, আদালতের পরামর্শমূলক মতামতও শান্তিপূর্ণ আন্তর্জাতিক আইনের ব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারিত্ব মোকাবিলা করতে আমাদের বড় হাতিয়ার হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তা ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেছেন, দশকের পর দশকের অন্যায় শেষ পর্যন্ত তদন্তের মুখোমুখি হবে।

আদালতের রায় পেতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও আন্তর্জাতিক আইন শাস্ত্র, ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং জনমতকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

ইসরায়েলের হিব্রু ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক এবং ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ইউভাল শ্যানি বলেছেন, চলমান যুদ্ধ এবং অত্যন্ত মেরূকৃত আন্তর্জাতিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি সম্ভবত ইসরায়েলের জন্য অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর হতে চলেছে।

শুনানির সময় ইসরায়েলের কথা বলার জন্য নির্ধারিত সময় নেই। তবে দেশটি লিখিত বিবৃতি জমা দিতে পারে। ফিলিস্তিন ও নেতৃস্থানীয় অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এখন আর প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি একটি বর্ণবাদী ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে। দখলকৃত জমিতে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে এটি শক্তিশালী হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ইহুদি আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এমনটা করা হয়েছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশাল ভোটের ব্যবধানে একটি প্রস্তাব পাস হয়। এতে উপদেশমূলক মতামত দেওয়া জন্য বিশ্ব আদালতকে অনুরোধ করা হয়। ফিলিস্তিনিদের এ প্রস্তাবে ইসরায়েল তীব্র বিরোধিতা করে। ৫০টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।

ফিলিস্তিনিদের যুক্তি উপস্থাপনের পর ৫১টি দেশ এবং তিনটি সংস্থা (লিগ অব আরব স্টেটস, ইসলামী সম্মেলন সংস্থা এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন) কাঠের প্যানেলযুক্ত গ্রেট হল অব জাস্টিসে বিচারক প্যানেলের উদ্দেশে ভাষণ দেবে।

১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা উপত্যকা দখল করে। ফিলিস্তিনিরা তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য তিনটি এলাকাই ফেরত চায়। এ জন্য তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিতেও দ্বিধা করেন না।

পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা পিস নাউর হিসাবে, ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ১৪৬টি বসতি তৈরি করেছে এবং এতে ৫ লাখের বেশি ইহুদি বাস করে। পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের জনসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ১৫ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসরায়েলও পূর্ব জেরুজালেমকে সংযুক্ত করেছে এবং পুরো শহরটিকে তার রাজধানী বলে মনে করে। এ শহরের ফিলিস্তিনের বাসিন্দারা পদ্ধতিগত বৈষম্যের সম্মুখীন হযন। যার ফলে তাদের জন্য নতুন বাড়ি তৈরি করা বা বিদ্যমান বাড়ি সম্প্রসারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলি বসতিগুলোকে অবৈধ বলে মনে করে। শহরটির সবচেয়ে সংবেদনশীল পবিত্র স্থানগুলোর আবাসস্থল পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের অধিগ্রহণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়।

২০০৪ সালে আইসিজে বলেছিলেন, পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরের কিছু অংশে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। এটি অবিলম্বে নির্মাণ বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানালেও দেশটি এ রায় উপেক্ষা করে চলেছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: