অবশেষে বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে রূপ নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের উপকূলের ৩৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। এজন্য দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) ভোরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়ের বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমের সময় না জানালেও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ‘মিধিলি’ খুলনা ও বরিশালের মাঝখান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গত রাত থেকেই ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।
ভোরে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৮) আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে পরিণত হয়েছে। এটি শুক্রবার ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩० কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের মানে হলো- বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল (পলাশ) বলেন, সর্বশেষ পূর্বাভাস ও তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, ‘মিধিলি’ শুক্রবার দুপুরের পর থেকে না, বরং শুক্রবার ভোর থেকে দুপুরের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভাবনা খুবই বেশি যে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির বেশিরভাগ অংশ শুক্রবার দুপুর ১২টার পূর্বেই স্থলভাগ অতিক্রম করার। বিকেল ৩টার পর ঘূর্ণিঝড়ের কোনো অংশ সমুদ্রের ওপর না থাকার সম্ভাবনা বেশি।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: