মোটরসাইকেল দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে শীর্ষে বাংলাদেশ

ইমরুল কবির | ১৮ জুন ২০২২, ১২:২২

প্রতীকী ছবি (ইনসেটে লেখক)

ভবতি বিজতম: ক্রমশো জন এটি একটি সংস্কৃত বাক্য যার বাংলা অর্থ হচ্ছে মানুষ ক্রমে ক্রমে বিজ্ঞ বা দক্ষ হয়ে উঠে। বিধাতা তার সৃষ্টিকর্মে সুন্দর সুন্দর জিনিস যুক্ত করতে মনস্থ করেন। প্রথমে তিনি সৃষ্টি করেন পদ্ম কিন্তু তিনি দেখলেন দিন শেষে পদ্মফুল মলিন হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ তা স্থায়ী হচ্ছে না তখন তিনি চাঁদ তৈরি করলেন মনের মাধুরী মিশিয়ে দেখা গেল রাত শেষে চাঁদ অনুজ্জল হয়ে যাচ্ছে দিনে চাঁদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যাচ্ছে না সুতরাং চেষ্টা ও চিন্তা করতে করতে সৃষ্টিকর্তা দিন ও রাত সমানভাবে প্রফুল্লতা পাওয়ার জন্যে সৃষ্টি করলেন মনোহর রমনী বদন। রমনী সুন্দর মুখ ঈশ্বরের সৃষ্টির এক মহা অবদান ঠিক তেমনি ভাবে মানুষ তাদের প্রাত্যহিক জীবন সুন্দর ও আরামদায়ক করার জন্য একের পর এক আবিস্কার করে যাচ্ছে। যার ফলে মানুষের জীবন পূর্বের তুলনায় সাবলীল হয়েছে যার ফলে বর্তমানে মানুষের এক অভূতপূর্ব আবিস্কার মোটরসাইকেল, যার মাধ্যমে মানুষ তাদের জীবনকে করেছে আরামদায়ক ও সুন্দর।

আরমদায়ক ও সহজতর জীবন যে মানুষের মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাড়িয়েছে তা এখন ভাবিয়ে তুলে। বর্তমান সময়ের একটি ঘটনা, মোটরসাইকেল চালিয়ে শেরপুর জেলা শহর থেকে সদর উপজেলার হালগড়ার চকবড়ইগাছিতে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন বিজিবির সদস্য মো: ইউসূফ জামিল(২৬)। পথে আমতলি সেতুর উপড় পৌছাঁলে তিনি মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। গতকাল বৃহ:স্পতিবার দুপুরে এ দূর্ঘটনা ঘটে (প্রথম আলো জুন ১৭, ২২)।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এক গবেষণায় বলেছে প্রতিবছর দেশে দশহাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে দূর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে ২৮.৪ জন। তাদের ৪০ শতাংশের বয়স (২৪-৩০) বছর (প্রথম আলো ১৭ জুন ২০২২)। যদি এরকমভাবে দিনের পর দিন মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা সংঘটিত হতে থাকে তাহলে অল্প বয়সে কত তরুণের প্রাণ অকালে চলে যাচ্ছে তা একটু ভাবার বিষয়। যদি আজ থেকে দশবছর আগের অব্স্থার দিকে আমারা দৃষ্টিপাত করি তাহলে আমাদের দেশে মোটরসাইকেলের দূর্ঘটনার পরিমাণ এতটুকু বিপর্যয় পর্যন্ত ছিল না। আমাদের চিন্তার অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা। কারণ বাংলাদেশ মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় মৃ্ত্যুতে এখন বিশ্ব চ্যম্পিয়ন, যেখানে ভিয়েতনামে প্রতি হাজার মানুষের বিপরীতে মোটরসাইকেল আছে ৩৫৮ টি (প্রথম আলো ১৭ জুন ২০২২) কিন্তু তাদের মৃত্যুহার ৪.১ জন, ভারতে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রতি হাজারে ৯ জন এবং মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার রিপোর্টে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কম্বোডিয়ার মৃত্যুহার বাংলাদেশের অর্ধেক (প্রথম আলো ১৭ জুন ২০২২) যদিও মাথাপিছু মটরসাইকেল ব্যবহারকারীর হিসেবে আমাদের অবস্থান সবার পিছনে কিন্তু কেন মৃত্যুহারে আমরা শীর্ষে, যার অন্যতম প্রধান কারণ বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো ও ট্রাফিক আইন মান্য না করা।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু অর্ধেকের বয়স (২৪-৩০) অর্থাৎ বয়সে তরুণ যারা নিজেদের মধ্যে রেসিং প্রতিযোগিতা অথবা কিশোর গ্যাং তৈরি করে রাস্তায় মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে থাকে, যার ফলে প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে দুর্ঘটনায়। আজকের তরুণরা আগামীতে আমাদের দেশকে নেতৃত্ব দিবে এবং দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক উন্নয়নে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে কিন্তু যদি এত অল্প বয়সে এভাবে অকালে মৃত্যু বরণ করতে হয় তাহলে সেটা আসলেই পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য কোন কল্যাণকর নয়। রাস্তায় রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল; লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ী চালানোর সর্বোচ্চ গতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করার মাধ্যমে এখনি সময় এইভাবে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যু কমিয়ে আনার, তাছাড়া এভাবে চলতে থাকলে এটা কখানো আমাদের দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না। ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যু কমিয়ে আনতে হবে। উন্নয়নের সারথীতে চলা দেশের জন্য এটি অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন হিসাবে গ্রহণ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবী ।


লেখকঃ প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, জামালপুর।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: