তিতাসের দুর্নীতিবাজ সাবেক কর্মচারীর বিপুল সম্পত্তি

সাভার প্রতিনিধি | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৫৩

সংগৃহীত

তিতাসের সাবেক তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী মো. জয়নাল আবেদীন গ্যাস চুরিসহ দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।

দুর্নীতির টাকায় নামে-বেনামে ঢাকার অদূরে সাভার ও ধামরাইয়ে একাধিক বাড়ি, মার্কেটে দোকান, বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি।

অবসরের পরেও তার দুর্নীতি থেমে নেই। বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ এনে দেওয়ার নাম করে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, সাভারের কাজী মোকমা পাড়ার ডি-৮/১ ঠিকানার নিজের ছয় তলা বাড়িতে প্রায় দুই যুগ ধরে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার মৃত মো. জিয়াউল হকের ছেলে জয়নাল আবেদীন তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ছিলেন, বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন।

চাকরিরত থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে তিতাসের গ্যাস চুরি ও অবৈধ গ্যাস লাইন বিতরণ করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত জয়নাল গত চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিতাসে কর্মরত থেকে তার ঘনিষ্ঠ সহচর ও ধামরাই উপজেলা যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোহিনূরের সঙ্গে মিলে অবৈধভাবে গ্যাস চুরি করে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে এই বিপুল সম্পত্তি অর্জন করেছে।

সাভারের কাজী মোকমা পাড়ার ডি-৮/১ বাড়িটি তিতাসে কর্মরত থাকাবস্থায় অবৈধ অর্থে তার মায়ের নামে জমি কিনেছেন। একই স্থানে পরে নিজের নামেও জমি কিনেছেন। সেখানে ৭.৫ শতাংশ জমির উপর একটি ৬ তলা বাড়ি ও দু’টি টিনশেড ভবন রয়েছে তার।

এমনকী নিজের এই বাড়িতেও প্রায় দুই যুগ ধরে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করে আসছিলেন জয়নাল। তার বাড়ির পাশে মৃত পুলিশ সদস্য কোরবান আলীর বাসার বৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে অবৈধভাবে নিজের গ্যাস গ্যাস সংযোগ নেন তিনি। গত জুলাই মাসে তিতাসের লোকজনের কাছে ধরা পড়ার পর তার বাসার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন তিতাসের কর্মকর্তারা।

তিতাসে কর্মরত থাকাবস্থায় সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিটি সেন্টারের পেঁছনে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থে আরেকটি বাড়ি কিনেছেন জয়নাল। এছাড়া, সাভার বাসস্ট্যান্ড থেকে নামা বাজারে যাওয়ার রাস্তায় বিসমিল্লাহ মার্কেটে দোকানও রয়েছে জয়নালের।

এছাড়া, ধামরাই উপজেলার সাং- ঝাউখন্ড এলাকায় জয়নালের ৫ তলা আরেকটি বাড়ি রয়েছে। ধামরাইয়ে তার বিরুদ্ধে সরকারের জমি নিজের নামে নামজারি করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বাসার কাজের মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার অভিযোগে ধামরাই থানায় ৫-৭ বছর আগে জয়নালের নামে একটি মামলা হয়েছিল বলে জানা গেছে। মামলার বাদীকে চাপ দিয়ে এবং কিছু টাকা দিয়ে তা ধামাচাপা দিয়েছে সে।

চাকরি থেকে অবসরের পরও সে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঘুষ আদায় করছে এবং বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন জনের ব্যক্তিগত জমির দলিল সংগ্রহ করে জালিয়াতির মাধ্যমে তা নিজের নামে করে আত্মসাৎ করছে।

কাজী মোকমা পাড়ায় মৃত পুলিশ সদস্য কোরবান আলী ৪ শতাংশ জমি কিনে ১৯৭৮ সাল থেকে বসবাস করে আসছিলেন। ২০২০ সালে কোরবান আলীর স্ত্রী মারা যাওয়ার জানা যায় যে, ওই জমিও গোপণে নিজের নামে নামজারি করে নিয়েছেন জয়নাল।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত দুই দশকে জয়নাল কোথায়, কি পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছে, তার অর্থের উৎস খোঁজ করলেই তার অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপকতার চিত্র উঠে আসবে।

জয়নালের স্ত্রী সেলিনা সুন্দরী (পিতাঃ নুরু মজুমদার) কাজী মোকমাপাড়া এলাকার শত শত মানুষকে সুদের ব্যবসার বেড়াজালে আটকে ফেলে তাদের সর্বশান্ত করছে।

সেলিনা সুন্দরী জয়নালের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার প্রথম স্ত্রী ধামরাইয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। প্রথম স্ত্রী অসুস্থ হলে তিনি গোপণে দ্বিতীয় বিবাহ করে সেলিনা সুন্দরীকে সাভারেই রেখে দেন। পরে প্রথম স্ত্রী মারা গেলে দ্বিতীয় বিবাহের কথা গোপণ রেখে জয়নাল প্রথম স্ত্রীর পেনশন সুবিধা ভোগ করছে, যা রাষ্ট্রীয় তহবিল আত্মসাতের নামান্তর।

মানুষকে সুদে টাকা দেওয়ার সময় বাড়ির দলিল বন্ধক রাখছে, পরে কৌশলে ও ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ওই সব জমি জয়নাল/সুন্দরীর নামে লিখে নিয়ে তা দখল কিংবা বিক্রি করে দিচ্ছে। দরিদ্র মানুষজনের কেউ এর প্রতিবাদ করলে তাদের ভাড়াটিয়া মাস্তানদের দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: