জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন করে শপথ নেয়ার আহবান

সময় ট্রিবিউন | ২৬ মার্চ ২০২১, ০৫:৫২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন করে শপথ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহান স্বাধীনতা দিবস, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেয়া ভাষণে তিনি এ আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সব টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশের সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করেন সেসব বন্ধুরাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে, যাঁরা আমাদের চরম দুঃসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানায় তত্কালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার ঘনবসতি এলাকাগুলোতে একযোগে হামলা চালায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। আগুন ধরিয়ে দেয় অসংখ্য ঘরবাড়িতে। দেশের অন্য শহরগুলোতে হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের এবং তত্কালীন ইপিআরের বীর বাঙালি সদস্যরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় এবং পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে ব্যারিকেড তৈরি করে পাকিস্তানি সৈন্যদের চলাচলে বাধা দেয়। কিন্তু অত্যাধুনিক অস্ত্র, ট্যাংক আর অস্ত্রসজ্জিত যানবাহনের সামনে নিরস্ত্র প্রতিরোধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে বন্দী হওয়ার পূর্বমুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সমগ্র জাতিকে নির্দেশ দেন প্রতিরোধযুদ্ধের। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার। তাঁর ঘোষণা তত্কালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি হানাদাররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করে।

ভাষণে ২৫ মার্চের কালরাতে শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গভীর বেদনার সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত তাঁর মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল, দুই ভ্রাতৃবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, চাচা শেখ আবু নাসেরসহ সেই রাতের সব শহীদকে স্মরণ করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নামের সেই মহাপুরুষের জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। তাঁর জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা নিজস্ব দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের করছি। তবে এই উদ্‌যাপন যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব না হয়। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে আমাদের দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার নতুন করে শপথ নিতে হবে।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: