মেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত বাতিল চায় আইপিডি

সময় ট্রিবিউন | ৭ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৫৪

ছবিঃ সংগৃহীত

মেট্রোরেলে আগামী জুলাই মাস থেকে ভ্যাট আরোপের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), তার ‘তীব্র বিরোধিতা’ করে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন গবেষণা এবং নীতি বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

আইপিডি বলেছে, ভ্যাট আরোপের ফলে মেট্রোরেলে ১৫ শতাংশ ভাড়া বেড়ে যাবে। এতে স্বল্পবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য মেট্রোরেলের নিয়মিত ব্যবহার সাধ্যের বাইরে চলে যেতে পারে। 

আজ রবিবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আইপিডি বলছে, ঢাকা শহরে মেট্রোরেলের বিদ্যমান ভাড়া এশিয়ার অন্য অনেক দেশের তুলনায় এমনিতেই বেশি। ভারতের কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মেট্রোরেলে চলাচলের ব্যয় বাংলাদেশের মেট্রোরেলের বর্তমান ভাড়ার তুলনায় কম। তথাপি পিক আওয়ারে ঢাকার মেট্রোরেলে যাত্রীর বর্তমান চাহিদা ও মাত্রাতিরিক্ত চাপ দেখে বিভ্রান্ত হবার সুযোগ নেই যে, মেট্রোরেলের বর্তমান ভাড়া মানুষের নিয়মিত যাতায়াতের সাধ্যসীমার মধ্যেই আছে। ঢাকায় মানসম্মত গণপরিবহনের তীব্র সংকট এবং মাত্রাতিরিক্ত যানজটের কারণে অনেক সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন অন্যান্য ব্যয় হতে কাটছাঁট করেই সাধ্যের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মেট্রোরেলে নিয়মিত যাতায়াত করছেন।

উত্তরা-মতিঝিলের মধ্যবর্তী রুটের অনেক স্বল্প আয়ের লোকেরা বিদ্যমান ভাড়াতেই মেট্রোরেল চড়বার সামর্থ্য না থাকায় একান্ত বাধ্য হয়েই এই রুটের মানহীন বাসে চলাচল করছেন।  

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মেট্রোরেলের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা দৈনিক পাঁচ লাখ হলেও এখন ঢাকায় প্রায় ৩ লাখ যাত্রী এটি ব্যবহার করছে। ফলে এখনও সক্ষমতার পুরো মাত্রায় মেট্রোরেলের ব্যবহার করতে পারছি না আমরা। এমতাবস্থায় মেট্রোরেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব এটির ব্যবহারকে সংকুচিত করতে পারে।

রাজধানী ঢাকার মতো মেগা সিটিতে যাতায়াত ও পরিবহনে মানসম্মত গণপরিবহন ব্যবস্থার সুযোগ মানুষের অন্যতম অধিকার। এসডিজির ধারণায় অন্যতম হচ্ছে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর যেখানে পরিসেবা এবং নাগরিক সুবিধাদি সকল আয়ের মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখাই রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য। ফলে মেট্রোরেলের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচিত বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর মওকুফ সুবিধা অব্যাহত রাখা। মেট্রোরেলে ভ্যাট বসাতে এনবিআরের প্রদেয় যুক্তি ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে সব ধরনের করছাড় কমাতে হবে’ যথার্থ নয় এবং ফলে অগ্রহণযোগ্য। মেট্রোরেলের মতো গণপরিবহনে আইএমএফের নীতির অতিসরলীকরণ ও অপপ্রয়োগ একেবারেই কাম্য নয় বলে মনে করে আইপিডি। 

আরও বলা হয়, দেশের ৮৭ শতাংশ ধনী এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত নাগরিক আয়কর দেন না বলে সম্প্রতি জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। মেট্রোরেলে ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর বসিয়ে রাজস্ব আদায় না করে ধনীদের আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করে আইপিডি। একইসাথে মেট্রোরেলের ভাড়া সাধ্যের মধ্যে রাখতে গণমানুষের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এবং এনবিআরের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে মেট্রোরেলের সাশ্রয়ী ভাড়া নিশ্চিত করবার দাবির পাশাপাশি মেট্রোরেলে ভর্তুকি কমাবার বিকল্প কৌশল অনুসন্ধানের দাবি জানাচ্ছে আইপিডি।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: