বাংলাদেশের ইতিহাস আর কেউ বিকৃত করতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

সময় ট্রিবিউন | ১৮ মে ২০২১, ০২:২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাস একেবারেই মুছে ফেলা হয়েছিল, পুরোটা পরিবর্তন করা হয়েছিল। এখন একটা আত্মবিশ্বাস এসে গেছে বাংলাদেশের ইতিহাস আর কেউ কোনদিন বিকৃত করতে পারবে না, আর মুছতে পারবে না।

তিনি বলেন, আল্লাহ সবসময় সহযোগিতা করে এবং আল্লাহ কিছু কাজ দেয় মানুষকে। সে কাজটা যতক্ষণ শেষ না হয় ততক্ষণ কিন্তু আল্লাহ রক্ষা করেন।

সোমবার (১৭ মে) মন্ত্রিসভা বৈঠকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফেরার স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না, স্বাধীনতাকে সফল করতেই হবে। একটা প্রতিজ্ঞা আমার আর রেহানার সবসময় ছিল। আসার পর থেকে অনেক ঝড়-ঝাপটা অতিক্রম করতে হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে ৪০ বছর পূর্বে দেশের মাটিতে ফিরে আসার স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশ স্বাধীন বাংলাদেশ, স্বাধীন থাকবে এবং আমার বাবার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। অনেক ঝড়-ঝাপটা বাধা অতিক্রম করে আমাকে আসতে হয়েছিল। তখনকার সরকার কিছুতেই আমাকে আসতে দেবে না। আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র, অনেক চিঠিপত্র পাঠানো, বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা, অনেক কিছুই করা হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ আগস্ট পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যা করার পর দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাস জীবন শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বভার নিয়ে দেশের মাটিতে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি সেই স্মৃতি হাতড়িয়ে বলেন, জানতামই যে খুনি এবং যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার আমার বাবা শুরু করেছিলেন। তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তারা ক্ষমতায়। খুনিদের ইমডেমনিটি দেওয়া হয়েছে, তারা ক্ষমতায়। ওই অবস্থায় কিন্তু আমি চলে আসছিলাম। আমি কোন কিছু চিন্তা করিনি, আমি চলে এসেছি।

এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না, স্বাধীনতাকে আমার সফল করতেই হবে। ওইভাবে একটা প্রতিজ্ঞা আমার আর রেহানার সবসময় ছিল। চলেও এসেছিলাম। আসার পর থেকে অনেক ঝড়-ঝাপটা পাড় হতে হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নাই। তবে এসেছি তো ঝড় মাথায় নিয়ে। সেদিন ৬০ মাইল বেগে ঝড় হচ্ছিল। তখন আমি ট্রাকে। আর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়।

এজন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানান আওয়ামী লীগের সেই সময়কার যারা নেতাকর্মী ছিলেন, তারা তাকে তার অবর্তমানে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেটা আমি জানতাম না আসলে। আর তারপর থেকে যারা আমার সাথে ছিল এবং এদেশের জনগণ। সবচেয়ে বড় কথা জনগণের শক্তিটা হচ্ছে সব থেকে বড় শক্তি। কারণ আমি যখন বাবা-মা ভাইবোন হারিয়ে এই দেশে এসেছি গ্রামে-গঞ্জে যেখানেই গেছি সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষ তাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি, অনেক স্নেহ দোয়া। কাজেই আমি মনে করি ওই শক্তিটাই সব থেকে বড় শক্তি ছিল, এদের ভাগ্যটা পরিবর্তন করা। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি।

শুধু আমাদের দেশের ভিতরে না, বাইরের সবকিছু মিলিয়েই অনেক ঝড়-ঝাপটা পাড় হয়ে আজকে এই জায়গাটায় আসতে পেরেছি। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। আর ইতিহাস একেবারেই মুছে ফেলা হয়েছিল, পুরো পরিবর্তন। এখন একটা আত্মবিশ্বাস এসে গেছে বাংলাদেশের ইতিহাস আর কেউ কোনদিন বিকৃত করতে পারবে না, আর মুছতে পারবে না।

সেজন্য দেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি দলের সেই সময়কার নেতাকর্মীসহ যারা সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আর আমার ফিরে আসার ব্যাপারে সব থেকে আগে স্টেটমেন্ট দেয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদের। সে তখন ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। আর যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন তখন আমাদের আমির হোসেন আমু। যুবলীগের পক্ষ থেকে তারা দিয়েছিলেন। আর পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে এই কথাটা তুলেছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। যদিও তিনি পরে অন্য দলে চলে যান। কিন্তু তিনিই প্রথম আমার আর রেহানার দেশে আসার বিষয়টা তুলেছিলেন।

বাংলাদেশে ফেরার পর বিভিন্ন সময় তার ওপর হামলা করে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সেদিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজকে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, এগিয়ে যাবে; সেটা আশা করি। পাশাপাশি বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে যাদেরকে আমরা হারিয়েছি, তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর