মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির কাছে সরকার নতি স্বীকার করেছে

সময় ট্রিবিউন | ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৪৭

সংগৃহীত

মানবাধিকারকর্মী বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, যারা বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির কাছে সরকার নতি স্বীকার করেছে। তারা চেতনার বাইরে গিয়ে মৌলবাদীদের সঙ্গে আপসের নীতি অনুসরণ করছে।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ৯টি আদিবাসী ও নাগরিক সংগঠনের যৌথ আয়োজনে সাতক্ষীরার নরেন্দ্র মুন্ডা হত্যা ও আদিবাসী ভূমি দখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, নারীর সমতা, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও পাঠ্যপুস্তকে সাম্য নীতি থেকে সরকার সরে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে, কিন্তু তারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। অঙ্গীকার রক্ষা ও জনগণের অধিকার ও সম্মান রক্ষার বিষয়টি তারা যেন দেখেন।

তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই। যদি উন্নয়নের সুফল সব জনগোষ্ঠী সমানভাবে না পায় তাহলে সেটি কিসের উন্নয়ন। আমরা স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক সরকার চাই। একইসঙ্গে সব মানুষের সমান অধিকার চাই। দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বিচারহীনতার কারণে এসব নির্যাতনের শিকার মানুষ কষ্টে ভুগছে।

বাপা সভাপতি বলেন, আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন হত্যা, ভূমি দখল চলতেই থাকবে— এটা হতে পারে না। তারা আন্দোলন করতে করতেই জীবন পার করবে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে মানবাধিকার রক্ষা করা। আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। আর এই দায়ভার রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের বহন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং অভিযোগ করে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর নয়। স্থানীয় জনগণ বলছে পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। মূল আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসেছে অনেক দেরিতে।

সংবাদ সম্মেলনে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে ৯টি দাবি ও সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো— 

১. অবিলম্বে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যার মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং যথাযথ তদন্ত করে এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. ধুমঘাট এলাকার মুন্ডা পরিবারগুলোর জীবন ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. ১৯৫০ (৯৭) সালের রাষ্ট্রীয় প্রজাস্বত্ব আইন যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় আদিবাসী মুন্ডাদের জমি ফেরত দিতে হবে।

৪. আদিবাসীদের যেসব জমি জাল দলিলের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে দখল করা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সেসব জমি দখলমুক্ত করে প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

৫. নিহত নরেন্দ্রনাথ মুন্ডার পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার খরচসহ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৬. সারা দেশে আদিবাসীদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে এবং দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. অবিলম্বে মুন্ডাসহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুত ভূমি কমিশনের গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে।

৮. ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করা জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে হবে।

৯. জেলা প্রশাসকের বিনা অনুমতিতে আদিবাসীদের যেসব জমি হস্তান্তর হয়েছে বা জাল দলিলের মাধ্যমে বেদখল হয়েছে, এসব দলিল বাতিলের জন্য সরকার বা রাষ্ট্র কর্তৃক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন— এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আহত মুন্ডা নারী রিনা মুন্ডা, মুন্ডাদের অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আশিক-ই-এলাহী সহ ভুক্তভোগীরা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: