শেরপুরে (আইপিএম) বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনায় পরিবেশকে দূষণমুক্ত রেখে এক বা একাধিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষির ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ বালাইকে দমন করাই হলো আইপিএম। ইহা পরিবেশের ক্ষতি ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের সংখ্যা যথাসম্ভব একটি নির্দিষ্ট স্তরের নিচে রাখার উপযুক্ত কৌশল ও উপায়।
বাংলাদেশ ১৯৮১ সালে জাতিসংঘের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির সদস্যপদ লাভ করে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সরকার ২০২১ সালে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার রামচন্দ্রকুরা ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন ধরে একশ একর জমিতে (আইপিএম) মডেল প্রকল্প চালু করে। এর আওতায় ইউনিয়নের ৫শ জন সবজি চাষীকে ২০টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। চাষিদের বছরব্যাপী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং প্রকল্প শেষ হলেও প্রশিক্ষিত ওই সকল চাষি এখনও আইপিএম পদ্ধতিতে চাষবাস করে যাচ্ছে। আবার প্রশিক্ষিত চাষিদের কাছ থেকে শিখে আইপিএম ধারণা নিচ্ছে অন্য চাষিরা। এতে উৎপাদনে খরচ যেমন কমেছে পরিবেশেরও ভাল থাকছে। ফলস্বরূপ মানুষ পাচ্ছে বিষমুক্ত সবজি। এতে ওই এলাকার কৃষিতে আলো ছড়াচ্ছে আইপিএম প্রযুক্তি।
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব কৃষিতেও পড়েছে। ফসলে নতুন নতুন পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। কৃষিজ উৎপাদনে উচ্চমাত্রার রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পাখি ও অনুজীব ইত্যাদি বিলুপ্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে জীব বৈচিত্র। মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দিনদিন বাড়ছে। তাই সরকার পরিবেশ বান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে আইপিএম পদ্ধতির মাধ্যমে। পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পটি একযোগে দেশের ৮টি বিভাগের ৬১ জেলার ৩১৭ উপজেলার একটি নালিতাবাড়ী।উপকারভোগী চাষিরা বলেছেন আইপিএম পদ্ধতি পাল্টে দিয়েছে এখানের সবজি উৎপাদন ব্যবস্থা।
কৃষি বিভাগ জানায়, প্রকল্প অঞ্চলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের সরকার এই কর্মসূচী গ্রহন করে। কর্মসূচি অঞ্চলে উচ্চ মূল্যের সবজি উৎপাদনের জন্য নেটহাউজ স্থাপন করা হয়। যান্ত্রিক উপায়ে ফসলের ক্ষতি করে এমন শত্রু পোকা দমন করা হয় এই পদ্ধতিতে। ফলে উপকারী পোকা, মাছ, ব্যাঙ, পশু, পাখি, গুইসাপসহ নানা উপকারী জীব রক্ষা পায়। কেঁচোসার, গোবরসার কম্পোস্টসহ বিভিন্ন জৈবসার ব্যবহার করে লালশাক, কলমিশাক, পটোল, করলা, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, কলা, ফলনো হয়। ফসলের ক্ষতিকারক রোগবালাই দমনে বাঁশ পদ্ধতি, ফেরোমন ফাঁদ, ফেরোমন লিউর, আলোর ফাঁদ, গোবর, হলুদ, আঠালো ফাঁদ, জালসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক উপায় ব্যবহার করা হয়। এতে উৎপাদন ব্যয়ও কমে যায়। এছাড়াও কৃষি অফিসের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনের রাসায়নিক কীটনাশক মুক্ত 'নিরাপদ সবজি বাজার' এখনও জনপ্রিয়। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় এলাকায় অসংখ্য মানুষ জৈব সার তৈরি করে লাভবান অনেকেই।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলমগীর কবির জানান, বালাই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। কর্মসূচির কার্যক্রম সমাপ্ত হলেও এর প্রভাব অধ্যবধি মাঠে বিদ্যমান। চাষিরা এই পদ্ধতি সাদরে গ্রহন করছে। বিস্তর এলাকা জুড়ে চাষিরা ওই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব উপায়ে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ, কৃষি, কৃষক ও জনস্বার্থের উন্নতি সাধন করাই এর লক্ষ্য। আইপিএম পদ্ধতির সুফল সকল চাষির কাছে পৌছে দিতে সরকারের কৃষি বিভাগ নিরন্তন চেষ্ঠা চলাচ্ছে বলে দাবী এই কৃষি কর্মকর্তা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: