ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই চলাচলের একমাত্র ভরসা শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর

রাজেশ গৌড়,দুর্গাপুর | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:০১

সংগৃহীত

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের গোদারিয়া বাজার সংলগ্ন স্থানে বালছ নদীর উপর ব্রিজ না থাকায় দুই ইউনিয়নের ১৫ টি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা স্থানীয়দের অর্থায়নে নির্মিত বাঁশের সাঁকো। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও নির্মাণ হয়নি এখানে একটি ব্রিজ । ফলে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুকি নিয়ে নদী পার হতে হয় গ্রামবাসীদের। এতে প্রায়ই নদীতে পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটছে। প্রতিদিন কাকৈরগড়া ও বাকলজোড়া ইউনিয়নের গোদারিয়া,নাগপুর, গোপালপুর, বিলাশপুর, গোফিনাথপুর, সাংসা, গুজিরকোনা গ্রাম সহ প্রায় ১৫টি গ্রামের লোকজন এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করে।সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে হেঁটে পারাপার সম্ভব হলেও যানবাহন চলাচল করা একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিজ না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব‍্যবসা বানিজ‍্য সহ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। নদীর দু পাড়ে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুকি নিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়।ফলে জরুরি অনেক সুযোগ-সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এই এলাকার বাসিন্দারা।স্থানীয়রা ব্রিজ নির্মানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


গোদারিয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মিয়া বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় ব্রিজ নির্মাণ করা হবে । কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ আমাদের খোঁজ-খবর রাখেনা । আমরা অনেক দিন ধরে বালছ নদীর উপর একটি ব্রিজের স্বপ্ন দেখছি কিন্তু আমদের স্বপ্ন আজই পর্যন্ত বাস্তবে পরিনত হল না।

নাগপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজ মিয়া বলেন, সরকার দেশের কত জায়গায় কত উন্নয়ন করছে । কিন্তু আমাদের এলাকায় এই ব্রিজটি নির্মাণ আর হলো না। আমরা আর কতদিন কষ্ট করবো এই ব্রিজটির জন্য। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই আমাদের এই ব্রিজটি নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য।

গোফিনাথপুরের কৃষক আজিম খাঁ বলেন, একটি ব্রিজের অভাবে আমাদের জমি থেকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে খুব কষ্ট হয়। ফলে বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে কৃষিপণ্য নিতে দ্বিগুণ খরচ হয় । এতে আমরা উৎপাদিত পণ্যের নায্যামূল্যে থেকে বঞ্চিত হই। সরকারের কাছে দাবী আমাদের মত গরীব অসহায়দের কথা চিন্তা করে একটা ব্রিজ নির্মাণ করে বালচ নদীতে।

শিক্ষার্থী এনামুল বলেন, বাঁশের সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে ভয় করে তারপরও যেতে হয়। ব্রিজটি খুব ঝূঁকিপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী আমাদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে ব্রিজটি যেনো করে দেই।

দক্ষিন গোপালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয় আসে। নদীতে বেশি পানি থাকলেও অনেক অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসতে দিতে ভয় পায়। যার কারনে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বালচ নদীতে ব্রিজ নির্মাণ হলে শিক্ষাক্ষেত্রে সহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের বিকাশ ঘটবে এ এলাকায়।

কাকৈরগড়া ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু তালুকদার বলেন, এই ব্রীজটি অত‍্যান্ত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রীজ। এই ব্রীজটি দিয়ে দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আসা যাওয়া করে। এখানে পাকা ব্রীজ না থাকায় মানুষ অনেক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, শিক্ষার্থী ও নারীরা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন মহলের সাথে যোগাযোগ করেছি ব্রীজটি নির্মাণের ব‍্যাপারে।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান বলেন, বালছ নদীতে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: