তাড়াইলে শেষ হলো বোরো ধান কাটা কৃষকের মুখে সোনালি হাসি

মো.সুমন মিয়া,তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি | ২ জুন ২০২২, ০১:৫০

সংগৃহীত

দিগন্ত বিস্তৃত হাওরাঞ্চলে ঢেউ খেলানো পাকা সোনালি বোরো ধান কাটা শেষ করেছে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার কৃষকেরা। 

আকাশে ছুটন্ত মেঘের ভেলা, পাখির কলতান, সারি সারি কুঁড়েঘর, হাওরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নরসুন্ধা নদীতে রাজহংসের জলকেলি ও শিশুদের দুরন্তপনায় চিরন্তন বাংলার প্রকৃতির রূপ যেন আছড়ে পড়েছিল হাওরাঞ্চলে। বোরো ধান কাটার মৌসুমে প্রকৃতি যেন সেখানে স্বরুপে জেগে উঠেছিল। এবার অনাবৃষ্টি ও অকাল বন্যা না হওয়ায় স্বস্তিতে বোরো ধান গোলায় তুলতে পেরে উপজেলার কৃষকদের মুখে বইছে সোনালী হাসি ।  

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী (২৫ মে ২০২২) বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাজারে যেমন উঠতে শুরু করেছে নতুন ধান তেমনি কমতে শুরু করেছে ধানের দাম। এক মন ধানের মূল্যে মিলেছে একজন শ্রমিক। দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং কৃষি শ্রমিকের মুজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কৃষকের। তাছাড়া চলতি মৌসুমে নদীনালায় পানি না থাকা ও সেচে বেশি খরচ হওয়ায় উৎপাদন ব্যায় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কৃষকদের দাবি সরকার ঘোঘিত ২৭ টাকার স্থলে ৩০ টাকা কেজি দরে ধান খরিদ করলে কিছুটা লাভের মুখ দেখা যেতো। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর অত্র উপজেলায় বোর ধান ৯ হাজার ৫'শ ৪৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ২'শ ৫৭ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষমাত্রার চেয়েও উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১'শ হেক্টর বেশি জমিতে। অত্র উপজেলায় চালের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৪২ হাজার ৪'শ ৬০ মেট্রিকটন।

উপজেলার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান বাজারে ভিজা ধানের দাম ভালো। প্রতি মন ধান ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুধু ধান কাটা ও খলায় পৌঁছানো পর্যন্ত পারিশ্রমিক হিসেবে শ্রমিকদের ১০% থেকে ১২% ধান দিতে হয়। অর্থাৎ ১০০ বস্তা ধানের জন্য দেয়া হয় ১০-১২ বস্তা। আবার ধান মাড়াইয়ের জন্য ১০০ বস্তায় দিতে হয় ৫-৭ বস্তা। নগদ টাকায় ধান কাটলে দিতে হয় ৯০০-১ হাজার টাকা। প্রকারভেদে অর্থাৎ দুরের জমি থেকে কেটে আনলে দিতে হয় জনপ্রতি ১২'শ টাকা প্রতিদিনের মুজুরি। এছাড়া জমিতে চারা রোপন, সার, কীটনাশক দেয়ায় প্রচুর খরচ করতে হয়। আরও থাকে স্থানীয় মহাজনদের নিকট আগাম টাকা নেয়া যা ধান কাটার পর দ্বিগুণ থেকে তিনগুন টাকা ফেরৎ দিতে হয়। তাই বোরো ধান কাটার পর ভালো দাম পেলে কৃষকদের গোলায় সারা বছরের খাদ্য মজুদ করে রাখা সম্ভব হয়। নায্য মূল্য না পেলে কৃষকদের গোলায় সারা বছরের খোরাকের ধান রাখা সম্ভব হয় না।

উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের সহিলাটি গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দিন জানান, দুই বিঘা জমিতে উৎপাদিত ধানের মূল্যের সমান আমার খরচ হয়েছে। সরকারেরর ঘোষিত ২৭ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা কেজি দরে ধান খরিদ করলে আমরা একটু লাভের মুখ দেখতে পারতাম। তাছাড়া খাদ্য গুদামে আমাদের মতো কৃষকেরা ধান দিতে পারিনা কখনও। এক শ্রেণির লোক ওখানে সুবিধা পায়। ওইসব সুবিধাভোগী লোকদের সুবিধা দিতে পারলেই ধান দেয়া যায় খাদ্যগুদামে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, খরা, কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে এবছর বোরো ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাছাড়া সেচ, সার সরবরাহ ও কৃষি উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষিনির্ভর উপজেলায় মানুষ একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। তাই বোরো ধান তোলার সময় কৃষক পরিবারের সব সদস্য মিলে আনন্দের মধ্য দিয়ে গোলায় ধান তুলেছেন।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: