শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে জাইকার অর্থায়নে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর খাল খননকাজে এসে চাঁদা দাবীকারী আ’লীগ নেতা ও সমর্থিত কৃষকদের মারধরের শিকার হয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলীসহ চারজন। ওই ঘটনার মামলা দায়েরের পর প্রধান আসামী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এবং একই মামলা গ্রেফতার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি জাকারিয়াকে শনিবার কারাগারে পাঠিয়েছেন শেরপুরের আদালত। একইসঙ্গে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে রিমান্ড আবেদন শুনানীর জন্য সোমবার তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
সূত্রমতে, উপজেলার ফুলপুর বান্দের বাজার এলাকা থেকে রসাইতলা কাঁকরামারি পর্যন্ত প্রায় পৌণে এগারো কিলোমিটার সুতিয়ার খাল পুনখননে উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দে ওই খনন কাজ শুরু করতে গেলে গত সোমবার আ’লীগ নেতা আমিনুলের নেতৃত্বে বাঁধা প্রদান করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় কৃষকদের বোরো সেচ সংকট হবে বলে ভুল বুঝিয়ে তাদের দিয়ে একটি পক্ষ তৈরি করে আমিনুলসহ কতিপয় ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার কৃষকদের দাবীর মুখে সুতিয়ারপার এলাকায় খালটির পুনখনন কাজ শুরু না করে রসাইতলা এলাকায় খননকাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দুপুরে সুতিয়ারপার এলাকায় কতিপয় কৃষক নিয়ে আ’লীগ নেতা আমিনুল, তার ভাই মনিরুল, কৃষক সোহরাব আলী, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদসহ কয়েকজন মিলে খননকাজ বন্ধ করে দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে সহকারী প্রকৌশলীসহ ওই কাজের দায়িত্বে থাকা চারজনকে মারধর করে। এসময় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল হাসান বুলবুলসহ রসাইতলা গ্রামের কৃষকদের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়।
এদিকে শুক্রবার সকালে আ’লীগ নেতা আমিনুলের নেতৃত্বে সুতিয়ারপার বাজারে খাল খননবিরোধী মিছিল করা হয়। বিকেলে মারধর ও চাঁদা দাবীর ঘটনায় মামলার প্রেক্ষিতে আমিনুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় আমিনুলকে ছাড়িয়ে নিতে তার সমর্থিত কৃষকরা বিক্ষোভ মিছিল করে থানার সামনে জরো হন। এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় একই মামলায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি জাকারিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এলজিইডি শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২৫ জন করে কৃষকের সমন্বয়ে ১০টি পিআইসি কমিটি গঠন করে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয়। প্রথমে ওই কাজের বরাদ্দ হতে ২০ লাখ টাকা দাবী করে আমিনুলসহ কয়েকজন। ওই টাকা না দিয়ে কাজ শেষে উদ্বৃত্ত টাকা কৃষকের স্বার্থে সমিতির ফান্ডে এফডিআর করে দেওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু আমিনুলসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চাঁদার টাকা না পেয়ে তাদের সমর্থিত কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে ক্ষেপিয়ে তুলে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই বোরো আবাদ শুরু হয়ে যাওয়ার আমরা কৃষকের স্বার্থে খালের শুকনো অংশে খনন কাজ শুরু করি। এছাড়াও পরবর্তীতে এক কিলোমিটার করে এলাকা ভাগ করে স্কেভেটর দিয়ে খনন করে প্রতিটি অংশে বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে সেচ ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা ছিল।
তথ্যমতে, প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী চলতি মৌসুমে খালটির কাজ বাস্তবায়ন না হলে বরাদ্দ ফেরত যাবে এবং বোরো পরবর্তী সময়ে বর্ষাকাল চলে আসায় খনন কাজ করা যাবে না।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: