দুই মাস পরেই শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। এর মধ্যে প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মেলার। এই মেলায় উল্লেখ করার মতো দোকানপাট নেই। তার বদলে কুরুচিপূর্ণ নৃত্য আর জুয়ার আসর বসানো হয়েছে। শর্ত জুড়ে দেওয়া অনুমতির অর্ধেকের বেশি লঙ্ঘন করে চলছে মেলার কার্যক্রম। এতে করে অন্তত উপজেলার ৫শতাধিক এসএসসি পরীক্ষার্থী ক্ষতির মুখে পড়বে।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরফকিরা ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের চরফকিরা গ্রামে স্থানীয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় গত দুদিন ধরে কথিত মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া, ও মাদকের এ আসর চলছে।
এ আসরে ছয় ঘুঁটি, টুকটুকি, ৩ তাসসহ আরও নানা নামে চলছে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জুয়া। গত দুই দিনে এদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হবে এ যেন, একেকটি মিনি ক্যাসিনো। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে এই জুয়ার আড্ডা, সঙ্গে বসছে অশ্লীল নৃত্য ও মাদকের আসর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত থেকেই উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডে মুক্তিযোদ্ধা মেলার নামে এ অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর চলছে। প্রথম দিন বোর্ডপ্রতি ৬০ হাজার টাকা করে ২০টি জুয়ার বোর্ড বসানো হয়, দ্বিতীয় দিন বোর্ড প্রতি ৬৫ হাজার টাকা করে ২০টি জুয়ার বোর্ড প্রকাশ্যে সামিয়ানা টাঙিয়ে বসানো হয়। জুয়ার বোর্ড থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে ক্ষমতাবানরা। এরমধ্যে পুলিশ, প্রশাসন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেলা আয়োজন কমিটির সভাপতি সফিকুল ইসলাম সোহাগ বাটোয়ারা নিচ্ছেন বলে স্বীকার করেন জুয়াড়িরা। বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে প্রকাশ্যে অবাধে জুয়া ও অশ্লীল নৃত্যের আসর চালানোর সুবিধা।
শনিবার দিবাগত রাতে সরেজমিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, মেলার গেইটে পুলিশ। এর একশত গজ সামনে জুয়ার আসর চলছে। এর পাশেই চলছে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও নৃত্যের আসর। আর নির্বিঘ্নে জুয়া পরিচালনার জন্য আয়োজক কমিটি বিভিন্ন জনকে মোটা অংকের টাকা দিচ্ছে। জুয়ার বোর্ডে প্রতি রাতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। আয়োজক কমিটিসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়েও মোটা অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে জুয়া পরিচালনাকারীদের পকেটে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একাধিক গেইট করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের মির্জা ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জায়দল হক কচির ছবি দিয়ে মেলার আয়োজন করেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমীর মেম্বার। জুয়া ও নৃত্যের আসরে স্কুলপড়ুয়া কিশোরদের উপচে পড়া ভিড়। জুয়া খেলার পাশাপাশি চলে রাতভর মাদকসেবন। মেলা অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে গেছে। যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। জানা যায়, ইউপি সদস্য সমীর জুয়ার বোর্ড থেকে টাকা সংগ্রহ করে মেলা কমিটির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সোহাগের হাতে দেয়। পরে এই টাকা তিনি প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন লোকের মাঝে বণ্টন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত চরফকিরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, মেলা মানে একটু অনিয়ম থাকবেই। তিনি দাবি করেন, মেলায় এসে কিশোর-যুবকরা আনন্দ করবে। না হলে তারা কিশোর গ্যাং হয়ে যাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সমীর মেম্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোয়াখালীল পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলাম বলেন, এ ম্যাসেজ আমি কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে দিয়ে দিচ্ছি। পারলে ইউএনও মহোদয়কে বলেন, তাঁরওতো দায়িত্ব আছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: