বান্দরবানে সোলার প্যানেল দেওয়া নামে টাকা তোলার অভিযোগ

আকাশ মারমা মংসিং,বান্দরবান | ২৯ জুলাই ২০২২, ২৩:০৭

সংগৃহীত

বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২নং তারাছা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সোলার প্যানেল দেওয়া নাম করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চেসথুই মারমা বিরুদ্ধের। বিনামূল্যের সরকারি সোলার প্যানেল বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও প্রতিটি সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে। প্রকল্পটি ২০১৫-১৬ অর্থবছর অনুমোদন হয়ে বাস্তবায়ন শুরু হয় পরবর্তী অর্থবছর থেকে। শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের জুন মাসের দিকে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎবঞ্চিত পরিবার এবং বিভিন্ন সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে সোলার প্যানেল স্থাপন করে দেয়ার কথা। সেটি না করে সোলার দেওয়া নামে টাকা লুটে নেওয়ার পায়তারা করছে সেসব ইউপি সদস্যরা।

সরেজমিনে দিয়ে দেখা গেছে, তারাছা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আওতায় গ্রাম রয়েছে ৫টি। ঘেরাও মুখ পাড়া, সুন্দরী পাড়া, বলমাফাং পাড়া, অংতং পাড়া ও মঞো পাড়া। এই পাঁচটি গ্রামের পরিবারের সংখ্যা রয়েছে ১৯০টি । সেখানে মারমা ও খুমি সম্প্রদায়ের দুই জনগোষ্ঠির বসবাস। সবাই কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। কৃষি কাজ করে চলে তাদের জীবনযাপন। অতি দুর্গম এলাকার হওয়াতেই সেসব গ্রামগুলোতেই পৌছাতে পারেনি কোন বিদ্যুৎ। সেসব এলাকাতেই বিদ্যুৎ পৌছাতে না পারলেও অধিকাংশ পরিবার নিজ অর্থের সোলার কিনে ব্যবহার করে থাকেন। আবার অনেকে সামর্থ্য না থাকাতেই ঘরে জ্বলছে হারিকেনের আলো। দুর্গম এলাকাগুলোতে বিদ্যুতের আলো পৌছাতেই না পারলেও সোলার বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোর পৌছে দেওয়ার উদ্যেগ নিয়েছে সরকার। এছাড়াও বিনা মূল্যে সোলার বিতরণ প্রকল্পের কাজ। কিন্তু সরকার থেকে বিনামূল্যে বলা হলেও সোলার প্যানেল দেয়া হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। তবে সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের সোলার প্যানেল কেন টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে প্রশ্ন এলাকাবাসীদের।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত বছর থেকে সোলার দেওয়ার কথা আশ্বাস দিলেও সেটি এখনো দেননি ইউপি সদস্যরা। শুধু দেওয়ার নামে কথা বলে টাকা তুলে নিয়ে গেছে ইউপি সদস্য। সরকার থেকে দেওয়া বিনামূল্যে সোলার প্যানেল উপহার দিলেও সেটিকে নিতে প্রত্যেক পরিবার থেকে দিতে হয়েছে ১৭০০ টাকা। টাকা না দিলে সোলার প্যানেল দেয়া হবে নাহ বলে হুমকি দিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। এছাড়াও অনান্য ওয়ার্ডের একই অবস্থা। সেখানেও সোলার দেওয়ার নাম করে টাকা তুলেছেন ১৫০০ টাকা । অথচ রোয়াংছড়ি উপজেলায় সোলার প্যানেল নামের প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন হয়নি। তবে তাদের কাছ থেকে কেন টাকা তুলে নিয়ে গেছে ইউপি সদস্য এমন হাজারো প্রশ্নের অভিযোগ উঠে এসেছে এলাকাবাসীর কাছ থেকে।

 

অংতং পাড়া বাসিন্দা নাফ্রাং খুমি বলেন, আমাদের গ্রামের বিদ্যুৎ নাই। তাই সোলার পাওয়ার আশায় ১৭০০ টাকা করে প্রত্যেক গ্রামের মানুষেরা ইউপি সদস্যকে দিয়েছে। গত বছর থেকে দিবে দিবে শুনলেও এখনো দেয়নি।

 

ঘেরাও মুখ পাড়া বাসিন্দা উহ্লাসিং বলেন, আমাদের গ্রামে প্রত্যেক পরিবার থেকে ১৭০০ টাকা করে উঠে নিয়ে গেছে ইউপি সদস্য চেসথুই মারমা। শুধু আমাদের গ্রাম নয় তার ওয়ার্ডের ৫ টি গ্রাম থেকে টাকা তুলে নিয়েছে সোলার দেওয়ার কথা বলে।

মংঞো পাড়া বাসিন্দা হাচন খুমি বলেন, বিনামূল্যের দেওয়া সোলার প্যানেল এখন টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে। অনান্য পাড়াতে ১৫০০ টাকা করে দিচ্ছে । সরকার থেকে বিনামূল্যে দেওয়া সোলার কোন সূত্রে আমাদের থেকে টাকা তুলছে মেম্বার।

টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চেসথুই মারমা সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করে জানান, তিনি প্রতি পরিবার থেকে ১৫০০ টাকা করে তুলেছেন। এবং ২০০ টাকা এলাকাবাসীর বহন খরচ দিয়েছেন।

কেন বা কি কারণের তুলেছেন সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,পূর্বের যারা মেম্বার ছিল তারাও নাকি টাকা তুলেছেন। সে প্রেক্ষি্তে তিনিও টাকা তুলেছিলেন। তবে টাকা তোলার কারণটা তিনি বলতে পারেননি।

এ বিষয়ে তারাছা ইউপি চেয়ারম্যান উনুমং মারমা বলেন, টাকা তোলার ব্যাপারে আমি জানিনাহ। তবে বিষয়টি ব্যাপারে আমি খটিয়ে দেখছি। যারা অভিযোগ করেছে তাদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানাবো। 

রোয়াংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান চহাইমং মারমা বলেন, এখনো রোয়াংছড়ি উপজেলার সোলার দেয়ার প্রকল্প আসেনি। এবং সেটি কবে আসবে বলে যাচ্ছে নাহ।

বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের জুনিয়র কনসালটেন্ট পলাশ দেওয়ান জানান, রোয়াংছড়ি উপজেলায় সোলার প্যানেল প্রকল্পের কোন নির্দেশনা আসেনি। এবং এই কার্যক্রমটি কখন বাস্তবায়িত হবে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে নাহ। যদি সোলার প্যানেল প্রকল্পটি আসে তাহলে ঐ ওয়ার্ডের তদন্তনুসারে দেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: