আশ্রয়ণ প্রকল্পে নয়ছয়: ১৪৪ কর্মকর্তা ও ৩৬ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

সময় ট্রিবিউন | ৬ জুলাই ২০২১, ২১:২৯

নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণের কারণে ভেঙ্গে গেছে ঘর -ফাইল ছবি

মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন মানুষদেরকে গৃহ উপহার দিয়ে পুনর্বাসিত করা। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগের পর তদন্ত করা হয়, যা চলমান রয়েছে। দেশের ২২ জেলার ৩৬টি উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসকরা তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এতে ২৯টি উপজেলায় ঘর নির্মাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

এদিকে যেসব উপজেলায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিলো সেসব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিদর্শন দলের সদস্যরা। তাদের প্রতিবেদনে ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও অবহেলার চিত্র উঠে এসেছে। এ অনিয়মে জড়িত ১৮০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রয়েছেন। এরই মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে ৫ সরকারি কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-ওএসডি করা হয়েছে।

এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্লোগান হলো, ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এর সঙ্গে আমাদের সবার আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো ধরনের ক্রটিবিচ্যুতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও শৈথিল্যের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। অনিয়ম ও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তি পেতেই হবে। কাউকেই বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।

জেলা প্রশাসকদের দেয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, বরগুনার আমতলী, বগুড়ার শেরপুর, শাজাহানপুর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, সুনামগঞ্জের শাল্লা ও মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলায় ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অবহেলা ও দুর্নীতির ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এজন্য সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ইউএনওর দায়িত্ব পালন করে আসা শফিকুল ইসলাম, বরগুনার আমতলীর ইউএনও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

এছাড়া বগুড়ার শেরপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে আসা লিয়াকত আলী সেখ, মুন্সীগঞ্জ সদরে ইউএনওর দায়িত্ব পালন করে আসা রুবায়েত হায়াত শিপলু, মুন্সীগঞ্জ সদরে কর্মরত সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিনকে ওএসডি করা হয়েছে। এসব উপজেলার প্রকৌশলী, সংশ্নিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাবেক ইউএনও মাহমুদা পারভীন, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সাবেক ইউএনও তাসনুভা নাশতারান, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ইউএনও আল-মুক্তাদির হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য তাদের ওএসডি এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এইদিকে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণে অনিয়ম করার ঘটনার সঙ্গে ৩৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত রয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্ট জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে।

ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণে অনিয়ম করার ঘটনার সঙ্গে ৩৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্ট জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘর নির্মাণের বেলায় নীতিমালা মানা হয়নি। অনেক ঘরে নির্মাণে ক্রটি রয়েছে, গুণগত মান ঠিক হয়নি। ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। পিলার ভেঙে গেছে। দেয়াল ধসে পড়েছে। ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত মালামালও ছিল নিম্নমানের। নিচু এলাকায় ঘর নির্মাণ করায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবার ভূমির মালিকরাও ঘর বরাদ্দ পেয়েছে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর শুরু হওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ জন ভূমিহীনকে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মের খবর বিভিন্ন সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য সংশ্নিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অভিযোগ তদন্ত করছেন। কেউ কেউ প্রতিবেদনও দিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে এই প্রকল্পটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অনিয়ম ও অবহেলা সহ্য করা হবে না। তা ছাড়া দুর্নীতি দমনে শূন্য সহনশীলতা অনুসরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়মের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রস্তুত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: