বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে শাহবাগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আলোচনা সভা

সময় ট্রিবিউন | ১৮ মার্চ ২০২২, ০৬:৫৬

ছবিঃ সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ১০২ তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আজ ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আলোচনা সভা ও কেক কাটা কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

আলোচনা সভা শেষে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠন সহ-সভাপতি শাহীন সিকদার। আরোও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা আহসানুল হক মিনু, ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, ভাস্কর্য শিল্পী উত্তম ঘোষ, সংগঠনের সহ-সভাপতি রোমান হোসাইন, নুর আলম সরদার, কামরুজ্জামান রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ ইবনে ছালাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এসএ সাব্বির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিলন ঢালী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

আলোচনা সভার সভাপতি শাহীন সিকদার বক্তব্যে বলেন, "বাঙালির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ, নিজ সন্তানদের মর্মস্পর্শী শৈশব মধুমতী ও বাইগার নদীর পানি ছুঁয়ে আসা মনোরম বাতাসের ঢেউ গায়ে মেখে, তাল-তমাল তরুর ছায়ায় কাটিয়েছেন দুরন্ত শৈশব। কিন্তু পরবর্তীতে দেশের কাজ করতে নেমে নিজের সন্তানদের শৈশবকে আর অতোটা আনন্দ-মথিত করে তুলতে পারেননি তিনি। কখনো পাকিস্তানি জান্তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে জেলে, আবার কখনো রাজনৈতিক ব্যস্ত কর্মসূচির কারণে নিজ পরিবার থেকে বঙ্গবন্ধুকে দূরেই থাকতে হয়েছে।"

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, "বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। একারণে স্বাধীনতার পর সর্বপ্রথম যে উদ্যোগগুলো তিনি নিয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো- শিশুদের সুন্দর বিকাশ ও বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করা। শিশুদের প্রতি তাঁর যে অশেষ ভালোবাসা, সেটার প্রকাশ ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কার্যকলাপে। এজন্য বঙ্গন্ধুর জন্মদিন, ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশুদিবস হিসেবে পালন করা হয়। শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপগুলো উঠে এসেছে শীর্ষ লেখক ও বুদ্ধিজীবী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’ গ্রন্থের ‘সমাজের হাতে ও রাষ্ট্রের হাতে প্রাথমিক শিক্ষা’ প্রবন্ধে। বঙ্গবন্ধুর জানতেন, স্বাধীন দেশে একটি নতুন প্রজন্মকে সঠিকভাবে মানবিক ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে, তবেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে রুচিশীল একটি প্রজন্ম গড়ে তুলতে শিশুদের গড়ে তোলার জন্য বহুমুখী উদ্যোগ নেন তিনি। ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই ড. মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদাকে সভাপতি করে তিনি যে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন, তার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালুর সুপারিশ করা হয়। ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। এমনকি শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪-এর ২২ জুন প্রণয়ন করেন শিশু আইন। শিশুদের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধুর সময়েই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই, অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ ও খাবার বিতরণ করা শুরু হয়। এছাড়াও গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পোশাকও দেওয়া হতো।"

বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, "স্বাধীনতার পর বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে শিশুদের নানারকম প্রতিযোগিতা দেখতে যেতেন বঙ্গবন্ধু। এমনকি সেসময় সবরকম নিরাপত্তা ও প্রটোকলের বাইরে গিয়ে শিশুদের সঙ্গে মিশে যেতেন তিনি। হয়তো নিজের সন্তানদের হারানো শৈশবেই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতেন তিনি দেশের সব শিশুর আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে। বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবনের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়- তাঁর পাঁচ সন্তানের সবার শৈশবকালের সময়গুলোতেই তিনি ছিলেন প্রচন্ড ব্যস্ত। দেশের মানুষের মুক্তি ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে সবসময় তিনি পরিবারের চাইতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।"

বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, "বঙ্গবন্ধুর 'কারাগারের রোজনামচা' গ্রন্থে বারবার উঠে এসেছে শিশু রাসেলের কথা। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে জেলে নেয় পাকিস্তানিরা। তখন মা ফজিলাতুন্নেচ্ছার সাথে জেলগেটে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যেতো ৩-৪ বছরের ছোট্ট রাসেল, বাবার গলা জড়িয়ে ধরতো সে, আর ফিরে যেতে চাইতো না। রাসেলের জন্য মন কাঁদতো বঙ্গবন্ধুর। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সাক্ষাতের সময় শেষ হওয়ার পর শিশু রাসেলকে ছেড়ে আবারো নিজের কারাকক্ষে চলে যেতে হতো তাঁকে। পিতাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় রাসেলের কান্নাকাটির কথাও উঠেছে বঙ্গবন্ধুর লেখায়। রাসেলের শৈশব-শুরুর পুরো সময়টাই বঙ্গবন্ধু ছিলেন জেলে, এরপর বাকি সময়টা ছিলেন বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম চূড়ান্ত করার জন্য ব্যস্ত কর্মসূচীতে।"

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা আহসানুল মিনু বলেন, "১৯৬৯ সালে জেল থেকে বের হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে, তখন মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে গণআন্দোলনের জোয়ার বইছে। তাই নিজ বাসভবনে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ দেখা করতে আসতেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। সেই সময়গুলোতে ছোট্ট রাসেল একটু পরপর উঁকি দিতো বঙ্গবন্ধুর রুমে। সে গিয়ে দেখে আসতো যে, তার বাবা ঘরে আছে কিনা, নাকি আবার নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন!"

ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন,
"বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার 'মুজিব আমার পিতা' গ্রন্থেও উঠে এসেছে শেখ কামালের এক মর্মস্পর্শী ঘটনা। বাংলা ভাষা আন্দোলনের বৃহত্তর পটভূমি সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বিভিন্ন অজুহাতে তরুণ নেতা শেখ মুজিবকে জেলে নিতো পাকিস্তানিরা। ভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্বে বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্বে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে, তখনও তাকে দীর্ঘমেয়াদে জেলে রাখা হয়। এরকম একটি সময়ে ১৯৪৯ সালে জন্ম হয় শেখ কামালের। কিন্তু এরপর ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই দফায় মোট ৮৫০ দিন জেল খাটেন বঙ্গবন্ধু। ফলে জেল থেকে বাড়ি আসার পর আড়াই বছরের ছোট্ট কামাল তার বাবাকে চিনতেও পারেনি। সে দেখতো যে- বড় বোন শেখ হাসিনা (তার হাঁসু আপা) বঙ্গবন্ধুকে বাবা বলে ডাকছে। তাই সে বোনের কাছে আবদার করে বলতো- হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার বাবাকে আমি একটু বাবা ডাকি! পুত্র কামালকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাঙালির বলিষ্ঠ পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর পিতৃ হ্রদয় হু হু করে উঠেছে বারবার শিশু সন্তানদের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায়।"

ভাস্কর্য শিল্পী উত্তম ঘোষ বলেন, "শহীদ শেখ জামালের জন্মের পরও অতিব্যস্ত সময় কেটেছে বঙ্গবন্ধুর। তখন পাকিস্তানিদের ধর্মের ধোঁকাবাজির মুখোশ খোলার জন্য তিনি ব্যস্ত ছিলেন ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ও প্রগতিশীল বাঙালি জাতিকে প্রদেশের নেতৃত্বে বসাতে। শেখ রেহানার জন্মের পরও খুব বেশি সময় দিতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলা, স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, সব মিলিয়ে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত টানা ১ হাজার ১৫৩ দিন জেলে থাকেন তিনি, আর এই সময়টাতেই গুটি গুটি পায়ে বড় হয়ে উঠতে শুরু করে ছোট্ট জামাল ও রেহানা। পিতার অনুপস্থিতে এভাবেই বেদনামাখা শৈশব নিয়ে বেড়ে উঠেছেন বাঙালির জাতির পিতার নিজ সন্তানেরা।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, "বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বয়স যখন সাড়ে পাঁচ মাস, তখনই ভাষা আন্দোলনের জন্য প্রথমবার জেলে যান বঙ্গবন্ধু, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। সেই বছরেই আবারো ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ১৩২ দিন কারাভোগ করেন তিনি। আবারো এপ্রিল মাসে জেলে গিয়ে ৮০ বন্দি থাকেন তিনি।বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও বেড়ে উঠেছেন পিতাকে কদাচিৎ দেখে। বাবা এই আছেন, তো এই নেই। তবে তাঁদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে ছিলেন এক মহীয়সী নারী, তাঁর নাম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন সন্তানদের বাবা। মায়ের ভূমিকার পাশাপাশি সন্তানদের বাবার ভূমিকাও পালন করতেন তিনি। এজন্য পিতার মতো সন্তানদেরও ত্যাগ ও নৈতিকতা শিক্ষার ভিত্তি দিয়েছেন তিনি তাঁদের শৈশবেই।"


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


  1. স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইবি ছাত্রলীগের সংহতি
    স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইবি ছাত্রলীগের সংহতি
  1. জাবির ডিন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
    জাবির ডিন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
  1. হিট স্ট্রোকে ১৫ দিনে ১৫ জনের মৃত্যু
    হিট স্ট্রোকে ১৫ দিনে ১৫ জনের মৃত্যু
  1. শেরপুরের বলাইরচরে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুলব্যাগ ও টিফিন বক্স বিতরণ
    শেরপুরের বলাইরচরে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুলব্যাগ ও টিফিন বক্স বিতরণ
  1. শেরপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতি
    শেরপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতি
  1. চট্টগ্রামে একদল তরুণদের উদ্যোগে আয়োজিত হলো “বই বিনিময় উৎসব”
    চট্টগ্রামে একদল তরুণদের উদ্যোগে আয়োজিত হলো “বই বিনিময় উৎসব”
  1. গাজা পুনর্গঠনে সময় লাগবে ৮০ বছর : জাতিসংঘ
    গাজা পুনর্গঠনে সময় লাগবে ৮০ বছর : জাতিসংঘ
  1. নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন উপজেলা উপহার দিতে আবারো নির্বাচনে আবু আসিফ
    নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন উপজেলা উপহার দিতে আবারো নির্বাচনে আবু আসিফ
  1. শেরপুরে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান ও দুর্নীতি বিরোধী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
    শেরপুরে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান ও দুর্নীতি বিরোধী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
  1. নিরাপদ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের বৈশ্বিক পরিকল্পনা
    নিরাপদ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের বৈশ্বিক পরিকল্পনা