হরিরামপুরে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি | ৮ আগষ্ট ২০২২, ২৩:২৪

সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের জন্য নাস্তার বরাদ্দ আত্মসাত, নাস্তা এবং কো-অর্ডিনেটরদের সম্মানী ভাতা প্রদানে অনিয়ম এবং জাতীয় দিবস পালন না করে বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পের জেন্ডার প্রমোটর, কো-অর্ডিনেটর, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এসব জানা গেছে।

জানা যায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে হরিরামপুরে ১৩টি ইউনিয়নে একটি করে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে শিশুদের আবৃতি ও সংগীত শিখানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ক্লাবের সদস্যদের নাস্তার জন্য শুরু থেকে গত জুন পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাবে ৩৫ জনের জন্য ৩০ টাকা করে নাস্তার বরাদ্দ দেয়া হলেও ১০-২৫ টাকার নাস্তা সরবরাহ করা হয়েছে। জুলাই থেকে নাস্তার বরাদ্দ প্রতি সদস্যের জন্য ১৫ টাকা করা হলেও দেয়া হচ্ছে ১০ টাকা করে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম থাকলে তাদের বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। বছরে দুইটি সভার জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়াও, কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মহিলা ইউপি সদস্যদের সম্মানীর টাকাও ঠিকমতো দেয়া হয়নি। আর এসব অভিযোগ বেশিরভাগই সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মালা বড়াল এবং হিসাবরক্ষক মো. সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

প্রতিটি কেন্দ্রে নাস্তা সরবরাহ করেন প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত জেন্ডার প্রমোটররা। জেন্ডার প্রমোটর মনোয়ারা ও সীমা আক্তার জানান, গত জুন পর্যন্ত প্রতিদিন ৩৫ জনের জন্য ১০৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তাদেরকে অফিস থেকে ৫০০ টাকা দেয়া হয়েছে। সেজন্য কমমূল্যের খাবার সরবরাহ করেছেন তারা। বর্তমানে বরাদ্দ ১৫ টাকা করা হলেও তাদেরকে ১০ টাকা করে খাবার দিতে বলা হয়েছে। মনোয়ারা বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমাকে একটি করে কেন্দ্রে যেতে হয়। তার জন্য ভাড়া বাবদ আমাকে কোন টাকা দেয়া হয় না। ভাড়া বাবদও তো কিছু টাকা লাগে।”

প্রতি ক্লাবের কো-অর্ডিনেটরদের সম্মানী হিসেবে সর্বশেষ গতবছরের আগস্ট থেকে এবছরের জুন পর্যন্ত ১১ মাসের ২২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইউপি সদস্যদেরকে দেয়া হয়েছে ৮-১৪ হাজার টাকা করে। বাকি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বর্তমান মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) রওশন আরা এবং সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। গালা ইউনিয়নের ঝিট্কা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর লালমতি বেগম বলেন, তাদেরকে গত বৃহস্পতিবার ৮ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এর আগে তিনি সম্মানী বাবদ একবার ১৭০০ টাকা পেয়েছিলেন। ভেলাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর আছিয়া বেগম বলেন, তিনি পূর্বে ৪৫০০ টাকা পেয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি ৯ হাজার টাকা পেয়েছেন। বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর হাওয়া বেগম বলেন, তিনি গতবছর একবার ১৭০০ টাকা পেয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি ৮ হাজার টাকা পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মালা বড়াল বলেন, ‘‘আমার সময়ে উপস্থিতির হার অনুযায়ী সবাইকে নাস্তা এবং সম্মানী বিতরণ করা হয়েছে। জুন পর্যন্ত অডিট শেষ হয়েছে। অডিটের সময় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অন্যান্য আরও খরচ আছে। সেই টাকা কি আমার পকেট থেকে দিবো নাকি প্রকল্প থেকে দিবো?”

দিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. কাদের মোল্লা বলেন, ‘‘নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবৃত্তি ও গান শেখানো হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে। অনেক কিছু শিখতে পারছে। শিক্ষার্থীদের নাস্তা এবছরের শুরু থেকে দেয়া হচ্ছে। তবে এবছরও মাঝখানে দুই মাস শিক্ষার্থীদের নাস্তা দেয়া বন্ধ ছিলো।”

মুঠোফোনে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) রওশন আরা এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে কোন বক্তব্য না দিয়ে কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টা করলে তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে, হিসাবরক্ষক মো. সালাহ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘‘আগামীকাল সোমবার আমরা বাকি টাকা সবাইকে দিয়ে দিবো।”

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবারও ক্লাব ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভা হয়েছে। সভায় কেউ বিষয়গুলো বলেনি। বিষয়গুলো তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট পাঠানো হবে।”



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: