এখন থেকে আর ‘সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান’ প্রকাশ করবে না নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। টানা গত ১০ বছর ধরে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছিল সংগঠনটি।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন নিসচার চেয়ারম্যান ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ২০১২ সাল থেকে যে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছে, সেদিন থেকে আমরা সরকার ও দেশবাসীকে জানিয়ে আসছি এই কাজটি আমরা আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে শুরু করেছি। সারা দেশে আমাদের যতগুলো শাখা রয়েছে তাদের দেয়া তথ্য এবং পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল-এর সংবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহার করে আমরা এই তথ্য সংগ্রহ করতাম। সেইসঙ্গে বলেও আসছি এটা পর্যাপ্ত নয় এবং ডাটা সংগ্রহের জন্য এটা যথেষ্ট নয়। আমরা যে পদ্ধতি অবলম্বন করছি সেটা সেকেন্ডারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করে আসছি।
তিনি বলেন, ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ‘সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান’ জাতির সামনে তুলে ধরেছি। কিন্তু যখন দেখলাম আমাদের দেখাদেখি অনেকে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থপান করছে এবং নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে তখন এ বছর এসে আমি ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান আর তুলে না ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অভিনেতা বলেন, শুরু থেকে আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের কাছে একটি দাবি জানিয়ে এসেছি যে, এটি কোনো বেসরকারি সংগঠন বা কোনো ব্যক্তির পক্ষে প্রকৃত চিত্র তুলে আনা সম্ভব নয়। এর জন্য সরকারের একটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল এবং লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও প্রযুক্তিগত ডেভেলপমেন্টেরও দরকার রয়েছে- যা কোনো ব্যক্তিক উদ্যোগে করা সম্ভব নয়। মোটকথা এখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতা অপরিহার্য। যদিও প্রতিবছর পুলিশ তাৎক্ষণিক মামলার ওপর ভিত্তি করে একটি রিপোর্ট প্রদান করত। আর সে রিপোর্ট ছিল আমাদের রিপোর্টের সঙ্গে বিস্তর ফারাক। পুলিশের এই রিপোর্টটি আমরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতাম না। কারণ, এই রিপোর্ট তৈরি করা হয় শুধুমাত্র মামলার ওপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ যে দুর্ঘটনার মামলা করা হতো শুধুমাত্র সেই দুর্ঘটনার তথ্যই ঐ রিপোর্টে থাকত। অনেকক্ষেত্রে দেখা যেতো নানা কারণে অনেক দুর্ঘটনার মামলা হতো না। যেমন আমার স্ত্রী দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশের রিপোর্টে তো সেটা ছিল না। আবার কোনো দুর্ঘটনায় আহত যারা হয় তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৩০ দিনের ভেতরে মারা গেলে সেই তথ্য সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে বিবেচিত হবে। আমাদের দেশে সেটা পুলিশ উল্লেখ করে না। এ কারণে এই ডাটাটির কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে আমরা মনে করি না। তাছাড়া আমাদের দেখাদেখি অনেক সংগঠন বাহবা কুড়াতে যখন দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান দিতে শুরু করে এবং একেকজনের ডাটায় একেক রকম তথ্য প্রকাশ হতে থাকে, তখন থেকেই বিতর্কের শুরু বলে মনে করি। কারণ এসব সংগঠন কখনই আমাদের মত করে তাদের রিপোর্ট নিয়ে বলতে শুনিনি এটাই যথেষ্ট বা সঠিক নয়। এটা একটা চিত্র মাত্র।
সড়ক আন্দোলনের এই নায়ক বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশের ধারা আমরা শুরু করি এবং টানা ১০ বছর চলমানও রাখি। কিন্তু ভাবনার জায়গায় আমরা কখনোই স্থির হতে পারিনি। পারিনি বলেই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে আমরা সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করব না। উল্লেখ করে বলতে চাই, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া তথ্যকে যখন অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেন, এতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অথচ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যে রিপোর্ট প্রকাশ করছে, সেখানে তারা আমাদের দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দ্বারা এই তথ্য উপাত্ত্ব সংগ্রহ করছে। যার ওপর ভিত্তি করে এই তথ্য তারা প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু সরকারের আরেকটি সংস্থা বিআরটিএ ও সড়ক মন্ত্রণালয় যখন এই তথ্যকে অবান্ধব বলতে চায়, তখন আমরা বিভ্রান্ত হই। শুধু আমরা নই, জাতিও বিভ্রান্ত হয়।
‘আমার প্রশ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের বিআরটিএ দুটিই সরকারের সরকারের প্রতিষ্ঠান। তাহলে দুটি মন্ত্রণালয়ের সড়ক দুর্ঘটনার ডাটার হিসাব ভিন্ন ভিন্ন কেন? আমরা মনে করি সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের এই পারস্পরিক বিরোধী অবস্থার কারণে দেশে সঠিকভাবে দুর্ঘটনা নিরসনের কারণ উদঘাটন করা যায়নি। এই কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখনও আমাদের দেশে একটি বিষ ফোড়ার মতো হয়ে আছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিসংখ্যান দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতি বছরই বিগত
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: