একটি কালো ছাগলের ওপর একটা কালো শালিক। এই দৃশ্য পৃথিবীর ভেতর রচিত হয়ে আছে। ছাগলের মুখ উত্তর দিগন্তের দিকে আর শালিকের মুখ দক্ষিণে। পৃথিবীর যে পৃষ্ঠে এই দৃশ্য রচিত হয়েছে, তার নাম সত্রাসিয়া। সত্রাসিয়ায় প্রতি বুধবার হাট বসে। আজ হাটবার নয়। বিরান হাটে কালো ছাগল তার পিঠে একটি কালো ছাগল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদিও সেই ছাগলের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত, কারণ তার গলায় মালার মত জড়িয়ে আছে দড়ি, যে দড়ি একটি কাঠের টুকরাসহযোগে মাটিতে প্রোথিত (মামলার সাঙ্গী ময়নাপাখি, শাহাদুজ্জামান)।
আমাদের জীবনটি একটি কালো ছাগলের মত হয়ে গেছে এবং আমাদের মাথায় সবসময় একটি কালো শালিক থাকে, যাকে বহন করে অতিবাহিত করতে হয় আমাদের জীবন। সামাজিক রীতিনীতি ও আইন আমাদের জীবনকে গলার মালার মত জড়িয়ে আছে। আমরা সবসময় আহার, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি নিয়ে মগ্ন থাকি। আমরা কখনও কি ভাবি একটি গান একটি পিৎজার থেকে কত উৎকৃষ্ট। বইয়ের পাতায় প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পড়ি আর মনে মনে বলি সেই গান আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। নির্মল বাতাস, সবুজ প্রান্তর, নদী ভরা স্বচ্ছ পানি ও হরেক প্রজাতির মাছ এগুলো কোথায় চলে গেল? প্রশ্নটা থেকে যায়।
যান্ত্রিক যুগে সবকিছু যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে, গাছপালা কেঁটে সৃষ্টি হচ্ছে নগরায়ণ, মানুষ জীবিকার তাগিদে শহরমুখী হচ্ছে যার ফলে কৃষি সহ গ্রামীণ অঞ্চলের আমুল পরিবর্তন হচ্ছে। কৃষি ভিক্তিক প্রাচীন সমাজে আগে রাতে গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে গানের আসর হতো, প্রতিটি গানের প্রতিটি কথা ছিল গ্রামের মানুষের ভালবাসা, দুঃখ, বেদনা, হাহাকার, সম্প্রতির উৎস। শহরমুখী জীবনে আমরা কি পেলাম, সারাদিন পরিশ্রমের পর নেই কোন বিনোদনের ব্যবস্থা, কোথায় সেই নির্মল হাওয়া, কোথায় সেই সবুজ প্রান্তর, কোথায় সেই খেলার মাঠ, কোথায় সেই মা মাটির গান।শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন লবঙ্গের বঙ্গ ফেলে সুষ্ঠু বিনোদন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ একটি নগর। যান্ত্রিক যুগে মানুষ প্রতিনিয়ত যে ভাবে বিকশিত হচ্ছে তা একসময় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অনেকদূর পিছিয়ে দিবে। কালো ছাগলের উপর কালো শালিককে নিয়ে ঘুরাঘুরি করা কখনও শুভনীয় নয়। এখন সময় লবঙ্গে বঙ্গ না ফেলে জীবনকে উপভোগ করি ও জীবনকে সু্ন্দর ও সাবলীল করতে পারবো।
লেখক:
প্রভাষক ও উন্নয়ন গবেষক,
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর-২০১২।
ইমেইল[email protected]
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: