মাগুরায় পুলিশ কর্মকর্তা লাবনীর ‘আত্মহত্যা’, সকালে তাঁরই সাবেক দেহরক্ষীর লাশ উদ্ধার

আলী আশরাফ, মাগুরা প্রতিনিধি | ২২ জুলাই ২০২২, ০৭:১৬

সংগৃহীত

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি খন্দকার লাবণী ৩০ তম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার। তার নানা বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে ২০ জুলাই বুধবার দিনগত রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে ওরনা দিয়ে ঝুলন্ত ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেন।

পরবর্তীতে বাড়ির মানুষ বিষয়টি বুঝতে পারলে তাৎক্ষণিক খন্দকার লাবনী কে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে আজ ২১ শে জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে মাগুরা পুলিশ লাইনের কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান (২৩) নিজ নামে ইস্যু করা অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। গুলিবিদ্ধ লাশ পুলিশ লাইনের ব্যারাকের ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া গ্রামে। দেড় মাস আগে তিনি খুলনা থেকে মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন।

ওদিকে খন্দকার লাবণী খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই দিন আগে ছুটিতে মাগুরায় আসেন তিনি। 

মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম আজ দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান দেড় মাস আগে মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন। এর আগে তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি খন্দকার লাবণীর দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

দুটি ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটুকু নিশ্চিত, দুজনেই আত্মহত্যা করেছেন। দুজনের আত্মহত্যার কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত করছে। এ ছাড়া আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, খন্দকার লাবণীর বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরালিদহ গ্রামে। তাঁর স্বামী তারেক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে কর্মরত। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এখন ভারতে চিকিৎসাধীন।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, গতকাল রাত ১২ টার দিকে নানার বাড়িতে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন খন্দকার লাবণী।

বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবণীর বাবা খন্দকার শফিকুল আজম আজ দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে তাঁদের স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে দ্বন্দ্ব লেগে ছিল। এ কারণে একে অপরকে এড়িয়ে চলছিল। স্বামী-স্ত্রীর এই দ্বন্দ্বের কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে। সে এর আগেও আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে।

অন্যদিকে, কনস্টেবলের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, মাহমুদুল ডিউটি শেষে ভোরে ব্যারাকে ফিরে ছাদে গিয়ে নিজ নামে ইস্যু করা শটগান দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুলির শব্দ শুনে অন্যরা গিয়ে তাঁকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তাঁর থুতনি দিয়ে গুলি ঢুকেছে। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা এখনো জানা যায়নি।

মাহমুদুল হাসানের বাবা মো. এজাজুল হক খান চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। আজ দুপুরে তিনি বলেন, ‘দুই বছর চার মাস আগে আমার ছেলে পুলিশে যোগ দেয়। দেড় মাস আগে মাগুরায় আসার আগে সে খুলনা মেট্রোপলিটনে কর্মরত ছিল। 

গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে আমার সর্বশেষ কথা হয়। সে জানায় যশোর রোডে ডিউটিতে আছে। তাঁর সঙ্গে স্বাভাবিক ও হাসি-ঠাট্টামূলক কথা হয়। কিন্তু কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে সেটা বুঝতে পারছি না।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: