বসুন্ধারা এমডি’র ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই তদন্ত প্রতিবেদন দিল পুলিশ

সময় ট্রিবিউন | ২ আগষ্ট ২০২১, ০০:০৬

বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর-ফাইল ছবি

রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় কলেজ শিক্ষার্থী মোশারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হওয়া মামলার একমাত্র আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।

মুনিয়ার মরদেহে পুরুষের ডিএনএ পাওয়ার পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা না করায় পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনটি অসম্পূর্ণ বলে মনে করেন ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

তবে তদন্তে পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে মন্তব্য করেছেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান।

এদিকে মামলার বাদী ও নিহত শিক্ষার্থীর বড় বোন আদালতে এই তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অনাস্থার অভিযোগ আনবেন বলে জানিয়েছেন।

গত ১৯ জুলাই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৬ এপ্রিল কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করার পর তার দেহে একজন পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে।

তবে, তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত ব্যক্তি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের ডিএনএ পরীক্ষা করার কোনো উদ্যোগ নেননি।

তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া শুধু বাদীর অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা যুক্তিসঙ্গত নয়। এছাড়া কলেজ শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ থেকে একমাত্র অভিযুক্ত ব্যক্তি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দেওয়ার আর্জি জানান।

এবিষয়ে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘যেহেতু ডিএনএ পরীক্ষায় মৃত কলেজ শিক্ষার্থীর দেহে পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে, তদন্তকারীর অবশ্যই উচিত ছিল অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করা।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়নি, তদন্ত অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।’

মামলার বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন দাবি করে বলেন, ধর্ষণ ও হত্যার আলামত পাওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়গুলো নিয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করেননি।

সারোয়ার অভিযোগ করেন, তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলাটির তদন্ত করার সময় চরম দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সকল দায় থেকে মুক্তি দেওয়ার আর্জি জানিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

মামলার বাদী ও নিহত শিক্ষার্থীর বড় বোন নুসরান জাহান তানিয়া বলেন, আদালতে পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অনাস্থার (নারাজি) অভিযোগ দেবেন।

তিনি বলেন, আমি এই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার আগে আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

তানিয়া বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাব।’

মামলার বাদী জানান, মুনিয়ার শয়নকক্ষের দেয়ালে অভিযুক্ত ব্যক্তি আনভীরের সঙ্গে তোলা ছবি ঝোলানো ছিল এবং পুরো ফ্ল্যাট জুড়েই এরকম অসংখ্য ছবি ছিল।

তিনি বলেন, ‘মুনিয়ার দুটি ফোনের এসএমএস ও কল রেকর্ডে দেখা যায়, সে তাদের সম্পর্কটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়াও, তাদের সম্পর্কটি নিয়ে সামাজিক বাধাগুলোও আমার বোনের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।’

তানিয়া আরও বলেন, ‘মামলার পর পুলিশ আমাকে জানিয়েছিল, তারা আমার বোনের ফ্ল্যাটে ২৬ এপ্রিলের আগেও অভিযুক্ত ব্যক্তি আনভীরের আসা-যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে।’

গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে ২১ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষার্থী মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারের দুই দিন পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের তৎকালীন উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী জানান, তারা কলেজ শিক্ষার্থীর ছয়টি ডায়েরি খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগের স্বপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ আছে।

উপ-কমিশনার তার অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুনিয়ার যে ডায়েরিগুলো আমরা উদ্ধার করেছি, সেগুলোতে তার চরম হতাশা ও মানসিক বিপর্যস্ততা ফুটে উঠেছে। তার এই লেখা গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হবে।’

সুদীপ চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘মুনিয়া তার ডায়েরিতে তাদের সম্পর্ক, সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতিতে বাধা, অভিযুক্তের সঙ্গে তার সুখী দাম্পত্য জীবনের প্রত্যাশা এবং অভিযুক্তের পরিবারের বাধার কথা লিখেছেন।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: