ইভিএম বা ব্যালটে যেকোনো পদ্ধতিতে শতভাগ সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব নয় জানিয়ে সিইসি প্রধান হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, শতভাগ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা ইভিএমেও যেমন পুরোপুরি সম্ভব নয়, ব্যালটেও পুরোপুরি সম্ভব নয়। বিষয়টি আপেক্ষিক হতে পারে। অধিকতর ভালো, যেটা আমরা সব সময় বিশ্বাস করেছিলাম যে ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোটটা অনেক বেশি নিরাপদভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয় যান্ত্রিক কারণে। কাজেই শতভাগ নিশ্চিত করার কথা আমি বলতে চাচ্ছি না।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) থেকে সরে এসে ৩০০ আসনে ব্যালটে ভোট করার সিদ্ধান্ত গত সোমবার জানিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থা ইসি। এর দুই দিন পর এসব বিষয়ে খোলাসা করতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নির্বাচন কমিশনের প্রধান হাবিবুল আউয়াল।
ইভিএম, ব্যালট এসব নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। নির্বাচনে সবাই বা প্রধানতম দলগুলো অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা হচ্ছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ইভিএম দিয়ে করলে সেটা কেবল ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটা হয়, কিন্তু বড় দলগুলো অংশগ্রহণ করল না, নির্বাচনের লিগ্যালিটি (আইনগত দিক) নিয়ে কোনো সংকট হবে না লেজিটিমেসি (বৈধতা) শূন্যের কোটায় চলে যেতে পারে। সেটা আপেক্ষিক। লেজিটিমেসি আর লিগ্যালিটির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। লিগ্যালি নির্বাচন শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু লেজিটিমেট হয়তো হবে না।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সেটা আমরা এখনো বলতে পারব না। আমরা প্রথম থেকে বলেছি সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সে লক্ষ্যে আমাদের প্রয়াস শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আমরা জোর করে কাউকে আনতে পারছি না। কিন্তু আপিল আমরা করেই যাব। আমাদের কথায় যে সাড়া দেবেন তাও নয়। সংকট সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে থাকে বা সরকারি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের হয়ে থাকে। আমরা বলব, রাজনৈতিক সেই সংকটগুলো আপনারাই নিরসন করে নির্বাচনকে সহজ এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য অনুকূল করে দেন।
এখানে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনারা আসেন নির্বাচনে। আপনারা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করুন। সংলাপ করে বিরাজমান কোনো দূরত্ব যদি থাকে, কোনো সংশয় যদি থাকে এবং বিরোধ থাকে, তা মিটিয়ে ফেলে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন।
সমঝোতা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে চাচ্ছি না। এককথায় বলেছি, সবগুলো দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ইভিএম থেকে বর্তমান কমিশনের সরে আসা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা নিয়ে বাজারে একটা সংশয় দেখা দিয়েছে। এটা কি চাপে করা হলো, না ওইটা করা হলো। এটা নিয়ে কিন্তু আমরা কমিশন দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। প্রথমে আমাদের কোনো একটা দলের প্রত্যাশা ছিল ৩০০ আসনেই ইভিএম। সবকিছু শুনে ১৫০টি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ১ হাজার ২০০টি নির্বাচন হয়েছে। সেখানে একটিও অভিযোগ পড়েনি যে, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। ম্যালফাংশনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ভূত আছে বা ইয়ে আছে কী বলে ভানুমতির খেলা, দশটি ভোট দিলে তিনটি ভোট থাকে। কাজেই আমরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি। এটা একেবারেই সত্য নয়। আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করি। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস দিয়ে তো হবে না, যদি অংশ না নেয়?
অর্থ পেলে ইভিএমে ভোট করা ইচ্ছা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, নয় হাজার কোটি চেয়েছিলাম, সেটা যদি পেতাম তা দিয়ে করতে পারতাম। সেটা সরকার অ্যাগ্রি করেনি। এরপর মেরামতের জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা চেয়েছিলাম, সেটা দিলেও অ্যাগ্রি করতে পারেনি সরকারের বিভিন্ন কারণে। তখন দেখলাম যে আমাদের হাতে থাকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার এ রকম ইভিএম। তখন আমরা দ্বিধাবিভক্ত হলাম। দুজন কমিশনার জোরেশোরেই বললেন, এই ২৫-৩০টাই আমরা করে ফেলি। আমরা দেখলাম লাইফটাইম শেষের দিকে, যদি ম্যালফাংশন করে, তাই আমরা ইভিএম থেকে সরে এলাম। দীর্ঘ সময় আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা সম্পূর্ণ আমাদের সিদ্ধান্ত। কারও চাপে করা হয়নি।
ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে হয়েছে। দুজন বলেছে ২০ থেকে ৩০টি হোক। আমরা তিনজন আবার বললাম না, করছি না। যার ফলে এই সিদ্ধান্ত এল।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বর্তমান কমিশনের চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমরা চেষ্টা করব সীমিত সাধ্যের মধ্যে থাকা। তবে এটা সত্য, ব্যালটে রিগিং প্রতিহত করা যত কষ্টকর, ইভিএমে মোটেই অতটা কষ্টকর নয়। অনেকেই বলেন যে, রাতে ভোট হয়ে গেছে, সত্য আমি জানি না, তবে একটা পারসেপশন ক্রিয়েট হয়ে গেছে, রাতেও ভোট হতে পারে। কিন্তু ইভিএম সকাল ৮টার আগেই চালুই হবে না। ইট ইজ সো অটোমেটিক। ন্যূনতম সুযোগ নেই। এদিক থেকে ইভিএমে সুযোগ ছিল, যেটা ব্যালটে নেই। আমরা তুলনামূলক বললাম। আবার ইভিএম ব্যয়বহুল, ব্যালট তত নয়।
আগাম ভোটের কোনো প্রশ্ন আসেনি জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আগাম ভোটের কোনো প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি না। একাডেমিকলি আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে, ওটাকে কেউ মিসকনসিভ করে প্রচার করেছে যে, আগাম নির্বাচনের সম্ভবনা আছে। এটা একেবারেই সঠিক নয়। আমরা ডিসেম্বরের শেষ অথবা আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ভোটেকেন্দ্রগুলোতে যে ভারসাম্য প্রয়োজন হয় সেটা কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো করে না বলে মন্তব্য করেন সিইসি। তিনি বলেন, সেখানে সনাতন-প্রক্রিয়া হচ্ছে দলগুলো থাকবে ও তাদের একনিষ্ঠ এজেন্টরা থাকবে। তারা মিলেমিশে এই সাত-আট ঘণ্টা কাজ করবে। তারা যদি না করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভেতরে থাকবে না। কাজেই বাইরেরটা আমরা দেখতে পারব। কিন্তু ভেতরেও কারচুপির সুযোগ থাকে। কাজেই এই জিনিসটা তারা যদি আলোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি এনে দেন, তাহলে আমাদের অনুকূল হবে।
এসটি/এসকে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: