ডি-৮’র দশম শীর্ষ সম্মেলনে সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী দু’বছরের জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও সংস্থার বর্তমান চেয়ার রিসেপ তাইয়িপ এরদোগানের কাছ থেকে বৃহস্পতিবার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার অনন্য সময়ে এ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন ও এর সভাপতিত্ব করেছে। ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট উদ্বোধনী ভাষণ দেন এবং এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সভাপতিত্বের দায়িত্ব তুলে দেন।
সম্মেলনে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ডি-৮ দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার বিকালে গণভবন থেকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এই সমস্যা বাংলাদেশের পরিবেশ, সমাজ এবং অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
তিনি বলেন, মানবিক বিবেচনাবোধ থেকে বাংলাদেশ ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। শুরু থেকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ, সম্মানজনক এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য চেষ্টা করে আসছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন এখনও শুরু হয়নি।
সবাইকে সর্তক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংকটের সমাধান না হলে এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।
মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্কের নেতারা ভার্চুয়াল এ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন ।
অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ডি-৮ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশ আগামী দুই বছর ডি-৮ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য, যুব উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে যুবশক্তিকে কাজে লাগানো, তথ্যপ্রযুক্তি সম্ভবনার পূর্ণ ব্যবহার, প্রয়োজনীয় আইনী, প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত কর্মকাঠামো তৈরি; কানেকটিভিটি বাড়ানো, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়িক ধারণা, মডেল, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিতে তরুণদের শক্তি এবং সম্ভবনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বেসরকারি, এমনকি সরকারি থেকে বেসরকারি পর্যায়েও ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের (ডি-৮) যুবকদের একত্রিত হতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। ডি-৮ বিজনেস ফোরামের সঙ্গে প্রথম ডি-৮ ইয়ুথ সম্মেলন একটি বিরল সুযোগ তৈরি করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে কার্যকরী অংশীদারিত্ব এবং বৃহত্তর সহযোগিতা প্রয়োজন।
তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুবকদের খুব ভালো সম্পৃক্ততা কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও আমাদের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।
গত এক দশকে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির ওপর জোর দিয়েছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জোটের দেশগুলোকে বাণিজ্য বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডি-৮ সেক্রেটারিয়েট সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ক্ষেত্রে সম্ভবনার তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এই ধরনের তথ্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আরও বেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করতে সহায়তা করবে।
সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ এবং কার্যকর ও টেকসই উন্নয়নে জোটের জলবায়ু ইস্যুতে সহযোগিতার তাগিদ দেন তিনি।
দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলনে সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরাও ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন। এ বছর শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে অংশীদারিত্ব: যুবশক্তি ও প্রযুক্তির প্রস্তুতি’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনটি সফলভাবে আয়োজন করেছিল। এবার দশম ডি-৮ সম্মেলন আয়োজন করেছে ঢাকা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: