প্রশংসা-ভালোবাসায় পাবনার এসপি মহিবুলকে বিদায়

পাবনা প্রতিনিধি | ২৮ আগষ্ট ২০২২, ২০:৪৬

সংগৃহীত

সহকর্মীদের চোখের জল আর ফুল সজ্জিত গাড়ির রশি টানার মতো ভিন্ন ধরণের এক আয়োজনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে পাবনার পুলিশ সুপার (অতিরিক্তি ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।

এ সময় পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) সভাপতি এসপির সহধর্মীনি শাহরিনা জাহানকেও বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়।

শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলে সজ্জিত গাড়িতে ফুলের রশি বেঁধে পুলিশ লাইনস মাঠে বিদায় জানানো হয়। এর আগে সকাল ১১টায় পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জাঁকজমকপূর্ণ বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা পাবনার বিদায়ী পুলিশ সুপারকে তাঁর সততা, নিষ্ঠা, সামাজিক কর্মকান্ডসহ পেশাগত কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তারা বলেন, এসপি মহিবুল তাদের সঙ্গে দেড় বছর সময় কাটিয়েছেন, তার কর্মদক্ষতা ও মানবিক কাজ অনুপ্রেরণা যোগাবে। সারাজীবন সবার হৃদয়ে থাকবেন। কর্মজীবনে একজন এসপি তার সহকর্মীদের এত স্নেহ ও ভালবাসা দিতে পারেন সেটা অন্য এসপির সময় দেখা যায়নি।

সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশী সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি সদাচারন করতেন। অনুষ্ঠানে জেলা পুুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে মানপত্র, ফুলের তোড়াসহ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণ পুলিশের কাছে সেবা না পেলে আস্থার জায়গাটা আর থাকেনা। এই বোধ সব পুলিশের মধ্যে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি। যতদিন পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করবেন মনে করবেন এটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। পুলিশের পোষাক পেলেই আপনি কি যেন হয়ে গেছেন এটা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। একজন পুলিশ সদস্যর জন্য পুরো পুলিশের বদনাম হবে এমন কোন কাজ করবেন না। পুলিশের চাকরি মানে ব্লেডের উপর দিয়ে হাঁটা, একটু ফসকে গেলেই রক্তাক্ত হবে এটা মনে রাখতে হবে। মানবিক দিক বিবেচনা করে গরীব অসহায়দের জন্য ভাল সার্ভিস দিবেন। থানায় কোন মানুষকে হয়রানী করবেন না। সবার সঙ্গে বন্ধুসূলভ আচরণ করতে হবে। সেবা নিতে আসা সবার ক্ষেত্রে সঠিক পরামর্শ দিবেন।

মহিবুল বলেন, পাবনাবাসীর ভালবাসায় তিনি মুগ্ধ। সারাজীবন পাবনার মানুষের এই ভালবাসা মনে রাখবেন। ১৮ বছরের কর্মজীবনে এমন সুন্দর মুহূর্ত কখনো কাটেনি। যোগদানের প্রথমদিনে সাংবাদিকদের উদ্যেশ্য করে বলেছিলেন পুলিশ হবে জনগণের প্রথম ভরসাস্থল। পাবনায় থাকার শেষদিন পর্যন্ত সেটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের কাছে ভুল করে থাকলে আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেনো বাকি দিনগুলো যেভাবে আমার চাকরি জীবনে মানুষকে সেবা দিতে পেরেছি, সেভাবে পারি। আমি যেমনভাবে মাদকের বিরুদ্ধ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আপস করি নাই এবং ভবিষ্যতে আমি যেনো সেসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ও কোন অপশক্তির বিরুদ্ধে আপস না করি।’

এ সময় পুলিশ সুপার আবেগপ্রবণ হয়ে অশ্রুসিক্ত হন। উপস্থিত জেলা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আবেগঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এ সময় পিবিআই পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী, পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, সহকারি পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) সজিব সাহরীন, সুজানগর সার্কেলের সিনিয়র সহকারিণী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, বেড়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কল্লোল কুমার দত্তসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি পাবনায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন এবং চলতি বছরের জুন মাসে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পান। তাকে র‌্যাবে বদলি করা হয়েছে। যোগদানের পরই পাবনায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ায় জেলাবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হোন। এরপর ধারাবাহিকভাবে ৯ উপজেলায় ইউপি নির্বাচন এবং বেড়া পৌরসভায় একইভাবে সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণভাবে নির্বাচন উপহার দেন তিনি। সবশেষে এ বছরের জুন মাসে সদর উপজেলার বিরোধপূর্ণ ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও তার প্রশংসার ঝুলি ভারী করে। এভাবেই কর্মকালের মাত্র দেড় বছরে মাদক, সন্ত্রাস দমন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশংসনীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করে রাজশাহী বিভাগে একাধিকবার জেলার শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হন। এ সময়ের মধ্যে পাবনা পুলিশও একাধিকবার বিভাগে শ্রেষ্ঠ জেলা পুলিশ নির্বাচিত হয়।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: