যাত্রীদের দুর্ভোগ, হয়রানির একগুচ্ছ অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে সীমিত পরিসরে চলছে ট্রেন, ভোগান্তি চরমে

মোশতাক আহমেদ শাওন | ১০ আগষ্ট ২০২২, ০৫:১১

সংগৃহীত

যাত্রী সাধারণের চাপ থাকলেও রহস্যজনকভাবে সীমিত পরিসরে চলছে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে ট্রেন।

তার উপর আকষ্মিকভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বাস ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ট্রেনে যাত্রীদের চাপ আরেক দফা বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি ট্রেনের সংখ্যা। আগে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে দিন-রাত ৩২ বার ট্রেনের আসা যাওয়া থাকলেও এখন তা ১৬ বারে নেমে এসেছে। তাও আবার নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন আসে না। ফলে যাত্রী ভোগান্তি চরমে পৌছেছে। 

রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, ট্রেনের একবার আসা-যাওয়াকে এক পেয়ার বলা হয়। পূর্বের ট্রেন সময়সূচি অনুযায়ী ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন ১৬ পেয়ার ট্রেন চলাচল করত। কিন্তু এখন সেটা কমে দাড়িছে ৮ পেয়ারে। পূর্বের সময় অনুয়ায়ী ট্রেন চলাচলের সিরিয়াল নম্বর ২১৭, ২১৮, ২২১,২২২, ২২৩, ২২৪, ২২৬, ২৩৫, ২৩৬, ২৩৭, ২৩৮ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে ডেমু ট্রেন। 

এদিকে এসব সিরিয়ালের সময়ে ট্রেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাড়িয়ে থাকে । অন্যরুটেও চলে না। অথচ যাত্রীদের চাহিদা আছে। ট্রেন চালক মাস্টার সবই আছে তবুও রহস্যজনক কারণে কমেছে ট্রেনের পেয়ার।

সরেজমিনে জেলার কয়েকটি রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা য়ায়, যাত্রীদের দুর্ভোগ, হয়রানি পাশাপাশি একগুচ্ছ অভিযোগ। এই রুটে ঘন্টাখানেক পর পর ট্রেন চলাচল থাকায় নিরুপায় হয়ে অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে বাসে চলাচল করতো। কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধিতে বাসের অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে এখন ট্রেনে গন্তব্যে যাওয়ার ভীড় করছে যাত্রী সাধারণ। কিন্তু ট্রেন না পেয়ে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। 

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ভুক্তভোগী আলমগীর। সকালে চাষাড়ার বাস কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন ঘড়ির কাটায় ১০.১৫ মিনিট। এসময় ট্রেন আছে ভেবে চলে যান চাষাড়া রেল স্টেশনে। কিন্তু গিয়ে শুনেন সাড়ে ১০ টার ট্রেন আসবে না। পরবর্তী ট্রেন আসার সময় দুপুর ১২.১০ মিনিট। 

তিনি বলেন, মাসের মাত্র শুরু, এই সময়ে বেতন এখনো পাইনি। হাতে কোন অতিরিক্ত টাকা নেই। বাসের ভাড়া বেড়ে গেছে, এসে ট্রেন পাই না। ট্রেন কম চলে। এসব গরিবের উপর জুলুম। কিন্তু চাকরি বাঁচাতে হলে ঢাকা যেতে হবেই। তার মতো আরো অনেকেই স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে ফিরে যান। 

নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনে দেখা হয় মোসলেমা খাতুনসহ কয়েকজন এনজিও কর্মীদের সাথে। মোসলেমা খাতুন বলেন, এনজিও তে কাজ করি। যাতায়াতের একটা নির্দিষ্ট বাজেট থাকে। বাসে ভাড়া বেশি হওয়ায় ট্রেনে যাওয়ার জন্য স্টেশনে এসেছি। এসে দেখি ট্রেন যাবে না। দুপুর থেকে বিকালের পর্যন্ত ট্রেন নাই। স্টেশনে বসে থেকেই বা কি করবেন কুলকিনারা না পেয়ে চলে গেলেন বাস স্ট্যান্ডে। 

নারায়ণগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী জামিল বলেন, নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ট্রেনে যাতায়াত করে। কিন্তু ট্রেন আগের মতো না আসায় আমাদের ট্রেনের জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হয়। কিংবা বাসে ফিরতে হয়। বাসের ভাড়াও এখন অনেক বেশি। আমারা শিক্ষার্থীরা আগের সময়মতো ট্রেন চাই।  

চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, স্কুল কলেজ খোলার পর শিক্ষার্থীদের চাপ বেড়েছে। কিন্তু ট্রেনের পূর্বের সময়সূচি এসে ট্রেন না পেয়ে প্লাট ফরমে রাগারাগি করে। দুপুর ১২টার পর থেকে বিকাল ৫ টার আগে কোন ট্রেন নাই। এসময়ে যাত্রীদের চাহিদা আছে। রাত ৮টার পরে আর ট্রেন নাই। এখন ট্রেন আসে যায় ১৬ বার। আগে চলত ৩২ বার।    

নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন সময়সূচির বিষয়টি রেলওয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়ে থাকে। করোনার পূর্বে ১৬টি পেয়ারে ট্রেন চলত। করোনার সংক্রামণ রোধে ট্রেন চলাচল কয়েক মাস বন্ধ ছিল। এরপর ১৬ পেয়ারের বদলে ১০টি পেয়ার চালু হয়। ডেমু ট্রেন নষ্ট হওয়ার পর ৮ পেয়ার চলছে। বাকি পেয়ারগুলো চালু হবে কি হবে না সেটা বলতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, বাস ভাড়া বৃদ্ধির পর ট্রেনের যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। আগের থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি যাত্রী যাতায়াত করছে ট্রেনে।

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম আহবায়ক রফিউর রাব্বি এ বিষয়ে বলেন, সড়কে সব পরিবহন পূর্বের মতোই চলছে কিন্তু ট্রেন পূর্বের সময় অনুযায়ী চলছে না। করোনার পূর্বে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে যতবার ট্রেন চলত এখন চলে তার অর্ধেক বার। এই কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। 

আবার দেশে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তেলে চালিত পরিবহনের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে ট্রেনের চলাচল কমিয়ে পরিবহন মালিকদের সুবিধা করা হয়েছে। পরিবহন মালিকদের সাথে মিলে সিন্ডিকেট করেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই কাজ করছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: