শায়েস্তা খানের আমল থেকে বর্তমান বাজার

ইমরুল কবির | ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:২৫

ইমরুল কবির

ছোট কালে ইতিহাস বইতে পড়েছিলাম, ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের আমলে বাংলা ধনসম্পদে প্রাচুর্য্যপূর্ণ ছিল এবং এতটাই পরিমাণ ধনসম্পদ ছিল যে গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, প্রতিটি বাড়িতে ছিল প্রাচুয্য (ইবনে বতুতা, কিতাবুল রেহলা)। শায়েস্তা খানের আমলে এক টাকায় আটমণ চাল পাওয়া যেত এখনতো পরিস্থিতি পুরাটা উল্টো একটাকায় এখন আর কিছু পাওয়া যায় না, কেউ আর একটাকা নোট নিতে চায় না তাই এক টাকা এখন অচল মুদ্রায় পরিণত হয়েছে।

কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি কিছুদিন আগে। এখন নিত্য নতুন বাজারে যেতে হয় বিভিন্ন রকম দ্রব্য কেনাকাটার জন্য। যখন শুনি চালের দাম ৬০ টাকা কেজি, দুধের দাম ৭০ টাকা লিটার এবং মাছের মূল্য রুই ৩৮০ টাকা, কাতল ৩০০ টাকা, গরুর মাংস ৫৬০ টাকা কেজি তখন পকেটের টাকার দিকে চেয়ে শায়েস্তা খানের আমলের কথা চিন্তা করি ও ভাবতে থাকি হায়রে এক টাকা তোমার এত ইতিহাস।

দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যখন রাস্তায় আসি তখন বাজারে আমার এক ছাত্রের সাথে দেখা, তার সাথে কথার এক পর্যায়ে বললাম কি কেনা হলো আজকে? প্রশ্নটা করতেই ছাত্রের চোখের দিকে চেয়ে তার মুখের অবস্থা দেখে অনুমান করতে পারলাম তার মনের প্রকৃত কথন। এতটুকু সে বলল ৮০০ টাকার বাজার তিনদিন নিতে হবে মানুষ ১০ জন। তখন আবার অনুধাবন করলাম সেই শায়েস্তা খানের ও আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আমলকে। মুহূর্তে অর্থনীতির ত্বত্তটি মনে পড়ে গেল এবং ভাবতে লাগলাম সেই সময় খুব কম মানুষ আছে যারা এক টাকা আয় করতে পারতো, অমর্ত্য সেনের মতে সেই সময়ের অর্থনীতিকে বলা হত খোরাকি অর্থনীতি। অর্থাৎ ফসল ভালো উৎপাদন হলেও অনেকে দুইবেলা খেতে পারত না। তখন বাংলার মানুষ ছিল গরিব, সেই সময়ে অনাহারে, দুর্ভিক্ষে, রোগে এত বেশি মানুষ মারা যেত যে অতীত বাংলার জনসংখ্যা তেমন বাড়তো না।

বর্তমানে দেশ উন্নত হয়েছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, দারিদ্রতার হার আগের তুলনাই অনেক কমেছে। জনগণ শিক্ষা,স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ ও মৌলিক অধিকারগুলো আগের তুলনায় অনেক ভোগ করছে কিন্তু বর্তমান সময়ে বাজারের যে চিত্র তা সকল আয়ের মানুষের জন্য দূবির্ষহ হয়ে পড়েছে। আজকের প্রথম আলো(২-৯-২২) পত্রিকায় প্রথম পাতায় উল্লেখ্য আছে সুগন্ধি সাবান জানুয়ারি মাসে দাম ছিল ৪০ টাকা বর্তমান দাম ৫৫ টাকা এবং গুড়া সাবান পূর্বের দাম ছিল ৬০ টাকা বর্তমান দাম ৯০ টাকা তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুণ।

বিশ্ববাজারে ক্রমবর্ধমান হারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি বহলাংশে এর জন্য দায়ী। কিন্তু যারা গরিব, মেহনতি মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাদের আয় সীমাবদ্ধ। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে তিনি কি কিনতে পারবে বর্তমান বাজার মূল্যে আপনারা একবার কল্পনা করেন। দেশের এখনও মোট জনসংখ্যার এক তৃতীংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী যাদের আয় সীমাবদ্ধ, যদি দ্রব্যের দাম বর্ধমানমূল্যে এভাবে দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে নিম্নবিত্ত ও আমাদের মত মধ্যবিত্তের কি অবস্থা হবে আপনারা একটিবার কল্পনা করেন।

জাতির পিতা দেশটি শাসন করেছিলেন সাম্য ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তাই প্রসাশন ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করছি সুষ্ঠু বাজার ব্যব্স্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অসাধু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনে বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাহলে আমাদের আর বাজারে বসে শায়েস্তা খানের আমলের কথা চিন্তা করতে হবে না।

ইমরুল কবির
প্রভাষক,সমাজকর্ম বিভাগ,
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর-২০১২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: