আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান:
ভারী বর্ষণের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বান্দরবানের পাহাড়ের বসবাসরত সাধারণ মানুষেরা। ফলে যেকোন সময় পাহাড়ধসে ঘটতে পারে প্রাণহানির ঘটনা। এ অবস্থায় আতঙ্কে দিনরাত পার করছেন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ৩০ হাজার পরিবার।
সরকারি দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৫জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২ জন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০জন পাহাড়ধসে মারা গেছেন।
এছাড়াও ২০১৫ সালে লামায় ৪জন, সিদ্দিকনগরে ১ জন ও সদরের বনরূপা পাড়ায় ২ জন, ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় ৭ জন ও রুমা সড়কে ২৩ জুলাই ৫ জন, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কালাঘাটায় ১ জন ও লামায় ৩ জন, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই লামাতে ১ জন, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ জন ও ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাইঙ্গ্যা ঝিরিতে এক পরিবারের ৩ জন পাহাড়ধসে নিহত হন।
জানা গেছে, বান্দরবান সদরের পাহাড়ের বসবাসরত ইসলামপুর, লাঙ্গিপাড়া, হাফেজ ঘোনা, কালাঘাটা, বনরূপা, ক্যাচিং ঘাটাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। এছাড়াও উপজেলার লামা, আজিজনগর, ফাসিয়াখালী, ফাইতং, গজালিয়া, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। এ অবস্থায় এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিলে পাহাড় ধসে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
পরিবেশ বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে ৩০ হাজারের বেশি পরিবার। এ বছর পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড় ওঠায় গত বছরর তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও পরিবারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়। বর্ষাকালে টানা বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে সেই পাহাড়ের কাটা অংশ ধসে গিয়ে ঘরের ওপর পড়ে। এতে মাটি চাপা পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বিগত বছরগুলোতে এভাবেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছিল।
এদিকে ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যাওয়া নির্দেশ দিয়েছে পৌরসভার ও প্রশাসন। যেকোন মূহুর্তের পাহাড় ধ্বসে কোন প্রাণহানী না ঘটে। শুধু তাই নয় প্রশাসন জেলা শহর জুড়ে মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। পাহাড়ধসের হওয়ার আগে পাহাড়ের বসবাসরত সাধারণ মানুষের কোন অপ্রত্তিকর দুর্ঘটনা না ঘটে।
বান্দরবান লাঙ্গী পাড়া বসবাসকারী ওসমান সাহা জানিয়েছেন, বাড়িটি পাহাড়ের উপরে। যারা নিচে থাকে তারা প্রভাব দেখিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে ফেলায় আমার বাড়ি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনও মুহূর্তে আমার বাড়িটি ধসে পড়তে পারে।
মুজিব নগরে বাসিন্দা ইসমাইল বলেন, সরকার আমাদের নিরাপদে রাখতে আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করলে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে থাকতাম না। আমরা বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করছি। এছাড়া আমাদের যাওয়ার মতো কোনও জায়গা নেই।
বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, বেশি বেশি পাহাড় কাটলে পাহাড়ের ওপরের আস্তর সরে গিয়ে ভেতরের নরম অংশ বেরিয়ে আসে। আর এর ফলে ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়। এ অবস্থায় বর্ষার ভারী বর্ষণে পাহাড়ধস হয়।
এ ব্যাপার বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কায়েসুর রহমান বলেন, বান্দরবানে এখন প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। তাই পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন পাদদেশে বসবাসকারীরা। তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা স্ব-স্ব উপজেলায় ঝুঁকিতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাবেন। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: