রাজধানীর ডেমরায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অভ্যন্তরীণ ও প্রধান সড়কেই আবর্জনার ভাগাড় তৈরী করা হয়েছে। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় আবর্জনা অপসারণের কতিপয় অসাধু সিন্ডিকেট সড়কের ওপরেই দেদারসে গৃহস্থালী ও পলিথিনসহ সব ধরনের বর্জ্য ফেলে ভাগাড় সৃষ্টি করেছে। এতে চারপাশে বায়ু দূষণ বেড়ে যাওয়ায় রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
এদিকে সড়কে চলাচলকারী ও আশপাশের অধিবাসীদের নাভিশ্বাস বাড়ার পাশাপাশি মারাত্মক কষ্টে রয়েছেন অধিবাসীরা। আবর্জনার পানিতে সড়ক পিচ্ছিল থাকে সারাবছর। এতে সড়কে নানা দুর্ঘটনাসহ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পথচারীসহ এলাকার মানুষ।
অন্যদিকে সুষ্ঠ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই। স্থানীয় কাউন্সিলরদের উদাসীনতায় সড়কে ভাগাড় সৃষ্টি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ময়লার টেন্ডার নিয়ে তারা সটকে রয়েছেন। শত অভিযোগ করে ও সুরাহা নেই তাদের।
তবে ডিএসসিসির বর্জ্য অপসারণ কর্তৃপক্ষ বলছেন দিনে দিনে ওয়ার্ড এলাকায় ফ্ল্যাটবাসাসহ ঘনবসতি বেড়ে যাওয়ায় আবর্জনার পরিমান বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু সে অনুযায়ী অপসারণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে ফেলুডার সার্ভিস বাড়াতে পারলে সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। তাছাড়া ময়লা অপসারণ যানবাহনের সমস্যা লেগেই আছে। আর ফেলুডারসহ যানবাহন সার্ভিস বাড়লেই ওয়ার্ডগুলোর বর্জ্য সড়কে জমে থাকবেনা। ডেমরা থানা এলাকায় প্রতিনিয়ত অন্তত ১৬০ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডিএসসিসির ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে ডেমরা-রামপুরা সড়কের পাশেই নির্বিচারে গৃহস্থালিসহ সব ধরনের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এখানে ডিএসসিসির ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্যও ফেলে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এদিকে ৬৬ নং ওয়ার্ডের বামৈল ওয়াপদা সড়কের পাশে গড়ে ওঠা ময়লার ভাগাড় থেকে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পাশাপাশি ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের গলাকাটা এলাকায় রানীমহল টু চিটিগাং রোড সড়কের ওপরেই দেদারসে গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে ময়লার দুর্গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। গত দুই বছর ধরেই এখানে আবর্জনা ফেলতে দেখা যাচ্ছে। এতে আশপাশে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। ময়লা সিন্ডিকেটের স্ব-ঘোষিত নিয়ম অনুযায়ী রাস্তায় ফেলা গৃহস্থালির আবর্জনাগুলো দ্রুত সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি এসে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তাদের খামখেয়ালীপনায় দিনের পর দিন সড়কেই ময়লা পড়ে থাকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গৃহস্থালীর সব আবর্জনা নির্বিচারে সড়কে ফেলে রাখলেও তা অপসারাণ করা হয়না দীর্ঘ দিন ধরে। বিশেষ করে ব্যস্ততম এসব সড়কের চারপাশে রয়েছে ছোট বড় কলকারখানা, দোকানপাট, অনেক বাড়িঘর, ও অফিস। আর এসব সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখো যাত্রী যাতায়াত করেন। অথচ এখানে ময়লার দুর্গন্ধে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এদিকে পরিবেশ দূষণের ফলে সাধারণ মানুষ নানা রকম জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। মানুষ নাকে রুমাল দিয়ে অথবা নাক চেপে চলাফেরা করতে হয় ভাগাড়ের সামনে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন ভাগাড়ের চারপাশে স্থায়ী বসবাস ও অবস্থানকারীরা।
এ বিষয়ে হায়দারসহ একাধিক রিকশাচালক বলেন, ডেমরা-রামপুরা সড়ক, গলাকাটা, বড়ভাঙ্গ, বামৈল স্ট্যান্ড থেকে যাত্রী নিয়ে অলি গলিতে যাই। যাত্রীর জন্য যতক্ষণ অপেক্ষা করি, ততক্ষণে ভাগাড়ের ময়লার দুর্গন্ধে বমি আসা শুরু হয়। এসব সড়কের পাশেই থাকা ডাইং মিল ও রোলিং মিলসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা দুর্গন্ধের কারণে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন।
ভাগাড়ের সামনে দুর্ঘটনার কবলে পড়া এনআরবিসি ব্যাংকের ডেমরা শাখার ব্যবস্থাপক মো. মিরাজ সরদার বলেন, ডেমরায় সড়কে সড়কে ভাগাড় রয়েছে বলে রাস্তা প্রতিনিয়ত কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল থাকে। এতে সড়কে ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। গত ১৮ জুন রাতে বাসায় ফেড়ার সময় আমার মোটর সাইকেল পিচ্ছিল রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় আমি আবর্জনার ওপর পড়ে গিয়ে বিশ্রি পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। এভাবে অনেক মানুষ ও যানবাহন ভাগাড়ের পাশে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।
এ বিষয়ে সারুলিয়া জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার মো. শামীম মিছির বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ালে বায়ু দূষনের ফলে এ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। আর পরিবেশ ও বায়ু দূষণের পাশাপাশি আবর্জনায় থাকায় ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নানা রোগের সৃষ্টি করে। তবে নিয়ম অনুযায়ী ময়লার ভাগাড় সৃষ্টি না করে পলিথিনের মাধ্যমে ঢেকে আবর্জনা এসটিএস এ সংরক্ষণ রাখা উচিত। কিন্তু ডেমরায় রাস্তার পাশে ওপেন আবর্জনা নির্বিচারে ফেলে রাখা হচ্ছে বলে এখানে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক বেশি।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইব্র্র্রাহিম বলেন, এখানে নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে এখানে প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি দশায় রয়েছি আমরা। পাশাপাশি আবর্জনা অপসারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কোন কথা শোনেনা বলে ওয়ার্ডবাসীরা জিম্মি দশায় রয়েছে।
স্থানীয় ৬৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিন সাউদ বলেন, ময়লার টেন্ডার নিয়ে সুষ্ঠু ভাবে ময়লা নিষ্কাশন না করা নেহাৎ অন্যায়।অত্র ওয়ার্ডের ময়লার টেন্ডার যতটুকু জানি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিন লাকী নিয়ন্ত্রণ করে।তবে কর্তপক্ষের কাছে বারবার বলার পর কোনো সুরাহা করছে না।অন্যের অভিযোগের দায়ভার তিনি বরদাস্ত করবেন না বলে জানান।যারা ময়লার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের সজাগ ও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিন লাকী বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশনে ভারী লাইসেন্সহীন যারা দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল তাদের কে বহিষ্কার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণে নতুন কিছু যানবাহন ও ফেলুডারসহ চালক নিয়োগ করা হলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের (অঞ্চল-৫-দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্চল-৮) সহকারী-প্রধান মো.সাহাবুদ্দিন বলেন, ডিএসসিসির ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডসহ আমাদের নিয়ন্ত্রিত ওয়ার্ডগুলোতে বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে যানবাহন ও ফেলুডার সমস্যা রয়েছে। এখানে ২৩ ওয়ার্ডে ৪ টি ফেলুডার দিয়ে বর্জ্য অপসারণ কাজ করা হচ্ছে বলে সমস্যা হচ্ছে। তবে আসন্ন ঈদের আগে এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: