রমজান আর বৈশাখের খরতাপকে কেন্দ্র করে সবুজ তরমুজেও আগুন লেগেছে। যে আগুনে নিম্মবিত্ত তো দূরের কথা, মধ্যবিত্তরাই পুড়ে ছারখার। অথচ দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপদাহে ইফতারের প্রধান উপকরণ হওয়ার কথা তরমুজ। গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ পিস হিসাবে ক্রয় করে কেজি দরে বিক্রির এই কারসাজিতে নিন্ম ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। প্রচণ্ড গরম এবং মৌসুমের শুরু থেকেই তরমুজের দাম চড়া। প্রতিকূল আবহাওয়ায় তুলনামূলক ভাবে এবার তরমুজ উৎপাদন কম। আর এই সুযোগে ফায়দা লুটে নিয়েছে ফল ব্যবসায়ী ও তরমুজের বর্তমান আড়তদাররা।
কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী, কৃষকের কাছ থেকে পিস হিসেবে কিনে ভোক্তার কাছে কেজি দরে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকেই ব্যবসায়ীরা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করলে ভোক্তা পর্যায় থেকে আসে আপত্তি।
সারাদেশের মতো একই চিত্র দেখা গেছে সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল ফলের আড়তে। যেখানে প্রতিটি তরমুজ কিনতে হলে শতকরা ১০ টাকা কমিশন গুনতে হচ্ছে ছোটো ফল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খুচরা ক্রেতাদের।
লকডাউন, খারাপ ফলন ও আড়তদারদের কমিশনের কারণে তরমুজ এখন সোনার হরিণ। তাই দ্বিগুন লাভের আশায় খুচরা ব্যবসায়ীরা সাধারণ ভোক্তাদের কাছে কেজি হিসেবে বিক্রি করছেন এই তরমুজ।
আশুলিয়ার বাইপাইল আড়তে কয়েকজন আড়তদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তরমুজ দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে পাইকার অথবা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে সরাসরি ট্রাক যোগে আড়তে আনেন। আর কৃষকের কাছ থেকে কিনলে তরমুজ গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। তাই পরিবহন, শ্রমিক ও সড়কের খরচসহ অনেক টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া কৃষকের কাছ থেকে পাইকাররা কিনে এনে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করলেও তার দাম বেশিই পড়ে। তাই আড়তদারদের কমিশনটা একটু বেশি নিতে হয়।
তবে সূত্রে জানা গেছে, এখানে আড়তদাররা এক চক্র তৈরি করে পাইকার এবং খুচরা ব্যবসায়ী উভয়ের কাছ থেকেই কমিশন নিচ্ছেন। এতে যারা আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে পাঠায় তাদের থেকে শতকরা ৫ শতাংশ. এবং যারা আড়তদারের কাছ থেকে তরমুজ কিনেন তাদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন রাখা হয়।
এনিয়ে কয়েকজন আড়তদারের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা যারা তরমুজ বেচা কেনা করি তাদের লাভ সীমিত। যারা তরমুজ ক্রয় করে আড়তে আনে তাদেরকে পুরো ক্ষেত চুক্তিতে তরমুজ কিনতে হয়। ক্ষেতে যে তরমুজ থাকে সেটাকেই আড়তে আনা হয়। আকার ও প্রকার ভেদে যে যেভাবে তরমুজ নেয় আমরা সেভাবেই বিক্রি করি। এক্ষেত্রে তরমুজে শতকরা ১০ টাকা আড়ত মালিকের থাকে। যা বিক্রির পর আড়ত মালিকরা পায়৷ যেমন আকার ভেদে ৫ হাজার টাকার তরমুজে ৫০০ টাকা রাখি আমরা। এটা আমাদের আড়তের নিয়ম। এখন তরমুজের দাম যদি লাখ টাকা হয় তবুও ১০ টাকাই কমিশন রাখা হবে।
এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি তরমুজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছে৷ যদি আড়ত থেকে তরমুজ কেজি হিসেবে তারা কিনে তাহলে তাদের প্রতি শতকে ১০ টাকা কমিশন দিতে হয়। অর্থাৎ ৫ কেজির একটি তরমুজে ৫০ টাকা কমিশন দিতে হয়। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি আড়তেই তরমুজের দাম বেশি। কখনো কেজি আবার কখনো সংখ্যা হিসেবে তরমুজ কিনতে হয়। আড়ত থেকে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তারাও কম দামে সংখ্যা হিসেবে বিক্রি করতে পারবে।
স্থানীয় মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীদের কাছে কেনো তরমুজ কেজিতে বিক্রি করে? এমন প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, আসলে এখন এভাবেই চলতেছে, সবকিছুই কেজি সিস্টেম। সবাই এভাবেই বিক্রি করে। আর কেজিতে না বিক্রি করলে আমাদের লাভ থাকে না। কারণ আড়ত থেকেই এখন তরমুজ কিনা লাগে অনেক বেশি দামে। কেজি বা পিস যেভাবেই কিনি শতকরা ১০ টাকা কমিশন দেওয়া লাগে। যদি আড়তে দাম কমে পাওয়া যায় তাইলে আমরাও কম দামে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করতাম।
এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অভিমত, প্রথমে আড়তে তরমুজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ আড়তদারের কারণে খুচরা ব্যবসায়িরা বাইরে ভোক্তাদের কাছে তরমুজ বেশি দামে কেজিতে বিক্রি করে। আড়তে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: