আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় আপিল বিভাগে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চে হাজির হয়ে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এরপর আপিল বিভাগ তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে আদেশ বাস্তবায়নের জন্য আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন। ওইদিন পরবর্তী শুনানি হবে।
আইনজীবীরা জানান, আদালতের রায় ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করার কথা বলে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন আইজি প্রিজন্স ও সচিব। পরে আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে ২০ নভেম্বর আদালত অবমাননার অভিযোগে আইজি প্রিজন্স ও সুরক্ষা বিভাগের সচিবকে তলব করেন আপিল বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় তারা হাজির হয়েছিলেন। ছয় কারা কর্মকর্তার পদোন্নতি সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে ক্ষমা চান তারা।
পদোন্নতি নিয়ে ছয় কারা কর্মকর্তার (জেল সুপার) করা পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর গত বছরের ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন। রায়ে ১৯৮৪ সালের অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ (ডিপার্টমেন্ট অব প্রিজন্স) রিক্রুটমেন্ট বিধিমালার আলোকে দ্রুত আবেদনকারীদের (ছয় জেল সুপার, চলতি দায়িত্ব) পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় পদোন্নতিপ্রত্যাশী মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়াসহ পাঁচ কর্মকর্তা গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর পৃথক পাঁচটি আদালত অবমাননার আবেদন করেন। তাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল। অন্যদিকে, কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সফিকুল ইসলাম।
ইব্রাহীম খলিল জানান, আদালত অবমাননার আবেদনগুলো ৬ নভেম্বর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। ওইদিন কারা কর্তৃপক্ষের আইনজীবী রায় বাস্তবায়নে দুই সপ্তাহ সময় নেন। সে অনুযায়ী ২০ নভেম্বর ফের শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় আসে। শুনানিতে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির ১৬ নভেম্বরের এক সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন কারা কর্তৃপক্ষের আইনজীবী।
ওই সিদ্ধান্তে বলা হয়, ছয় কর্মকর্তাকে ১৯৮৪ সালের নিয়োগবিধির আওতায় এ পর্যায়ে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বলে মন্তব্য করেন আপিল বিভাগ। পরে ছয় কর্মকর্তার পদোন্নতির রায় কেন বাস্তবায়িত হয়নি, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে ৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
আদালত সূত্র জানায়, আবেদনকারী ছয় কর্মকর্তা ২০০৮ সালে জেল সুপারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন। পদোন্নতির জন্য ২০১৬ সালে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বিফল হন। এ নিয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে তাদের পক্ষে রায় পান। কিন্তু এর বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল ট্রাইব্যুনালে গেলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: