নওগাঁর নদী ও বিল বেষ্টিত উপজেলা হলো আত্রাই উপজেলা। এ উপজেলার আত্রাই নদীর সমসপাড়া ফেরিঘাট ও ছোট যমুনা নদীর আট-গ্রাম ভুপনার ঘাটে দুটি সেতুর অভাবে এখনোও নৌকাতেই ভরসা করতে হয় শতাধিক গ্রামের কয়েক শ' শিক্ষার্থী সহ কয়েক লাখ মানুষকে। বছরের পর বছর বিভিন্ন সময়ে এই দু'টি ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশ এই অঞ্চলের হাজারো বাসিন্দারা। তাই ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশের আগেই এই দুটি শতবর্ষী ঘাটে সেতু নির্মাণ স্থানীয়দের প্রাণের দাবী ।
ভাঙ্গা-জাঙ্গাল গ্রামের বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া আব্দুল আলিম বলেন, দেশের উন্নয়ন যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে তখন খুবই ভালো লাগে। কিন্তু যখন দেখি পারাপারের জন্য আমাদের নদীর ঘাটে এসে প্রতিদিন শত শত মানুষকে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে তখন নিজেদের আদিম যুগের মানুষদের মতো মনে হয়। নদীর ঘাটে পার হতে এলেই নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। এতোকিছুর উন্নয়ন সাধিত হলেও আজো আমাদের কপালে একটি সেতু জোটেনি। একটি মাত্র সেতুর অভাবে এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন থমকে আছে। জানি না এঘাটে কোনদিন একটি সেতু নির্মাণ হবে।
সমসপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, উত্তরের গণভবন থেকে সড়ক পথে কবিগুরুর একমাত্র কাচারী বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পরিতসরের সঙ্গে সরাসরি সহজ যোগাযোগ মাধ্যমে হচ্ছে ভাঙ্গাজাঙ্গাল- সমসপাড়া দিয়ে চলাচলের পথ। কিন্তু এখানে একটি সেতুর অভাবে সেই সহজ পথ কঠিন হয়ে আছে। নদীর দক্ষিণ পাশের কয়েকটি গ্রামে থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শতাধিক শিক্ষার্থীদের ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন খেয়াঘাটের নৌকা পাড়ি দিয়ে সমসপাড়া স্কুলে আসতে হয়। বর্ষা মৌসুমে অনেক শিক্ষার্থীকে ঘাটে এসে নৌকা পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে পোশাক নষ্ট করে স্কুলে আসতে হয়। একটি মাত্র সেতুর অভাবে থমকে আছে এই অঞ্চলের আধুনিক জীবন-যাপন।
আটগ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, আটগ্রাম ভুপনার ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ২০-২৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের নিজ উপজেলা আত্রাই, রাণীনগর ও নওগাঁ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে নৌকায় পার হতে হয়। এই ঘাটে অনেক সময় নৌকার যাত্রী পর্যাপ্ত না হলে নৌকা চলে না। তাই পার হওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। তা না হলে দঁড়ি টেনে নিজেকেই নৌকা করে পার হতে হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে জীবন-যাপন করে আসছে আত্রাই উপজেলার দুই ঘাটের শতাধিক গ্রামের মানুষরা।
নওগাঁর রাণীনগরের ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, একটি সেতুর অভাবে চলাচল সহজতর না হওয়ার কারণে ঘাটে এসে পারাপারের জন্য সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থও ব্যয় করতে হচ্ছে এ এলাকার মানুষদের। ফলে বছরের পর বছর দুটি সেতুর অভাবে জীবনমানের উন্নয়নসহ ঘাট এলাকার সার্বিক উন্নয়ন যেন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই দু' ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলে তা বাতিল করা হয়েছে। আবার নতুন করে প্রস্তাব উপর মহলে পাঠাবো। সেই প্রস্তাব যদি অনুমোদিত হয় তাহলে দু' ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
নওগাঁ-৬ আত্রাই-রাণীনগর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, দুটি ঘাটে দুটি সেতু নির্মাণ ঐ অঞ্চলের শতাধিক গ্রামের লাখ লাখ মানুষের বহু বছরের প্রাণের দাবী। আমি এমপি হওয়ার পর থেকে জাতীয় সংসদে দুটি ঘাটে দুটি সেতু নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছি। দুটি সেতুর অভাবে এই অঞ্চলগুলো উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হতে পারছে না। এই অঞ্চলগুলো পিছিয়ে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়। তাই দ্রুত দুটি ঘাটে দুটি সেতু নির্মাণের জন্য আমি মানবিক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
জনপ্রিয় খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: