‘Apa... salam neben. ami munni saha. ami ektu apnar kache ashte pari? dupure khabo...’– কেন যে কোন সাহসে ওই দুটো লাইন লিখে টেক্সট করে ফেললাম, আজকে ভাবতেই বিস্মিত হচ্ছি! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অমন করে লেখা যায় কিনা একজন সাধারণ নাগরিকের, সেই হিতাহিত বুদ্ধিটা বোধহয় একটু লোপ পেয়েছিল, তাঁরই লাই পেয়ে।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের একটা সাক্ষাৎকার নিতে গণভবনে গিয়েছিলাম তার বেশ কিছু দিন আগে, ২০১১ সালে। অটিজম বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়ে আমি এবং ক্যামেরাপারসন মামুন চলে আসছিলাম। সংসদ ভবন পার হচ্ছি, তখন তৎকালীন সময়ের সামরিক সচিবের ফোন– ‘কতদূর গেছেন? গাড়ি ঘোরান... মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খোঁজ করছেন’।
আমরা হুকুম মেনে আবারও গণভবনে ফিরে আসি। ক্যামেরাম্যান মামুন বলছে– ‘মুন্নী আপা আমি বাইরে থাকি, আপনে যান’। আমি বললাম, ‘আসলে কেন আবার ফিরে আসতে বললেন প্রধানমন্ত্রী, ঠিক বুঝলাম না। মনে হয় সায়মার ইন্টারভিউতে আরেকটু কিছু যোগ হবে, চল’। ক্যামেরাম্যানসহ তো বললেন মিলিটারি সচিব। ফেরত এসে গণভবনের নিচতলায় দেখি ডা. প্রাণ গোপালদা দাঁড়িয়ে। বললেন, ‘৫ মিনিটের মধ্যে ক্যামেরা-কুমেরা গুছাইয়া এতদূর গেছো গা? আসো আসো উপরে আসো...’। বলেই হাঁটা দিলেন। আমরা পিছু নিলাম। গণভবনের ডাইনিং রুমের হেড চেয়ারে প্রধানমন্ত্রী। পেছনে ফিরে না তাকিয়েই একটু ঝাড়ি দেওয়ার সুরে বললেন– ‘এই দুপুরে লাঞ্চের টাইমে না খেয়ে কেউ যায়? বোকা মেয়ে, আমি তো শুনলাম পুতুলের ইন্টারভিউ নিচ্ছো, শেষ হলে দুজনেই আসবা। যাও, ওই দিকে বেসিন, হাত ধুয়ে বসো’। ততক্ষণে আমি হেড চেয়ারের পাশে তাঁর বাঁ হাতটা ধরে দাঁড়িয়ে। ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মামুনকে জিজ্ঞেস করলেন– ‘কী নামরে ভাই? যাও যাও ক্যামেরা রাখো, হাত ধোও, ভাত খাওয়ার জন্য ডাকছি। গৃহস্থের বাড়ি থেকে কি কেউ না খেয়ে যায়?
সেটা ২০১১ সালের কথা বলছি। অটিজম সম্মেলনে সোনিয়া গান্ধী ঢাকায় আসার ঠিক ১ সপ্তাহ আগে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তখন এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনটির ফোকাল পয়েন্ট। তো খাবার টেবিলে প্রাণ গোপাল দা, পুতুল, আরও দুয়েকজন আত্মীয়-স্বজন। ঢেঁড়স ভাজি, আইড় মাছ, ডাঁটা পটলের সবজি যাই টেবিলে আসছে, সেটারই ব্র্যান্ডিং করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘এই, ঢেঁড়স খাও, আমার লাগানো। ডাঁটাও। গণভবনের বাগানের। আইড় মাছটা গোপালগঞ্জের। নদীর মাছ, খেয়ে দেখো কত মিষ্টি মাছটা।’
আমি তো ভাত নাড়াচাড়া করতে করতে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দেখছি। কত মায়া– কত আন্তরিকতা দিয়ে আপন করে নেন, এক মুহূর্তে।
কখন যে পরিবারের খাবার টেবিলের আড্ডায়, একজন সামান্য সংবাদকর্মী তাঁর অনেক দিনের আড্ডার সঙ্গীর মতো হয়ে গেলাম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খাবার টেবিলে বসার ভয়-দূরত্ব-জড়তা তিনিই দূর করে দিলেন। তৃপ্তির সঙ্গে ভাত খেয়েছি তাঁর আন্তরিকতায়। লম্বা আড্ডা। নানান বিষয়। সেকথা না হয় পরে লিখবো। খেয়েদেয়ে হাত ধুয়ে এসে মিষ্টি। ৪টা রসগোল্লা আমার বাটিতে প্রধানমন্ত্রীই তুলে দিলেন। আমি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাতেই বললেন– ‘খাও, মোটা হবা না। আর হইলেই কি? সাংবাদিকদের বুদ্ধি দরকার... মিষ্টি খেলে বুদ্ধি হয়, মাথা খোলে...’ নির্বিবাদে মিষ্টি চারটা খেয়ে তাঁর পানের মসলাটার দিকে তাকিয়ে হাত পাতলাম। পানের মধ্যে বেশ খানিকটা কালোজিরা নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওখান থেকে চিমটি দিয়ে একটু কালোজিরা আমাকে দিলেন। হাসতে হাসতে বললেন, ‘হুম মুখে মিষ্টি খাওয়ার পর আর টক টক ভাবটা থাকবে না’।
হঠাৎ বললেন, ‘অ্যাই তুমি সবজির আচারটা খাইছো?’ আমি মাথা নাড়লাম। উনি বললেন, ‘হায় হায়... দেখছো! আমি বানাইছি, কুমড়া-গাজর এসবের ঝাল মোরব্বা...একটু প্যাকেট করে দিতে বলবো? না থাক। নতুন করে বানাচ্ছি... আবার এসে খেও’।
ওই যে ওই বলাটা– ‘আবার এসে খেও...’– ওই বলাটার মধ্যেই একধরনের আদর, লাই মাখানো। বোকা মেয়ে আমি, ভুলেই গেছি- যখন-তখন প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে খাওয়ার সুযোগ হয় না। হয়তো এক জীবনে আর একবারও নাও হতে পারে। আমি দিব্যি মাথা নেড়ে বললাম, ‘আপা নতুনটা হোক, ওখান থেকেই নিয়ে যাবো আবার’
আসলেই, ব্যাপারটা জাদুমন্ত্রের মতো লাগে এখনও মনে করলে। কেমন করে, ক্ষমতায় শীর্ষে থাকা মানুষটি ভুলিয়ে দেন তাঁর পরিপার্শ্ব। মায়ের স্নেহে যখন প্লেটে ২ চামচ ভাত তুলে দেন তখন তাঁকে মা-ই লাগতে হয়, আবার খুনসুটির আলাপে কিন্তু বড় আপা, মানে বড় আপাই। সবজির আচারের লোভ দিয়ে তো তিনি আমার মনের মধ্যে প্রায় চিরস্থায়ী এক ‘আবদার- লাই’ এর বীজ ঢুকিয়েই দিয়েছেন। সে কারণেই আমি ভাবতাম, প্রধানমন্ত্রীকে হঠাৎ একলা দুপুরে বলা যায়– ‘আপা আমি কি একটু আসতে পারি? দুপুরে খাবো।’
অবশ্য এই আবদারটুকু ছিল, ঠিক ১ বছর পরে। অর্থাৎ ২০১২ সালের ১ জুলাই। যার ঠিক দুদিন আগে ২৯ জুন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর জন্য প্রস্তাবিত ঋণ চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছে।
আমার সেদিনের দুপুর বেলার উদ্বেলতার সাথে বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর ঋণ বাতিল হয়ে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং সংবাদকর্মী হিসেবে সে সময়টায় বেশ ‘হাতিঘোড়া’ মারছিলাম। আজ যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে ‘আবুল’ বানাই তো কাল ব্যাশিং করি ড. মশিউরকে। বড় বড় সব ইকোনমিস্টদের মিষ্টি মিষ্টি সব শানিত কথার তীর এলোপাতাড়ি প্রতি রাতের টকশোতেই ছুড়ছি। নিশ্চিতভাবে সেসব তীর তো রাষ্ট্রের নির্বাহীর দিকেই যায়, যাচ্ছেও।
প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকেই তো সুন্দরভাবে কল্পিত দুর্নীতির রঙ দিয়ে দারুণ একটি ডার্ট বোর্ড বানানো হয়েছে। ‘সো, মারো, আঘাত করো, মিথ্যার ওপর মিথ্যা চড়াও, বলে বলে সত্য বানাও...’
আমাদের দেশের লিমিটেড রিসোর্সের সাংবাদিকতাই তো তাই। সত্য উদঘাটনের সময়, সুযোগ, সঙ্গতি, ইচ্ছা কোনোটাই নেই বা থাকে না– সো-কল্ড ব্রেকিং নিউজ বেঁচতে গিয়ে। ফলে, আমিও তো সেই দলেরই একজন। প্রতিদিন টকশো, রিপোর্ট, নিউজ বুলেটিন করতে করতে সরকার, সরকারের মন্ত্রী এবং শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় তো আমরা একেকটা চ্যানেল কেউ এ সপ্তাহে ফার্স্ট তো, আরেকজন পরের সপ্তাহে ফার্স্ট। এতকিছু করার পরও, কেন হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীকে একটা টেক্সট পাঠাতে আমার পিলে চমকালো না, সে কথা আজ ভাবি। কী সহজ ভঙ্গিতে আমি লিখে দিলাম, আপা... একটু আসি আপনার কাছে?
এসএমএস-এর কোনও জবাব এলো না। আধঘণ্টা বাদে পিএমও থেকে ফোন– ‘মুন্নী সাহা... একটু গণভবনে আসতে হবে, কতক্ষণে আসতে পারবেন? ঠিকানা বলেন, ট্রান্সপোর্ট পাঠাচ্ছি।’
ট্রান্সপোর্ট লাগবে না, তবে রাস্তায় অনেক ট্রাফিক, আমার বোধহয় পৌঁছাতে একটু দেরি হয়ে যাবে, ফোনের ও-প্রান্তের সামরিক কণ্ঠস্বরকে বিনীতভাবে বললাম। উনি আমারগাড়ির নম্বরটি জেনে নিলেন।
আধঘণ্টায় গণভবনে পৌঁছে গেলাম। ৫ মিনিট নিচতলায় বসে থাকার পরই ডাক পড়লো ওপরে। উঠেই থমকে গেলাম, সিঁড়ির মাথায় প্রধানমন্ত্রী। রেদোয়ান মুজিব ববির বড় মেয়েটা তখন ছোট। ওকে কোলে নিয়ে খেলছিলেন। সালাম দিতেই একটু উঁকিঝুকি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন– ‘ক্যামেরা নাই?’
আমি বললাম– ‘হায় হায়! কী ভুলটা করলাম, ক্যামেরা তো আনতেই পারতাম, আপনি এলাউ করবেন, বুঝিই তো নাই।’
প্রধানমন্ত্রী মিষ্টি করে হেসে বললেন, ‘না না তুমি তো আবার সাংঘাতিক (সাংবাদিককে মজা করে সাংঘাতিক বলতেন মাঝে মাঝে), সারাক্ষণ তো ওই ধান্দায়ই থাকো, চলো চলো খিদা পাইছে, আর ‘সাংঘাতিকগিরি’ করতে হবে না।’
কোলের শিশুকন্যাটিকে আদর আদর উচ্চারণে বলতে থাকলেন, ‘আমলা এখন ভাত খাবো, সব্দি খাবো, তিকেন খাবো... ম্যাংগো ফ্লাওয়ার খাবো...’
সেদিনের টেবিলে তেমন কোনও অতিথি নেই। তাঁর নাতনিই সব অ্যাটেনশন নিচ্ছিলো। কখনও ভাত তুলে দিচ্ছেন মুখে, হাতে চামচ ধরিয়ে দিয়ে ডাল খাওয়া শিখিয়ে দিচ্ছিলেন। ফাঁকে ফাঁকে আমার খোঁজ-খবর। কেমন চলছে কাজ-বাজ এসব। কানেক্টিং বাংলাদেশ অনুষ্ঠানটা শুক্রবারে দেখেন, বলতে বলতেই একটু অনুযোগ– ‘আচ্ছা, এমন একটা অনুষ্ঠান, বাংলা নাম দিতে পারতা না?’
বললাম, ‘আপা ডিজিটাল কানেক্টিভিটি ব্যাপারটা আনার জন্য ‘কানেক্টিং’...’
‘আচ্ছা, তোমরাই ভালো বোঝো’। ওনার এই উত্তরের সাথে সাথেই আমি একটু ভয়ে ভয়ে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলাম, প্রতিদিন যে পদ্মা সেতু, দুর্নীতি এসব নিয়ে অনুষ্ঠান করি, দেখেন না?
আমার ভয়টা উড়িয়ে দিলেন হাসি দিয়ে। বললেন, ‘দেখি তো, সবই দেখি, শুনি, আল্লাহ তোমাদের এসব বলার দিন দিছে, তোমরা বলবা। আমারেও আল্লাহ দিন দেবে, যেদিন আমার দেশের মানুষই বলবে আমি, আমার পরিবার বা আমার মন্ত্রীরা এই পদ্মা সেতু নিয়া দুর্নীতি করে নাই। তখন তোমরা কষ্ট পাবা...।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেই ‘কষ্ট’ শব্দটা কেড়ে নিয়ে বললাম, আপা, পদ্মা সেতুর ফান্ডিংটা বিশ্বব্যাংক বাতিল করাতে একটু কষ্ট পেয়েছেন?
এক সেকেন্ডও সময় নিলেন না বঙ্গবন্ধু কন্যা, হঠাৎ পদ্মার ঢেউয়ের মতো তাঁর কণ্ঠে দৃঢ়তা– একদম না। ভালোই হইছে বিশ্বব্যাংক বাতিল করছে। তাদের কবে দুর্নীতি হবে বলে স্বপ্নে দেখছে, সেই স্বপ্ন ধরে ধরে আজকে এরে সরাও, ওরে বাইর করো, তারে পুলিশে দাও। শর্তের পর শর্ত। সব মেনে নেওয়ার পরেও ঠান্ডা হয় না। আরে, একটা কানা পয়সাও যেখানে ছাড় হয় নাই, সেখানে দুর্নীতি কীসে? আমিও বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, এত সোজা না। না হলে হবে না পদ্মা সেতু তাতে কী? ওদের মিথ্যা অপবাদ মেনে নিবো নাকি? ওরা ফান্ড বন্ধ না করে যদি এমন তেড়িবেড়িই করতে থাকতো, তাইলে আমরাই না করে দিতাম। কত সময় নষ্ট করবো আমরা? শুধু শুধু...।
আর হবে না কেন? আমি শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের মানুষের টাকা দিয়েই পদ্মা সেতু করবো, আল্লাহ যদি আমাকে সুযোগ দেয়...।
এই দৃঢ়-দৃপ্ত উচ্চারণ আমার চোখের সামনে থেকে একটা ঘোলাটে মেঘ যেন সরিয়ে দিলো। একজন প্রধানমন্ত্রী বা একজন শেখ হাসিনার কাছে একটা দুপুর কাটাতে যেতে চাওয়া সেই আমিটা তো সাংবাদিকতার অ্যান্টেনা উঁচু করা আমিটা না। বরং হাতে পায়ে লম্বা, বোকাসোকা একটা মানুষ মুন্নী সাহা। যাকে শেখ হাসিনা একটা বোকা মেয়ে হিসেবেই স্নেহ করেন- লাই দেন, সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই।
খাবার টেবিলের আন্তরিক আতিথেয়তায়, নানান হালকা গল্প, ঠাট্টা আর ছোট্ট নাতনিকে ‘ক’ এ ‘কলা’ ‘খ’ এ খাই গান শোনানোর অ্যাম্বিয়েন্সে কঠিন সংকল্পের দৃপ্ত উচ্চারণটা বারবার কানে বাজছিল, "বাংলাদেশের মানুষের টাকা দিয়েই পদ্মা সেতু করবো...।"
সাধারণ মুন্নী সাহার চোখের সামনে থেকে ভাবালুতার মেঘ কাটতে কাটতে বাইরে, ঝুম বৃষ্টি– প্রধানমন্ত্রীর বৃষ্টি খুব পছন্দ এটুকু বলেই, একটা ল্যাংড়া আমের দুপিঠ ছুরি দিয়ে তেছড়া করে এদিক-ওদিকে কেটে চামড়াটা ধরে উল্টো করে দিয়ে, ম্যাংগো ফ্লাওয়ার বানালেন। নাতনি তো ভীষণ খুশি। ছোট্ট হাতে হাততালি। তারপর ম্যাংগো ফ্লাওয়ারটা বাটিতে নিয়ে আনন্দের সাথে খেতে শুরু করলো। বাচ্চাটি।
এবার আমার দিকে তাকিয়ে, আমার আপা, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা– তুমি কি খাবে?
ম্যাংগো? না ম্যাংগো ফ্লাওয়ার?
আমি: ম্যাংগো ফ্লাওয়ার... আপনি কাটেন, আমি দেখবো, শিখি...।
আমটা কাটতে কাটতে কায়দাটা শিখিয়ে দিলেন। আমার মাথায় তাঁর একটু আগের দৃঢ়তার কণ্ঠস্বর। আর সেই থেকে তো সাংবাদিকতার অ্যান্টেনাটাও টুং করে খাড়া হয়ে আছে।
আপা, ম্যাংগো ফ্লাওয়ারের মতো একটু সহজ করে বুঝিয়ে দেন না, কেমন করে পদ্মা সেতু হবে?
আপনি তো বললেন, হবেই হবে... দেশের মানুষের টাকায় হবে।
বাইরে শ্রাবণের ঝুম বৃষ্টি। টেরেসে গিয়ে বসতে বললেন প্রধানমন্ত্রী। বৃষ্টির ঝাপটায় বনসাঁই বট- পাকুড়, জাম কড়ইয়ের টবগুলো ভিজে যাচ্ছিলো। সেগুলো একটু সরিয়ে আনতে স্টাফদের নির্দেশ দিলেন। ১০ মিনিট পরে প্রধানমন্ত্রী বসলেন টেরেসে। ভাঙা রেকর্ডের মতো আমার একই প্রশ্ন, আপা... সত্যি আপনি পদ্মা সেতু করবেন জনগণের কন্ট্রিবিউশনে? মানে, যমুনার সময় আমরা যেমন সারচার্জ দিয়েছি ওরকম? এখন তো আরও ভালোভাবে সারচার্জ হতে পারে... আমরা তো বেহুদা কথা বলেই গ্রামীণফোন, রবি-রে টাকা দেই... প্রতিদিন প্রতিজনের কথায় এক টাকা ট্যাক্স ধরলেই তো কত টাকা ওঠে!
বৃষ্টিটার দিকে মুখ রেখে প্রধানমন্ত্রী বললেন, "লাগলে কথার ওপর ট্যাক্স ধরবো... দিবে না বাংলাদেশের মানুষ? আমি জানি দিবে। তবে শুরুতে ওই আইডিয়ায় যাচ্ছি না। প্রতিবছরের বাজেট থেকেই আমরা প্রাথমিক ফান্ডটুকু নিতে পারবো, তারপর আরও অঙ্ক করে রেখেছি... ।"
এক শ্রাবণ দুপুরের তুমুল বৃষ্টি মনের ভেতরের সব দ্বিধা ধুইয়ে নিলো। অপলক চেয়ে থাকলাম। ছোট্ট একটা পেন্সিল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক টুকরো কাগজে অঙ্ক মেলাচ্ছেন। ফাঁকে ফাঁকে গ্রামীণ ব্যাংক, ইউনূস, ক্লিন্টন ফাউন্ডেশন, দেশের বুদ্ধিজীবী, থিংকট্যাংক নানান কিছু নিয়ে গল্প।
গলায় কোনও খেদ নেই। যেন তিনি নিশ্চিত যে একদিন সবকিছুর জবাব ‘একটি আশ্চর্য পদ্মা সেতুই’ দেবে।
আমি অপলকই তাঁর দিকে। চেয়ে চেয়ে যদি একটু কনফিডেন্স আর সাহস নেওয়া যায়।
হঠাৎ চায়ের কাপটা দেখিয়ে বলেন, চা খাও। খেঁজুর গুড়ের চা, আমি বানাইছি... আর বিআইডিএসের বিনায়ক সেনের সাথে পরিচয় আছে?
আমি: জি আপা।
আপা: একটু বইলো তো আমি এমনটা ভাবতেছি... অবশ্য কালকে আরও কয়েকজনের সাথে কথা বলবো... পরে সংসদে ঘোষণা দেবো।
আমি: ব্রেকিং নিউজ দেবো? (একটু দুষ্টুমি করে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য)।
প্রধানমন্ত্রী: খালি ‘রিপোর্টারগিরি’। যাও, যখন বলবো তখন ব্রেকিং নিউজ। লিখবা, শেখ হাসিনাই বলছে, আমাদের টাকায় আমাদের পদ্মা সেতু।
লেখক: প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, এটিএন নিউজ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: