ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কারের দাবিতে এফবিজেও’র মানববন্ধন

সময় ট্রিবিউন | ২৫ অক্টোবর ২০২২, ০৪:২৬

সংগৃহীত

সাংবাদিকদের বৃহত্তর ঐক্যই আমাদের লক্ষ্য তথ্য সুরক্ষা আইন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জেল ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার কালো ও দমন পীড়ন আইন বাতিল, প্রশাসন এর কালো থাবা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানবনন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে জাতীয় প্রেসক্লাব এর পরিবর্তে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের অধিকার মর্যাদা রক্ষায় রাষ্টের ৪র্থ স্তম্ভ হিসাবে প্রেস কাউন্সিল আইন তৈরী করে গেছেন। সাংবাদিকদের বৃহত্তর ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিষ্ট অর্গানাইজেশন’২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী থেকে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষে কাজ করে চলছে। সাংবাদিকরাই রাষ্ট্রের ১ম সারির যোদ্ধা। প্রতিনিয়ত জীবন বাজি রেখে সকল অপরাধের বিরুদ্ধে কলম চালিয়ে যাচ্ছে। 

২০০৫ সালে প্রেস কাউন্সিল প্রস্তাবিত যা তথ্য ও সম্পচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে সর্বসাধারণের মতামতের জন্য প্রকাশ করা হয়। ৯/১/২০২০ ইং তারিখে তথ্য সচিবের সভাপতিত্বে তথ্য মন্ত্রণালয় চুড়ান্ত করা হয়। সর্বশেষ ২০ জুন ২০২২ ইং মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে নীতিগতভাবে )দি প্রেস কাউন্সিল এমান্ডম্যান্ট এক্ট ২০২২) অনুমোদন হয়। বর্তমানে কালো আইনটি সরকারের কাছে প্রক্রীয়াধীন রয়েছে। 

এই কালো আইনে সাংবাদিকদের ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা ও জেল প্রদানের বিষয়টি রাখা হয়েছে। এই আইন আরও যাচাই বাছাই করার জন্য তড়িঘড়ি করে পাশ না করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। বিদ্যমান আইনেই প্রেস কাউন্সিলে সাংবাদিকেদের যে বিচার ব্যবস্থা রয়েছে তা আমরা যথেষ্ট বলে মনে করি। অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করার জন্য ১০ লক্ষ টাকা জরিমান ও জেল প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কালো আইনে। এই আইন পাশ হলে গণমাধ্যম কর্মীদের লেখা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরা কঠিন হতে কঠিনতর হয়ে ওঠবে। এতে করে দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতির পথকে সুগম করে দেওয়া হচ্ছে। 

সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা, পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে মুক্ত গণমাধ্যমের বৈশ্বিক দাবি বাস্তবায়নে সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করতে হবে। গোটা বিশ্ব বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করতে বলছে। সরকারও এই আইন সংস্কার করবেন বলছেন কিন্তু দীর্ঘ দিনেও আইনটি সংস্কার করা হচ্ছে না। বর্তমানে চলমান মামলাগুলো প্রেস কাউন্সিলে হস্তান্তর সহ যে কোন মামলা দেশের যে কোন এলাকায় হয়ে থাকুক না কেন তা শুধুমাত্র প্রেস কাউন্সিলে করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের অনুমোতি ব্যতিত কোন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। 

সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশের কোন থানায় বা আদালতে মামলা করতে পারবে না, শুধুমাত্র প্রেস কাউন্সিলে করতে পারবে। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি প্রথমে সম্পাদক বরাবর প্রতিবাদ পাঠাবে। সম্পাদক তা আমলে নিয়ে প্রতিবাদ প্রকাশ করবে। তাতেও যদি প্রতিবাদের ভাষা বা আকার প্রকারে আপত্তি থাকে তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রেস কাউন্সিলেই এ মামলা করতে পারবে। প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রে যে আইন বিদ্যমান রয়েছে সেভাবেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা নিস্পত্তি করতে হবে। 

সাংবাদিকদের কলমকে নিরুৎসাহিত ও এই পেশাকে ঝুঁকিপূর্ণ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি সাংবাদিকদের জেল ও ১০ লক্ষ টাকার অর্থিক দন্ড সংক্রান্ত প্রেস কাউন্সিল অ্যক্ট পাশ হতে যাচ্ছে। এর ধারাবহিকতায় আবার তথ্য সুরক্ষা আইন পাশ হতে যাচ্ছে যা গোটা গণমাধ্যমের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ এর মতো। এই কালো আইনের মূল বিষয় হচ্ছে ২৯ টি সরকারী প্রতিষ্টানের তথ্য সংগ্রহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। তথ্য সংগ্রহের জন্য এসব প্রতিষ্টানে প্রবেশ করলে গ্রেপ্তার, জেল ও নানাবিধ হয়রানির শিকার হতে হবে। যেখানে ‘তথ্য পেলে মুক্তি মেলে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ তৈরি হয়েছে ও তা চলমান রয়েছে সেখানে তথ্য সুরক্ষা আইন তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে যা মোটেই কাম্য নয়। এভাবে গণমাধ্যকর্মীরা না পারবে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে না পারবে মুক্ত সাংবাদিকতা করতে। অর্থাৎ সাংবাদিকতা পেশার ওপর কুঠারাঘাত করা হচ্ছে যার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 

সাংবাদিকদের পেশাগত কাজের নিরাপত্তায় প্রেস কাউন্সিল আইন যুগোপযোগি ও শক্তিশালী করে দেশের অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে প্রেস কাউন্সিলের অধীনে নিবন্ধন করতে হবে। একটি উপজেলায় একটি সংগঠনের মাধ্যমে সকল সাংবাদিকের অধিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি মাত্র কেন্দ্রীয় সংগঠনের মাধ্যমেই এর বাস্তবায়ন আইন প্রনয়ন করতে হবে। 

কল্যাণ ট্রাস্টের কালো আইন বাতিল করে দেশের সকল সাংবাদিককে এর সদস্য করে এর সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।

জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার চেয়ারম্যান লায়ন মোঃ নুর ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লায়ন নুর ইসলাম চেয়ারম্যান, মোঃ ফারুক হোসেন মহাসচিব জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সহ-সভাপতি আনারুল হক, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার মজুমদার সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান দিপু, রাজশাহী বিভাগের সভাপতি জনাব নুরে ইসলাম মিলন, সহ সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন বাবু, দপ্তর সম্পাদক সুরুজ আলী প্রমূখ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: