আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের ৫০ বছর আজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এইদিন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে বৈদ্যনাথতলাকে মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।
মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
বিগত বছরগুলোতে নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হলেও গত বছরের (২০২০) ধারাবাহিকতায় এ বছরও দিবসটি এসেছে নজিরবিহীন সংকটের মধ্যে। বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করা করোনাভাইরাস বাঙালিকেও ঘরে থাকতে বাধ্য করছে। করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বর্তমানে দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। এ কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে মুজিবনগর দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ বাণী দিয়েছেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।
তৎকালীন সরকারের ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী করা হয় এএইচএম কামরুজ্জামানকে। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
নবজাত রাষ্ট্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে। মুজিবনগর সরকারের হাত ধরে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সরকারের তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপনের জন্য কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে ১৭ এপ্রিল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। সকাল সাড়ে ৯টায় মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এদিন সকাল ১০টায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এ দিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বেতার ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
এদিন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ভার্চুয়ালি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের কারণে ঐতিহাসিক এই দিনটিতে ব্যাপক জনসমাগম এড়িয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।
দিনটি উপলক্ষে ভোর ছয়টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় এবং দেশের সকল জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে সীমিত পরিসরে ও যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।
এছাড়া সকাল ১০টায় মুজিবনগরের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় একটি টিম সেখানে শ্রদ্ধা জানাবেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: