কমিটি জটিলতায় ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমে আসন্ন উৎসব নিয়ে শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা | ১৬ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৬

সংগৃহীত
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমে পাবনা-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের নির্দেশিত আহবায়ক কমিটি উপেক্ষিত হয়েছে। আশ্রমের কেন্দ্রীয় কমিটি জটিলতায় ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের তিনদিনের মহোৎসব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 
 
গত ১১ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশ্রমের লাইব্রেরী রুমে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 
 
সৎসঙ্গের সংবিধান অনুযায়ী নির্দেশিত আহবায়ক কমিটি মান্য করা সম্ভব না বলে একটি চিঠির মাধ্যমে সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সেকে জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গের সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র বর্মণ। 
 
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা শঙ্কায় আশ্রমে আসন্ন ২৪, ২৫ ও ২৬ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য তিনদিনের উৎসব বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সৎসঙ্গ সম্পাদক ও সৎসঙ্গের ভক্তরা।  
 
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই আশ্রম পরিচালনা ও আধিপত্য বিস্তারে গ্রুপিং দানা বেধে উঠে। গ্রুপিং শুধু পাবনার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নয়, সারাদেশের ৬/৭ টি শাখায় এই বিভেদে জড়িয়ে গেছে। নানা চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে এবং কোভিড-১৯ ধাক্কা সামলিয়ে আশ্রম অনুসারীরা যখন এই সৎসঙ্গকে চাঙ্গা করে পরিচালিত করতে শুরু করেছে সে সময়ে ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠির একের পর এক ষড়যন্ত্রের কারনেই উদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।  
 
আশ্রম সংশ্লিষ্টরা জানান, আশ্রম ঘিরে আধিপত্য বিস্তার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও কমিটিতে যাওয়া নিয়েই মূলত বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এই বিরোধ অর্থ আত্মসাৎ, কতিপয় আশ্রম কর্মকর্তার নারী কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গ সংবিধান অমান্যকারি ৬/৭ টি শাখা কমিটির গুটিকয়েক ব্যক্তির সংঘবন্ধ প্ররোচনায় পাবনা-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স ও পাবনার রাজনৈতিক নেতারা আধ্যাত্মিক এই প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেন। হিমাইতপুর সৎসঙ্গের ইতিহাসে পূর্বে এমনটি দেখা যায় নাই। 
 
তথ্য মতে, গত ১১ মার্চ পাবনা-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স আশ্রমের শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আশ্রম লাইব্রেরিতে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সবাইকে নিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। জরুরীভাবে ওইদিনই আহবায়ক কমিটি গঠনের তাগিদও দেন এমপি। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, পৌরসভার মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান, আওয়ামীলীগ নেতা কামিল হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা শাহজাহান মামুনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 
 
জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবর্গের চাপে দুই পৌর কাউন্সিলর ও একজন আওয়ামীলীগ নেতার স্বাক্ষরে একটি আহবায়ক কমিটির তালিকা করা হয়। এই তালিকা প্রস্তুতের পরেরদিন কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গের সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র বর্মণ সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সকে একটি চিঠি দেন। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন সৎসঙ্গ সংবিধানের আলোকে শিষ্য পরিষদ দ্বারা গঠিত সৎসঙ্গের কমিটি একমাত্র শিষ্য পরিষদ ভেঙে দিতে পারে। এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায়, হিমাইতপুর সৎসঙ্গের ইতিহাসে মেয়াদ পূর্তীর পূর্বে কমিটি ভেঙে দেওয়ার কোনো উদাহরণ নাই। গত ১১ মার্চ তৈরী করা আহ্বায়ক কমিটির তালিকায় আমি সহ ২০২৩-২০২৮ কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন অনেকটা বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর করি। অসাংবিধানিকভাবে কমিটির তালিকা তৈরী হওয়ায় বিষয়টি দেশের ভক্তরা অবগত হওয়ায় তারা আমার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই আহ্বায়ক কমিটির তালিকা বাস্তবায়ন করা হলে, দেশ বিদেশের লক্ষ ভক্ত অনুরাগীরা, গত ১৭ জুন ২০২৩ খ্রি. তারিখে দেশের সমস্ত জেলার ২৫১ জন জেলা শিষ্য প্রতিনিধি, ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট গঠিত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অধিকার ক্ষুন্নের ফলে কয়েকজন সদস্য/ভক্ত আদালতে মামলা মোকদ্দমা করবে বলে আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন। এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরী হলে আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়ে পড়বে, এমনকি আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ মার্চ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ, হিমাইতপুরধামে উৎসবের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া সত্তেও উৎসব বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছ। চিঠিতে সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সকে কমিটিতে ভবিষ্যতে দেশের যোগ্য ও দক্ষ ব্যাক্তিদের যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সৎসঙ্গের সম্পাদক তাপস চন্দ্র বর্মণ।  
 
আশ্রমের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গুপীনাথ কুন্ডু বলেন, ২০২৩-২০২৮ মেয়াদী কমিটি সৎসঙ্গের সমস্ত কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করছে। এই সময়ে কোন কিছু না করে আসন্ন উৎসব পার করে আলোচনায় বসলে সংঘের জন্য ভালো হবে। 
 
কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠনের বিষয়ে হিমাইতপুর আশ্রমের সাবেক সম্পাদক বর্তমান কমিটির নির্বাহী সহ-সভাপতি যুগোল কিশোর ঘোষ বলেন, এমপি সাহেব উভয়পক্ষের কথা শুনে কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি করার প্রস্তাব করেছেন। ইতোমধ্যে আহবায়ক কমিটির তালিকা হয়েছে, যা নিয়মমতো হয় নাই। নিজেদের ঘরে অন্য কেউ এসে নিজের ক্ষমতা জাহির করুক। এমনটি আশাবাদী নই। আমাদের এই সমস্যা আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বসে নিরসন করলে ভাল হতো।
 
হিমাইতপুর আশ্রমের সহ-সাধারণ সম্পাদক, ফরিদপুরের ভাংগা সরকারি কে এম কলেজের প্রভাষক সৌমিত্র মজুমদার জানান, সভা চলাকালীন আমি বলেছি, কমিটি গঠন বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে দেখুন, তদন্ত ব্যতীত শুধুমাত্র কারো অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিটি বাতিল করা পক্ষপাতমূলক। সংবিধান সম্মত কথা বলায় উপস্থিত অনেকেই আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এছাড়া মাননীয় এমপি মহোদয়ের কাছে অভিযোগকারী মহলটি অনেকদিন থেকে সামাজিক মাধ্যমেনামে বেনামে ক্রমাগত আমাকে হুমকি দিচ্ছে। এতে করে আমি প্রচন্ডভাবে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছি।
 
চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি সুধীর বিকাশ দেব বলেন, ২০১৮ সালে আমার সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করার পর আমি আর হেমায়েতপুরে যাইনি। দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ঠাকুরের অনুসারীদের অনুরোধেই এমপি মহোদয়ের মধ্যস্থতায় একটি সুরাহা হবে বলেই আবার এসেছিলাম পাবনা হেমায়েতপুরে। 
 
অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব থাকলেও শিষ্য পরিষদের গঠিত কমিটি নিয়ম ছাড়াই ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি করা কতটা বৈধ বা যৌক্তিক এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উভয়পক্ষের দাবীর প্রেক্ষিতে এমপি মহোদয়ের নির্দেশনায় এটি করা হয়েছে। আশ্রমের গঠনতন্ত্র মোতাবেক এটা ঠিক কিনা এমন বিষয়ে তিনি কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেননি। 
 
চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাবেক সম্পাদক লায়ন শংকর সেনগুপ্ত বলেন, আমরা প্রয়াত সভাপতি ডক্টর রবীন্দ্রনাথ সরকার অনুসারী। আমরা সব সময় চাই আশ্রম সুন্দরভাবে পরিচালিত হোক। কিন্তু বর্তমান কমিটি আমাদেরকে সাইড করে কমিটি গঠন করেছে। যা আমরা মেনে নিতে পারিনি। এটা নিয়েই মতানৈক্য চলছে। আমাদের দাবীর প্রেক্ষিতে এমপি মহোদয় কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আহবায়ক কমিটি হয়েছে। কিন্তু বর্তমান কমিটি মানছেন না। এমপি সাহেব আশ্রমের কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটির নির্দেশনা দিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। 
 
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি রোটারিয়ান প্রভাষ ভদ্র বলেন, বিরোধ সমাধানের লক্ষ্যে এমপি সাহেবের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান চলে তার নিজস্ব নিয়ম মেনে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদেরকেই এই সমস্যা সমাধানে সুরাহা করতে হবে। পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে এই সমঝোতায় ডাকা হলে হয়তো সমস্যা সমাধানে কিছুটা সহায়ক ভূমিকা থাকতো। 
 
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা চন্দন চক্রবর্তী জানান, দ্বন্দ্বের কারনে সৎসঙ্গ হিমায়েতপুর আর পাকুটিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।  বাইরের কেউ এসে এটা সমাধান করতে পারবে না। সবকিছুই নিয়ম কানুন বলে কিছু আছে, নিয়ম মেনেই সব করা দরকার। 
 
এমপি, জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতৃবর্গ কোন প্রতিষ্ঠানের কমিটি বাতিল করা বা আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া কতটুকু যৌক্তিকতা আছে এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু আশ্রমের নিজস্ব গঠনতন্ত্র রয়েছে। সেহেতু তাদের নিয়মের মধ্যেই কাজ করতে হবে। এখানে বাইরের কেউ খবরদারী করা বা কোন সিন্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া সঠিক হবে না। যদি কেউ এটা করেন তাহলে সেটা হবে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করা।
 
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সৎসঙ্গের ২০২৩-২০২৮ মেয়াদী কমিটির বিরুদ্ধে সদর আসনের এমপির কাছে প্রধান অভিযোগ, গত ১৭ জুন ২০২৩ তারিখে কমিটি গঠনের সময় সংগঠনের সভাপতির অনুপস্থিতে তারা কমিটি গঠন করেন। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কমিটি গঠনের সময় দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত ৮০ বছর বয়সী সংঘের সভাপতি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার তখন ভারতে চিকিৎসারত ছিলেন। ১৭জুন ২০২৩ তারিখের সভার ২টি পর্বে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে সংঘের সিনিয়র সভাপতি অধ্যাপক গোপিনাথ কুন্ডু ও আধ্যাত্মিক প্রধান ঋত্বিক পুরোধা মৃনাল কান্তি মল্লিক। এই সভায় আশ্রমের জেষ্ঠ সেবাইতগণ, সারা দেশের শিষ্য প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের উপস্থিতে ৫ বছর মেয়াদী ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গ নির্বাহী পরিষদ, ২৯ সদস্য বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক ঋত্বিক পরিষদ ও ৭ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। এই কমিটি গঠনের সময় সংঘের সভাপতি চিকিৎসাজনিত কারণে ভারতে উপস্থিত থাকলেও ড. রবীন্দ্রনাথ সরকারকে সভাপতি করা হয়। 
 
হিমাইতপুর সৎসঙ্গ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-২০১৮ এবং ২০১৮-২০২৩ মেয়াদী সৎসঙ্গের কমিটি গঠনের সময় তৎকালীন সভাপতি জীবিত থাকলেও বৃদ্ধ ও অসুস্থতাজনিত কারনে তারা কমিটি গঠন সভায় উপস্থিত ছিলেন না। বিশেষ করে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের মধ্যে চট্টগ্রামের অধ্যাপক সুধীর বিকাশ দেব কেন্দ্রের সভাপতি না হয়েও তিনি ২০১৮-২০২৩ মেয়াদী সৎসঙ্গের কমিটি গঠনের সময় সভাপতিত্ব করেন। বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগকারিদের মধ্যে পাবনা আশ্রমের গতিশীল কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্থকারী আশ্রম কমিটির পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়রীভূক্ত ব্যক্তিবর্গ, আশ্রমে অঙ্গণে অপ-কর্মকারী ও নারী কেলেঙ্কারীতে জড়িত ব্যক্তি, হিমাইতপুর সৎসঙ্গের শাখা মন্দির দখলকারী, হিমাইতপুর সৎসঙ্গের কোটি টাকা আটকে রাখা ব্যক্তি, ডিজিটাল আইন অমান্যকারি ব্যক্তি, দৈত নাগরিক, বিদেশে টাকা পাচারকারী ব্যক্তি, শাখা সংগঠনে ভারতীয় নাগরিককে সভাপতি করা ব্যক্তি ও হত্যা মামলার আসামী রয়েছে বলে জানা যায়।
 
আশ্রমের সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত থাকায় পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেনের মন্তব্য জানতে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 
 
তবে ওইদিনে তিনি উপস্থিত বক্তব্যে বলেন, মাননীয় এমপি মহোদয় জাতীয় সংসদের আইনপাশকারী একজন সদস্য। তিনি স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তার কোন সিন্ধান্ত মানে সেটা আইন। তিনি যা বলেছেন সেটাই মানতে হবে। 
 
পাবনা জেলা আওয়ামীলীগ নেতা শাহজাহান মামুন, পাবনা পৌরসভার কাউন্সিলর রুবেল ও কাউন্সিলর শাহীন জানান, গত ১১ মার্চ আশ্রমে এমপি মহোদয়ের উপস্থিতিতে আশ্রমের বিবাদমান দুটি গ্রুপকে এক সাথে নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আলাপআলোচনা শেষে এমপি মহোদয় যে নির্দেশনা আমাদের উপর দিয়েছেন। তার সাথে আশ্রমের লোকজনও সহমত পোষন করায় আমাদের নেতৃত্বেই একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেটা ওইদিন সন্ধ্যায় এমপি মহোদয়কে অবহিত করা হয়। 
 
তারা বলেন, শুনেছি এক পক্ষ আহবায়ক কমিটি মানছেন না। ইতোমধ্যে এমপি মহোদয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তাদের দাবী, আমাদের উপর যতটুকু দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল আমরা সেটা পালন করেছি। বাকিটা সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারাই দেখবেন। এখানে আমার আর কোন মন্তব্য নেই।    
 
আশ্রম কেন্দ্রিক উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে পাবনা জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না হওয়ায় তাদের মতামত পাওয়া যায়নি।
 
আশ্রম সূত্র জানায়, গত ২২, ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর পরমতীর্থ হিমাইতপুরধামে মহোৎসব, ৩০ নভেম্বর ও ১, ২ ডিসেম্বর পরমতীর্থ হিমাইতপুরধামে ঋত্বিক সম্মেলন, ত্রাণ বিতরণ, সারাদেশে শীত সহ প্রায় ১০টি শাখা মন্দির প্রতিষ্ঠা, হিমাইতপুর আশ্রমে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্তের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা, আশ্রম উন্নয়নসহ আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ মার্চ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ, হিমাইতপুরধামে উৎসবের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। গত ১৭ জুন'২০২৩ তারিখে সৎসঙ্গ সংবিধানের ৫ বছর মেয়াদী নির্বাহী কমিটি। অথচ উৎসবের প্রাক্কালে এলাকার সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপের কারণে হিমাইতপুর সৎসঙ্গের আসন্ন উৎসব বাঁধাগ্রস্থ হলে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে বলে ঠাকুর অনুসারী দেশবিদেশের ভক্তরা মনে করছেন। 

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: