লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন গরুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত গুরু থাকা সত্ত্বেও আশানুরূপ ক্রেতা নেই। এতে করে ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। আবার কোনো কোনো গরুর বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকেই হাসিল আদায় করতে দেখা যায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতা- বিক্রেতা উভয়েই। এরকমটি হয়েছে চন্দ্রগঞ্জ থানার মান্দারী বাজার গরুর হাটে। ইজারাদাররা গত বছরও ক্রেতা বিক্রেতার কাছ থেকে হাসিল আদায় করেছিলো।
ছোট থেকে বড় সব ধরনের গরুর দেখা মিলছে লক্ষ্মীপুর পৌর গরুর বাজারে। ক্রেতাদেরও কমবেশি ভিড় রয়েছে। হাটটিতে ৪০ হাজার থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে- এমন গরুও রয়েছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, হাটে এখনো ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই। এবার গরুর দামও কম। ফলে অনেককেই লোকসান গুণতে হবে। এছাড়া ঈদের আরও চার দিন বাকি থাকলেও অনেককেই কোরবানির গরু কিনতে দেখা গেছে। আবার অনেকে এসে ঘুরে ফিরে গরু দেখে চলে যায়। হাসিল পরিশোধে এই বাজারের বুথে ক্রেতাদের তেমন ভিড় চোখে পড়ে না। বুধবার (৬ জুলাই) লক্ষ্মীপুর পৌর গরুর বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দুটি ছোট গরু নিয়ে এসছেন হোসেন নামের এক খামারি। বাড়িতে লালন পালন করা গরু দুটি বছর খানেক আগে লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। সাংবাদিক অ আ আবীর আকাশকে হোসেন জানান, সোমবার রাতে লক্ষ্মীপুর পৌর গরুর বাজারে গরু নিয়ে এসেছেন। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত গরু দুটির দাম লাখ টাকায় উঠেনি। দাম আর বেশি না উঠলে তাকে লোকসান গুণতে হবে।
একইভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গরু আনা আরেক ব্যবসায়ী তসলিম ও ফজল জানান, তাদের গরুটি দু'মাস আগে ৪০ হাজার টাকায় কেনা ছিল। মঙ্গলবার এই বাজারে গরুটির দাম ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা বলা হচ্ছে। এই দামে গরু বিক্রি করতে হলে তাকে অন্তত ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে মাঝারি আকারের গরু নিয়ে এসেছে খামারি জসিম। সাংবাদিক অ আ আবীর আকাশকে তিনি জানান, তার ১০ মণ ওজনের গরুটির দাম বলা হচ্ছে ১ লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। অথচ এই গরুটি এক বছর আগে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা দিয়ে কেনা ছিল। এক বছরে গরুটি লালন পালনে খরচ হয়েছে ৭৪ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘গরুটির ওজন ১০ মণ হতে পারে। এর দাঁত চারটি। বাজারে ক্রেতা নেই। যারা আসছেন তারা খুবই কম দাম বলছে। ১২ মণ ওজন হবে এমন গরুর দামও ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার বলা হচ্ছে।’ তার গরুটি লাখ খানেক টাকা লোকসান হতে পারে বলেও ধারণা করছেন তিনি। জসিম আরও বলেন, ‘লস হলেও গরু তো বেঁছতে হবে। দেখা যাক কত বেছতে পারি। গ্রামে আরও তিনটি গরু বিক্রি করেছি। তেমন লাভ না হলেও লস হয়নি। শহরের চেয়ে গ্রামে গরুর দাম আরও বেশি।’
রাজশাহী থেকে ১২ মণ ওজনের একটি গরু নিয়ে এসেছেন বাবু। অস্ট্রেলিয়ান এই গরুটির দাম বলা হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। বিক্রেতা বাবু বলছেন, ‘এটি আমাদের নিজস্ব খামারের গরু। তিন বছর বয়স হবে। নিজেই পুষেছি। ৫ লাখ টাকার কমে এই গরু ছাড়া যাবে না। অথচ মানুষ দাম বলছে সাড়ে পৌনে দুই লাখ টাকার মতো। বাজারে ক্রেতা নেই। গতবছর এই সময়ে অনেক ক্রেতা ছিল।’
যশোরের গরুর ফার্ম থেকে এ বাজারে তাদের ১৫টি গরু তুলেছে। এর মালিক দুলাল হোসেন চকদার বলেন, ‘আমাদের আটটি গরু এরই মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছি। সবগুলো গরুর দামই দেড় লাখ লাখ টাকার ওপরে।’ ‘গরুর বাজার খুব একটা খারাপ না। শহরে শেষ দিকে সবাই গরু কিনে। তাই বাজারে এখনো ক্রেতা কম।’ তবে না বেচতে পারলে লস হবে।
গরু কিনতে আসা বেসরকারি চাকুরিজীবী হাসিব মিয়া। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় গরু কিনতে চাচ্ছি। কিন্তু পছন্দমতো হচ্ছে না। ছোট গরুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে ‘
একই রকম কথা জানান ব্যবসায়ী শওকত খান। তিনি বলেন, ‘এবার ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। ঢাকাতে একাই কোরবানি দিতে হবে। ইচ্ছে ছিল ৫০ হাজার টাকার মধ্যে একটি গরু কেনার। কিন্তু ছোট গরুর দাম অনেক বেশি। এই দামে কিনতে না পারলে অন্যদের সঙ্গে শেয়ারে কোরবানি দিতে হবে।’
উত্তরবঙ্গের যশোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী বেনাপোল থেকে আসা গরু ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। যদি গরু আশানুরূপ বিক্রি না হয় তাহলে গতবারের মতো এবারও কেজি ধরে কসাইদের কাছে বিক্রি করে যেতে হবে বলে হতাশা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: