জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে বজ্রপাত-মৃত্যু

সময় ট্রিবিউন | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৩

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। ১৯৯০-এর দশকে যেখানে বছরে বজ্রপাতে হাতেগোনা কয়েকজন প্রাণ হারাতেন— সেখানে এই সংখ্যা প্রায় ৩০০ জনে পৌঁছেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রোববার (৩১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের বজ্রপাত এবং এর প্রভাবে মৃত্যু নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংবাদমাধ্যমটি নাসা, বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের বরাতে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই নাটকীয়ভাবে বজ্রপাতের মৃত্যু বেড়ে গেছে।

বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বজ্রপাতে স্বজন হারানো কয়েকজনের কথা তুলে ধরেছে। তাদের একজন হলেন মামুন। যিনি ২০২১ সালের আগস্টে নিজের বিয়ের দিন বাবা, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, চাচাত ভাই-বোনসহ ১৬ সদস্যকে হারিয়েছিলেন।

মামুন বিবিসিকে জানিয়েছেন, তার আত্মীয়রা নৌকায় করে বিয়েতে যাচ্ছিলেন। তখন ঝড় শুরু হলে তারা নদীপাড়ের একটি টিনশেডের নিচে আশ্রয় নেন। সেখানেই আঘাত হানে বজ্র। এতে ঘটনাস্থলেই অনেকের মৃত্যু হয়।

মামনু বলেছেন, ‘আমি প্রচণ্ড জোরে শব্দ শুনতে পাই। দ্রুত পরিবারের সদস্যদের কাছে যাই। সেখানে গিয়ে আমি হতবিহ্বরল ও বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখতে পাই।’

‘কেউ কেউ মরদেহকে জড়িয়ে ধরছিল, আহতরা ব্যথায় কাঁদছিল, শিশুরা চিৎকার করছিল, আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আমি বুঝতে পারছিলাম না কার কাছে আগে যাব। যখন আমি বাবার মরদেহ দেখতে পাই। তখন কেঁদে দেই। আমি খুবই বিস্মিত এবং অসুস্থ হয়ে পড়ি।’
বজ্রপাত কেড়ে নেয় মামুনের পরিবারের ১৬ সদস্যের প্রাণ।

নতুন কাপড় পড়ে বিয়েতে গেলেও; ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের সবাইকে সাদা কাফন পরিয়ে সমাহিত করা হয়। আর বিয়ের খাবারগুলো গরীব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়।

মামুন পরবর্তীতে বিয়ে করেন। কিন্তু তিনি তার বিবাহ বার্ষিকী পালন করেন না। কারণ এ সময়টা আসলে সেই ভয়াবহ স্মৃতি তার মনে পড়ে যায়। মামুন বলেছেন,‘ওই ঘটনার পর আমি এখন সত্যিই বৃষ্টি এবং বজ্রপাতকে ভয় পাই।’

বাংলাদেশে এখন বন্যায় যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়, এরচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান বজ্রপাতে।

এত মানুষের মৃত্যুর ব্যাপারে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিবিসিকে বলেছেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, পরিবেশগত পরিবর্তন, জীবন ব্যবস্থা সবকিছু বজ্রপাতে মৃত্যু বৃদ্ধি করছে।’

বজ্রপাতে মৃত্যু এতটাই বেড়েছে যে বাংলাদেশে এখন বন্যা, সাইক্লোন, ভূমিকম্প এবং খরার সঙ্গে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বজ্রপাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের বেশিরভাগই কৃষক। যারা খোলা মাঠে কৃষি কাজ করার সময় বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ছাড়া ভারতেও বজ্রপাত একটি বড় চিন্তার কারণ। ভারতেও গত কয়েক বছরে বজ্রপাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এ সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, বজ্রপাত থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে লম্বা গাছ লাগাতে হবে। যেন সেগুলোর ওপর বজ্রগুলো আঘাত হানে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে বন উজাড় করে ফেলা হয়েছে সেখানে বেশি গাছ লাগাতে হবে।

এছাড়া খোলামাঠে আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির কথাও বলছেন তারা। যেন বজ্রপাতের সময় কৃষকরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি, সেটি হলো— অনেকেই জানেন না বজ্রপাত কতটা ভয়াবহ হতে পারে। এছাড়া বজ্রপাতের শিকার হবেন এমনটি বেশিরভাগ মানুষই ভাবেন না।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: