কমানো হচ্ছে সড়ক পরিবহন আইনের শাস্তি

সময় ট্রিবিউন | ৮ মে ২০২১, ১৯:০১

ছবি: ইন্টারনেট

সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর তীব্র আন্দোলনের মুখে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ প্রণয়ন করে সরকার। সেই আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হতেই এতে বেশ কিছু বড় ধরনের পরিবর্তন তথা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে কমানো হচ্ছে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের পরিমাণ। শিক্ষাগত যোগ্যতায় আনা হচ্ছে পরিবর্তন।

একই সঙ্গে অজামিনযোগ্য অপরাধকে আনা হচ্ছে জামিনের আওতায়। এতে দুর্ঘটনায় কাউকে নিহত করাসহ সব ধরনের অপরাধ জামিনযোগ্য হবে।বর্তমান আইনের ১০৫ নম্বর ধারায় দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে আহতদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। আর নিহত ব্যক্তির পরিবারকে পাঁচ লাখের পরিবর্তে তিন লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে ভুক্তভোগীকে জরিমানার টাকা সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিশোধের জন্য আদালত আদেশ দিতে পারবেন।

চালকের সহযোগীও সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাবে শিথিল যোগ্যতায় চালক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সব মিলিয়ে এ আইনের ১২৬টি ধারার মধ্যে ২৯টি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৫টি ধারায় বিদ্যমান কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড কমানো হচ্ছে। আর ভারী ও মাঝারি মোটরযানের সংজ্ঞাসহ আটটি বিষয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন কয়েকটি ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো গৃহীত হলে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি বা চালকের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনায় শুধু আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলে চালককে দায়ী করে বিচার করা যাবে না।

সংশোধনের খসড়া অনুযায়ী, ওভারলোডিং (গাড়ি মাত্রাতিরিক্ত বোঝাই) এবং মোটরযানের আকার পরিবর্তনের অপরাধকে জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যা বর্তমানে অজামিনযোগ্য। অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই একজন চালক নিবন্ধিত তিন চাকার গাড়ি চালাতে পারবেন। আবার একজন সহকারী বা সুপারভাইজার ১০ বছর কাজ করে যদি দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং ড্রাইভিং সক্ষমতা বোর্ডে পাস করেন, তাঁর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কয়েকটি শর্ত মানা প্রয়োজন হবে না।

এত দিন যেখানে নকল ভুয়া বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে সর্বনিম্ন ছয় মাস এবং সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ছিল, সেখানে সংশোধনীতে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাহার করার পরও সে গাড়ি চালালে ২৫ হাজারের পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে শাস্তিস্বরূপ জরিমানা ও কারাদণ্ড অর্ধেক করা হচ্ছে।

চলমান আইন অনুযায়ী অনির্ধারিত জায়গায় গাড়ি পার্ক করলে বা যাত্রী ওঠানামা করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেখানে প্রস্তাব অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

৫৭ ধারায় ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দিতে আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে। ওই তহবিলের উৎস হিসেবে নিয়ন্ত্রণহীন চালক ও মোটরযান মালিকের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সংশোধনের প্রস্তাবে বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে সরকারি তহবিল বা পরিবহন সংগঠনগুলোর দেওয়া চাঁদার ওপরই নির্ভর করতে হবে। ২৫(২) ধারা অনুযায়ী ফিটনেসের অনুপযোগী কোনো মোটরযানের ফিটনেস সনদ দেওয়ার সঙ্গে কোনো কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রস্তাবে এটি বাদ দিতে বলা হয়েছে।

বর্তমানে আইনের ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারা অজামিনযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আইনটি সংশোধন করা হলে ৮৪ ও ৯৮ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ৮৪ নম্বর ধারায় অবৈধভাবে মোটরযানের আকৃতি পরিবর্তনে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ৯৮ নম্বর ধারায় ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। উপরন্তু খসড়া অনুযায়ী ৯৮ ধারাকে আপসযোগ্য বলা হয়েছে। আগে ১৪ আসন পর্যন্ত গাড়ি ছিল মাইক্রোবাস শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, এখন তা করার প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ আসন পর্যন্ত।

আইনটির সংশোধন নিয়ে কালের কণ্ঠ’র জিজ্ঞাসার জবাব দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্ততপক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশসহ পাঁচটি দেশের আইন পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছি এবং আমাদের যে পেনাল কোড, সেটির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার জন্য আমরা এটি করেছি। আপনারা বলছেন অনেক পরিবর্তন, কিন্তু এখানে অনেক পরিবর্তন আনা হয়নি। যেখানে অসংগতি ছিল, যেখানে অস্পষ্টতা ছিল, সেগুলোকে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে, যাতে এই আইনের অধীনে কেউ অপরাধ করলে আদালতের সাজা দিতে খুব সহজ হয়।’

তাহলে প্রথমে চোখে পড়ার মতো বেশি অর্থদণ্ড রাখা আবেগি সিদ্ধান্ত ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশি বেশি অর্থদণ্ড, এটি আবেগি দেওয়া আমি বলব না। এই আইনটিকে প্রায়োগিক করার জন্য সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যাতে বাস্তবতার সঙ্গে মিল করা যায়, সেই ব্যবস্থা আইনটির মধ্যে নিয়েছি।’ পুরোপুরি বাস্তবায়নের আগেই শ্রমিক-মালিক নেতাদের চাপে আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো হয়তো তারা (শ্রমিক-মালিক নেতা) চাপ দিতে পারে। তাদের দিক থেকে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: