একজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টে দেখে অন্য রোগীর পিত্তথলী কেটে ফেলার মত আলোচিত ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের সোনিয়া নার্সিং হোম নামের এক ক্লিনিকে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট মামলা করেছেন দুইজন আইনজীবী।
গতকাল সোমবার (২৯ মে) হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফয়সাল আহমদ রনি ও তনয় কুমার সাহা চিকিৎসক ও নার্সিং হোমের মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। ‘পারভীনের রিপোর্ট দেখে পারভেজের পিত্তথলি কাটলেন চিকিৎসক’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে জনস্বার্থে দুই আইনজীবী এ আবেদন করেন।
রিট আবেদনে ওই ঘটনায় চিকিৎসক মো. তুহিন তালুকদার ও সোনিয়া নার্সিং হোমের মালিক আবুল কালাম রিজভির বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনা তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সিভিল সার্জন, টাঙ্গাইল সদর থানার নির্বাহী কর্মকর্তা, সোনিয়া নার্সিং হোমের মালিক ও চিকিৎসককে বিবাদী করা হয়েছে আবেদনে।
জানা যায়, এক নারী রোগীর রিপোর্ট দেখে সে অনুযায়ী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক যুবকের পিত্তথলি কাটার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ২১ মে দুপুরে ওই যুবকের পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করেন শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত সোনিয়া নার্সিং হোমের সার্জারি বিশেষজ্ঞ মো.
তুহিন তালুকদার। ভুল চিকিৎসার শিকার মো. পারভেজ প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বুয়ালী এলাকার আ. কাদের শেখের ছেলে মো. পারভেজ পেটের প্যানক্রিয়াসের ব্যথা হওয়ায় গত ২৭ এপ্রিল টাঙ্গাইল সোনিয়া নার্সিং হোমে সার্জারি বিশেষজ্ঞ মো. তুহিন তালুকদারের কাছে যান। পরে ওই চিকিৎসক পারভেজকে দেখে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরে করানোর পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযারী ওই নার্সিং হোম থেকে রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট চিকিৎসককে দেখান। পরে চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে তাৎক্ষণিক অপারেশনের কথা জানান। ওইদিন পারভেজের পেটে অস্ত্রোপচার করে পিত্তথলি কেটে ফেলেন চিকিৎসক তুহিন তালুকদার।
অভিযোগ আরও বলা হয়, অপারেশনের পর পিত্তথলি তার স্বজনদের দেখালেও এতে কোনো পাথর ছিল না। পরে রোগীর স্বজনদের জানানো হয়, কেটে ফেলা পিত্তথলিতে কোনো ক্যানসারের জীবাণু রয়েছে কিনা সেটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানোর কারণে পিত্তথলি নার্সিং হোমে রেখে দেওয়া হয়।
মামলায় বলা হয়, চিকিৎসার পর বকেয়া টাকা আদায় শেষে নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ রোগীকে ছাড়পত্র দেয়। তারপর রোগীর স্বজনরা ছাড়পত্র নিয়ে দেখতে পান রোগী পারভেজের ভুল চিকিৎসা হয়েছে। পারভেজের স্থানে পারভীন নামের এক নারীর রিপোর্ট দেখে সার্জারি চিকিৎসক তার পিত্তথলি কেটে ফেলেছেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক ও নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন রোগী ও তার স্বজনদের কাছে।
এসটি/এসকে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: